সার্ধশতবর্ষে কলকাতা জিপিও: কেমন হয়েছে নবরূপে সংগ্রহশালা?

নবরূপের ডাক সংগ্রহশালায় স্বয়ংক্রিয় আলো, অপ্রাপ্তি কী?

 |  3-minute read |   01-10-2018
  • Total Shares

পুরোনো ফোর্ট ইউলিয়ামের ভিতরে ভারতের প্রথম যে সাধারণ ডাকঘর (জিপিও) চালু হয়েছিল ১৭৭৪ সালের ৩১ মার্চ, সেই ডাকঘর এখন আর নেই। তারপরে ডজনখানেক জায়গা ঘুরল দেশের প্রখম সাধারণ ডাকঘর। কাজ বেড়েই চলেছে। শেষে ১৮৬৪ সালে একটা জায়গায় সাড়ে ছ’লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি হল এক ডাকঘর যা স্থাপত্যশিল্পেও অনন্যতার ছাপ রেখেছিল। ১৮৬৮ সালের ২ অক্টোবর সেই ডাকঘর চালু হল।

enbed_nowgpo_100118053552.jpgদেড়শো বছর পূর্ণ করল সাধারণ ডাকঘরের এই ভবনটি (নিজস্ব চিত্র)

প্রথম দিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চিঠি পাঠানের জন্যই ডাকব্যবস্থা চালু হয়েছিল। পরে অনুরোধের খাতিয়ে সাহেবদের চিঠিও পাঠানো শুরু হয়, তবে তা নিখরচায়। শেষে ভাবা হল, খরচ তোলার একটা উপায় চাই। তাই শুরু হল ব্যক্তিগত চিঠি গ্রহণ করা ও পৌঁছে দেওয়া। এই ভবন থেকে দেড়শো বছর ধরে তা চলে আসছে।

চিঠি লেখা বাড়তে থাকল, বাড়তে থাকল ডাকঘরও। কোম্পানির চিঠি ও সায়েব-সুবোদের চিঠির পাশাপাশি ভারতীয়রাও চিঠি লিখতে থাকলেন। টাকা থেকে জরুরি নানা জিনিস পাঠানো শুরু হল। আয় বাড়তে শুরু করল ডাক বিভাগের।

কবি-সাহিত্যিকদের কলমের জোরে অমর হয়ে গেলেন ডাক হরকরা ও রানার। তবে সময়ের নিয়মে এল প্রতিযোগিতা। প্রথমে কুরিয়ার সার্ভিস। চিঠি তাতে পাঠানোর নিয়ম ছিল না বটে, তবে নথির মোড়কে সে সব যেতে লাগল। তারপরে এল ই-মেল। আরও পরে মোবাইল ফোন। তাতে অবশ্য চিঠি লেখার উপরে কোনও প্রভাব পড়ল না। পড়ল যখন সেগুলি শস্তা হতে হতে একেবারে প্রায় ফ্রি হয়ে গেল।

embed-rotanda_100118053703.jpgরানার: জিপিও-র রোটান্ডায় ইতিহাসের সাক্ষী, ইনসেট: রানারের ব্যাজ (নিজস্ব চিত্র)

ডাক সংগ্রহালয়

সাধারণ ডাকঘরের পাশের ভবনে ডাক-সংগ্রহালয় তৈরি হয়েছিল ভারতীয় ডাকের ১২৫ বছর উপলক্ষে, সোমবার তা কলেবরে কলেবরে বেড়ছে, যুক্ত হয়েছে আরও একটি কক্ষ। সেই কক্ষে ছবিতে দেখানো হয়েছে কোম্পানি আমলের ডাকব্যবস্থা থেকে ভারতীয় ডাকের বিবর্তন।

embed_inside_100118053736.jpgডাক সংগ্রহালয়: ডাকের বিবর্তন ধরা রয়েছে এখানে (নিজস্ব চিত্র)

