কেমন করে ঘুরে দাঁড়ালেন কুমোরটুলির শিল্পীরা?

প্রতিমার দাম ও পুরোহিতের দক্ষিণা মেটাতে কার্পণ্য অধিকাংশ পুজোকমিটির

 |  3-minute read |   09-10-2018
  • Total Shares

বছরে একবার দুর্গাপুজো-লক্ষ্মীপুজো-কালীপুজো, সরস্বতী পুজো, হালে শুরু হয়েছে গণেশপুজো, একরকম বিশ্বকর্মাপুজোর বদলে। তা হলে সারা বছর কুমোরটুলির শিল্পীরা করেন কী!

কুমোরটুলির শিল্পীদের কয়েকজনের স্টুডিয়োয় দুর্গাঠাকুর তৈরি শুরু হয় বৈশাখ মাসে, মানে আশ্বিনের শারদপ্রাতের প্রস্তুতি শুরু হয় দারুণ অগ্নিবাণের সময়ে। একে তো এই সময়ে শ্রমিক পাওয়া মুশকিল হয়, যদিবা পাওয়া যায় তাঁরা এই সময় বেশ মোটা দর হাঁকেন। তাই দোমেটে, মানে খড়ের কাঠামোর উপরে মাটির দ্বিতীয় বারের প্রলেপ দিয়ে মৃন্ময়ী মূর্তি যত্ন করে তুলে রাখা হয়।

body1_090718022353_100918041146.jpgএখন লাভের মুখ দেখছেন শিল্পীরা (সুবীর হালদার)

বাড়ির প্রতিমা সাধারণ ভাবে একই শিল্পীর থেকে নেওয়া হয়ে থাকে। কলকাতা শহরের অনেক পুজোকমিটিই একই শিল্পীর থেকে প্রতিমা নিয়ে থাকেন, এখনও। সেইসব কাজ বৈশাখেই অনেকটা এগিয়ে রাখেন শিল্পীরা। জাতীয় গ্রামীণ কর্ম নিশ্চয়তা প্রকল্প চালু হওয়ার দরুণ শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বেড়ে গিয়েছিল, তা কমার প্রশ্ন নেই। তবে পুজোর মুখে তাঁরা যা মজুরি চান, বৈশাখে তার চেয়ে অনেক কম মজুরিতেই কাজ করতে রাজি হয়ে যান।

পুজো কমিটিগুলোর মানসিকতাতেও পরিবর্তন হয়েছে।

আগে একটা ব্যাপার দেখা যেত, তাদের যত কার্পণ্য পুরোহিতকে দক্ষিণা দিতে ও মৃৎশিল্পীকে প্রতিমার দাম দিতে। এখন তাঁদের সেই মানসিকতা বদল হওয়ায় শুধু শিল্পী-পুরোহিত নয়, সকলেরই সুবিধা হয়েছে।

সকলের মানে সকলের। মাটির প্রতিমা বানাতে অনেককে দরকার হয়, তাঁদের সকলের সুবিধা হয়েছে।

প্রতিমা বানাতে প্রথমেই দরকার হয় কাঠ ও বাঁশ। তার উপরে খড় ও দড়ি বেঁধে কাঠামো তৈরি করা হয়। এ জন্য লম্বা খড় দরকার হয়, যদিও আজকাল উচ্চফলনশীল ধানগাছের উচ্চতা কম হওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন কৃষকরা। তাঁদের কাছ থেকে আসে খড়, পাটের দড়ি। গ্রাম থেকেই আসে বাঁশ ও কাঠ। আজকাল এ সবের বেশ দাম বেড়েছে।

মাটির দামও বেশ বেড়েছে। বিশ বছর আগে একতাল মাটির যা দাম ছিল, এখন তার দাম দ্বিগুণ হয়েছে, পরিমাণ কমে অর্ধেক হয়েছে। মানে মাটির দাম চার গুণ বেড়েছে। তা ছাড়া পেরেকের দামও ধরতে হবে। রঙে শিসার ব্যবহার বন্ধ হওয়ায় তার দামও বেড়েছে, প্রতিমার সাজসজ্জার দামও বেড়েছে তাল মিলিয়ে।

কয়েক বছর আগেও শিল্পীরা ঘোর সঙ্কটে ছিলেন। সেখানে গেলেই তাঁরা যে সব কথা বলছিলেন তা দীর্ঘদিন ঘরে শুনতে শুনতে সকলেই ক্লান্ত। দীর্ঘ সময় পরে এ বছর গিয়ে অভিজ্ঞতা হল একেবারে অন্যরকম। বেশিরভাগেরও চোখে-মুখে স্বস্তির ছাপ, এখন বেশিরভাগ পুজোকমিটিই সময় মতো পাওনা মিটিয়ে দিচ্ছে।

samir_10_08311805283_100918041234.jpgঠাকুর তৈরি শুরু হয়ে যায় বৈশাখেই (সুবীর হালদার)

এতদিনে দেবী লক্ষ্মী মুখ তুলে চেয়েছেন। কুমোরটুলির শিল্পীরা এখন কাজ পাচ্ছেন, সঙ্গে টাকাও। অনেক নামী শিল্পী তো আজকাল নতুন কাজ ধরতেই পারছেন না। আগে এই চত্বরে ঢুকলেই দেখা যেত ছবি তোলার জন্য আলাদা অনুমতি নিতে হবে, ছাড় ছিল শুধু সংবাদমাধ্যমের। কারণটা অনুমেয়, রোজগারের বিকল্প উপায়।

এখন দেখা যায় ক্যামেরা হাতে অনেকেই ঘুছেন, শিল্পীদের সে দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। অনেকে আবার মডেল নিয়ে স্টুডিয়োর বাইরে বিশেষ বিশেষ ভঙ্গিমায় ছবি তুলছেন। কোনও শিল্পীই সেদিকে ঘুরেও তাকাচ্ছেন না।

কুমোরটুলির শিল্পীরা এখন চাইছেন বহুতল হোক, যার একতলে তাঁরা থাকবেন, বাকি তলগুলিতে হবে স্টুডিয়ো, মানে কাজের জায়গা। তাতে তাঁরা আরেকটু কাজ হয়তো হাতে নিতে পারবেন। বেশি কাজ করলে যখন বেশি রোজগার করতে পারছেন তখন করবেন না কেন?

আরেকটা সুখবরও আছে, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, প্রবীণ শিল্পীদের পরের প্রজন্ম এখন এই পেশায় আসছে, তাতে লাভ হচ্ছে কুমোরটুলির, লাভ হচ্ছে বাংলার মৃৎশিল্পের।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment