লখনৌয়ের নারী নিগ্রহের ভিডিওতে সাম্প্রদায়িক রঙ

ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টটি বিভ্রান্তিকর

 |  3-minute read |   01-07-2019
  • Total Shares

ক’দিন আগেই চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে ঝাড়খণ্ডের এক ব্যক্তির। তাবরেজ আনসারি নামে ওই ব্যক্তির হত্যার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমশ বাড়ছে উগ্র সাম্প্রদায়িক পোস্টের সংখ্যা। এরই মধ্যে একটিতে দেখা যায় রক্তাক্ত অবস্থায় এক মহিলাকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এক পুরুষ। পুলিশের কাছে চেঁচিয়ে সাহায্যও চাইছেন। ভিডিওটি ভাইরাল হতেই হেট মেসেজের বন্যা বয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে।

এর কারণ আর কিছুই নয়, একটি ফেসবুক পোস্ট। সির্ফ টপ ভিডিও নামে জনৈক ফেসবুক ব্যবহারকারী এই ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেন, লখনৌয়ের ইটঞ্জা এলাকার জনাকয়েক মুসলমান ওই হিন্দু মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। মহিলাকে যিনি বয়ে নিয়ে চলেছেন তিনি তাঁর ভাই। অভিযোগ, ধর্ষণের প্রতিবাদ করলে ওই ব্যক্তিকেও নির্মম ভাবে মারধর করে মুসলমানেরা। পুলিশ ধর্ষণের অভিযোগ নিতে অস্বীকার করছে বলেও দাবি ।

এই পোস্ট ভাইরাল হতেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের ঢেউ। সির্ফ টপ ভিডিও তাঁর পোস্টে হিন্দুদের প্রতিবাদে গর্জে উঠতে বলেন।

পোস্টটির ভিডিওটি দেখতে পারেন এই লিঙ্ক থেকে (ভিডিওটি অশান্তিপূর্ণ। সতর্ক থাকবেন) 

পোস্টের আর্কাইভ ভার্শন দেখতে পারেন এখানে

শুভম তিওয়ারি নামের আরেকজনও ফেসবুকে এই একই ভিডিও পোস্ট করে একই অভিযোগ করে। 

শুভমের পোস্টটির আর্কাইভ ভার্শন পড়তে পারেন এখানে 

ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি ফেক নিউজ ওয়ার রুম বা আফওয়া খতিয়ে দেখে যে, ভাইরাল ভিডিওটি একেবারেই বিভ্রান্তিকর। এমনকি, লখনৌ পুলিশের তরফেও জানানো হয়, নিগ্রহকারী এবং নিগৃহীতা, সকলেই মুসলমান। কেউ হিন্দু নন। এই ঘটনা কোনও সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ নয়।

৪৫ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে প্রথমেই দেখা যাচ্ছে এক আহত রক্তাক্ত মহিলাকে বয়ে নিয়ে চলেছেন এক ব্যক্তি এবং চেঁচিয়ে সাহায্য চাইছেন। পুলিশে রিপোর্ট লেখানোর আবেদন জানাচ্ছেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, জনৈক ইয়ুনুস, ইসলাম এবং অন্যান্যরা তাঁদের আক্রমণ করেছে। দয়া করে তাঁদের বাড়িতে ‘সিপাহি’ পাঠানো হোক। ভিডিও থেকে বোঝা যাচ্ছে পুলিশের কাছেই লোকটির ওই কাতর আবেদন। নেপথ্যে শোনা যায় কয়েকজন বলছেন, ‘মহিলার ডাক্তারি পরীক্ষা করাও এবং অন্য এলাকার থানায় গিয়ে রিপোর্ট করো।’

হিন্দিতে একটি ক্যাপশনও দেওয়া ছিল ভিডিওর সঙ্গে। বাংলায় অনুবাদ করলে তা এইরকম দাঁড়ায় – “এই ঘটনা লখনৌয়ের ইটঞ্জা এলাকার। ইসলাম-সহ ওই এলাকার চার পাঁচ জন মুসলমান এই ব্যক্তির বোনকে ধর্ষণ করে। লোকটি বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে। জাগুন হিন্দু জাগুন। আপনাদের শেষের দিন আসছে। পুলিশ চাইলে এঁদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু আমাদের দেশের দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি নিজের চোখেই দেখুন।”

গত মঙ্গলবার সন্ধে থেকে ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরতে শুরু করে।

ট্যুইটারেও শুরু হয়ে যায় ভিডিও শেয়ারের পালা। 

এরপরে লখনৌ পুলিশের তরফে একটি বিবৃতি দেওয়া হয় যাতে বলা হয়, ইটঞ্জা এলাকায় দু’দল মুসলমানের মধ্যে সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ভিডিওতে যাঁদের দেখা যাচ্ছে তাঁরাও মুসলমান। তাঁদের নাম শাহরুখ এবং শবনম। পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও ট্যুইট করে জানানো হয়। পুলিশের বিবৃতি দেখতে এই লিঙ্ক পড়ুন।  

এরপর লখনৌ পুলিশ আরেকটি ট্যুইট করে জানায়, ভিডিওতে যে পুলিশকর্মীর গলা নেপথ্যে শোনা গিয়েছে, যিনি শাহরুখ ও শবনমকে সাহায্য করতে অস্বীকার করেন, তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাঁরা শবনমের ধর্ষণে অভিযুক্ত তাদের সকলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে সে কথা অবশ্য পুলিশ স্পষ্ট ভাবে জানায়নি। তবে এটা বারবারই বলা হয়েছে যে এই ঘটনায় কোনও ধর্মীয় রঙ নেই। এটি নেহাতই একটি স্থানীয় গোলমাল।

লখনৌয়ের নারী নিগ্রহের ভিডিওতে সাম্প্রদায়িক রঙ
Claimমুসলমানেরা এক হিন্দু মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। বাধা দিতে গেলে তাঁকে ও তাঁর ভাইকে ব্যাপক মারধর করে। Conclusion দু’দল মুসলমানের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ। এতে কোনও সাম্প্রদায়িক রঙ নেই।
JHOOTH BOLE KAUVA KAATE

The number of crows determines the intensity of the lie.

  • 1 Crow: Half True
  • 2 Crows: Mostly lies
  • 3 Crows: Absolutely false
If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

CHAYAN KUNDU CHAYAN KUNDU @kunduchayan

Senior Producer, India Today TV.

Comment