এই সংগ্রহশালায় রয়েছে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত ডাক-মানচিত্র, ব্যাজ, রানারদের হাতে থাকা অস্ত্র, বাটখানা, কয়েনের ব্যাগ, বিশাল মাপের ডাকবাক্স... আরও কত কী! তবে ডাকটিকিটের অভাব রয়েছে। না পাওয়ার কথা বললে এটাই সবচেয়ে বড়। নাম-কা-ওয়াস্তে কয়েকটা ডাকটিকিট আছে বটে, তবে তা না থাকারই মতো। তা ছাড়া সেগুলির অবস্থাও যে খুব ভালো, তাও নয়। কর্তৃপক্ষ স্থির করেছেন স্থায়ী ভাবে একটি প্রদর্শনকক্ষ চালু করবেন। মুখ্য পোস্টমাস্টার জেনারেল অরুন্ধতী ঘোষ বলেন, “আমরা স্থায়ী প্রদর্শন কক্ষ চালু করতে চলেছি ২ অক্টোবর। এখানে মূলত ডাকসম্বন্ধীয় (ফিলাটেলিক) প্রদর্শনীই চলবে। তবে ব্যক্তিগত সংগ্রাহকরা অন্য কিছুও প্রদর্শিত করতে পারেন।”

embed-old_100118053807.jpgজিপিও: ডাক সংগ্রহালয়ে রক্ষিত ছবি (নিজস্ব চিত্র)

আগে দেওয়ালের উপরিভাগে থাকা যে সব মানচিত্র একসময় দেখাই যেত না, এখন সেগুলি নামিয়ে আনায় আগ্রহীরা তা নিরীক্ষণ করতে পারবেন। তবে নবরূপে সেজে ওঠা এই জাদুঘরে দু’একটা না পাওয়াও রয়ে গেছে। ডাক হরকরাদের পোশাক রাখা ছিল আগে, এখন আর তা নেই। তাঁদের ব্যবহৃত জিনিসগুলি নতুন করে রাখার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।

কত চিঠি লেখে লোকে?

সংখ্যাটা বলা মুশকিল, তবে টেলিফোনের যুগে প্রাতিষ্ঠানিক চিঠি-চাপাটি ছাড়া ব্যক্তিগত চিঠি প্রায় উঠেই গেছে। বিয়ারিং চিঠি বন্ধ হয়েছে অনেক দিন হল। টেলিগ্রামও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে পোস্টকার্ড এখনও চালু আছে। লোকে এখনও লেখেন। তবে সংবাদপত্র অফিস ছাড়া এখন চিঠি লেখেন পুরোনো আমলের লোকজন, যাঁরা এখনও চিঠিকে সাহিত্যের অংশ হিসাবে মনে করেন।

অরুন্ধতী ঘোষ জানিয়েছেন, সংখ্যাটি খুব কম।

ফিলাটেলি বাঁচাতে

আজকাল লোকে চিঠি লেখে না, তাই খাম জলে ভিজিয়ে নিপুন হাতে ডাকটিকিটটি খুলে নেওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত বর্তমান প্রজন্ম। ফিলাটেলি, মানে ডাকটিকিট সংক্রান্ত সংগ্রহের নেশা এখন পড়তির দিকে। তবে তা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে ডাক বিভাগ। ফিলাটেলি ক্লাব হয়েছে, এ নিয়ে ছোটদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

embed-runner_100118053848.jpgঝুমঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে: বর্ষার ফলায় লাগানো ঘণ্টা (ডাক সংগ্রহালয়ে রক্ষিত)

শিউলি নামে একটি উপহারসামগ্রীর দোকান চালু হয়েছে কলকাতা জিপিওয়। সেখানে ডাকটিকিটের ছবি দেওয়া নানা সামগ্রী হয়েছে – কফিমগ থেকে ঘড়ি। বইও রয়েছে অনেক, ২৫ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায়। তবে এর সঙ্গে ডাকটিকিট সংক্রান্ত বইপত্র থাকলে আরও ভালো হত।

ইতিহাস ধরে রাখতে একটি তথ্যচিত্র তৈরি হচ্ছে কলকাতা জিপিও নিয়ে, আর তৈরি হচ্ছে একটি কফিটেবল বুক।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment