ফ্যাক্ট চেক: দীর্ঘক্ষণ মাস্ক ব্যবহার কি অক্সিজেনের ঘাটতি এবং ক্লান্তির কারণ হতে পারে?
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল বিভ্রান্তিকর দাবী
- Total Shares
করোনা মহামারীর প্রকোপে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা এখন সুস্থ জীবনযাপনের এক অন্যতম প্রয়োজন হয়ে উঠেছে।যদিও কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের দাবী, দীর্ঘক্ষণ মাস্ক ব্যবহারের ফলে হাইপোক্সিয়া, শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি ও ক্লান্তি দেখা দেয়।
হাইপোক্সিয়া হল এমন একটি অবস্থা যখন দেহ বা শরীরের কোনও একটি অঞ্চল টিস্যু পর্যায়ে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ থেকে বঞ্চিত থাকে।ভাইরাল সেই দাবী অনুযায়ী, শ্বাস-প্রশ্বাসে ত্যাগ করা বাতাস বারবার গ্রহণের জন্য এটি ঘটতে পারে।শ্বাস-প্রশ্বাসে ত্যাগ করা সেই বাতাস কার্বন ডাই অক্সাইডে পরিণত হয় এবং আমাদের অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে।
আপনারা সেই ফেসবুক পোস্টের আর্কাইভ ভার্শনটি এখানে দেখতে পাবেন।
ইন্ডিয়া টুডে অ্যান্টি ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) অনুসন্ধানে দেখেছে ভাইরাল এই দাবীটি বিভ্রান্তিকর।মাস্ক ব্যবহারের কারণে হাইপোক্সিয়া হয় না এবং এটি মস্তিষ্ক বা হার্টের কার্যকারিতায় কোনও বিরূপ প্রভাব ফেলে না।যদিও দীর্ঘক্ষণ শক্ত করে আটকানো মাস্ক ও চোখকে সুরক্ষিত রাখার চশমা ব্যবহার করলে তার জন্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের মাথা ও মুখে ব্যথা হতে পারে।
"ভ্যানগার্ড" নামে একটি নাইজেরিয়ান ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে সেই পোস্টটি শেয়ার করেন।
প্রতিবেদনটির দাবী, দীর্ঘক্ষণ মুখে মাস্ক ব্যবহারের ফলে একজন তার নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসে ত্যাগ করা কার্বন ডাই অক্সাইড অনেকটা পরিমাণে গ্রহণ করে নেন যা স্বাস্থ্যের পক্ষে উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
এই পোস্টটি অনেকে ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।
ভাইরাল সেই পোস্ট অনুযায়ী, "বারবার শ্বাস-প্রশ্বাসে ত্যাগ করা কার্বন ডাই অক্সাইডে পরিণত বাতাস গ্রহণের ফলেই আমরা অস্বস্তি অনুভব করি।এটি লোককে নেশাগ্রস্তের মতো আচরণ করায়। এর কারণে অস্বস্তি অনুভব হয়, প্রতিবর্ত ক্রিয়া এবং সচেতন চিন্তাভাবনার হ্রাস ঘটে। এটি খুব ক্লান্তি জাগায়। এছাড়াও, অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে গ্লুকোজ ভেঙ্গে যায় ও বিপন্ন ল্যাকটিক অ্যাসিডের বৃদ্ধি ঘটে।"
আমরা এবিষয়ে নেফ্রোন ক্লিনিকের চেয়ারম্যান ডাঃ সঞ্জীব বাগাইয়ের সাথে কথা বললে তিনি স্পষ্টভাবে জানান দীর্ঘ সময় ধরে মাস্ক পরা একেবারে নিরাপদ।ডাঃ বাগাই বলেন, "মাস্ক আপনাকে কাশি বা কণার থেকে হওয়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। তবে মাস্কের কারণে আপনার দম বন্ধ হওয়া উচিত নয়।এটি উপযুক্ত সাইজ এবং আকারের হওয়া উচিত।এটি আপনার মুখে এতটাও শক্ত হওয়া উচিত নয় যার জন্য আপনি অস্বস্তি বোধ করেন।
ভাইরাল এই পোস্টে এন-৯৫ বা সার্জিক্যাল মাস্কের মতো নির্দিষ্ট কোনও ধরণের মাস্কের উল্লেখ করা হয় না।ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) অন্তর্গতঃ ও সাধারণত স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্বারা ব্যবহৃত এন-৯৫ মাস্কটি ব্যবহারকারীকে মুখে আসা বায়ুবাহিত এবং তরল কণাগুলি থেকে রক্ষা করতে পারে।স্ট্যানফোর্ডের ইঞ্জিনিয়াররা সম্প্রতি অক্সিজেনের ঘাটতির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মোকাবেলা করতে পারে এমন এক নতুন প্রতিরক্ষামূলক মাস্ক তৈরি করেছেন।
স্ট্যানফোর্ড প্রজেক্টে গবেষণারত এক বিজ্ঞানী জন জু-র মতে, “এন-৯৫ মাস্কগুলি অক্সিজেন গ্রহণ গ্রহণের পরিমাণ আনুমানিক ৫ থেকে ২০ শতাংশে কমিয়ে আনতে পারে। এটি সুস্থ ব্যক্তির পক্ষেও তাৎপর্যপূর্ণ। এটি মাথা ঘোরা এবং হালকা মাথাব্যাথার কারণ হতে পারে। আপনি যদি অনেকক্ষণ মাস্ক পরে থাকেন তবে এটি ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে।শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর ক্ষেত্রে এটি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।"
হায়দ্রাবাদের অ্যাপোলো হাসপাতালের সিনিয়র নিউরোলজিস্ট ডাঃ সুধীর কুমার বলেছেন, ভাইরাল এই পোস্টের কোনও সত্যতা নেই।তিনি বলেন, “মনে হচ্ছে পোস্টটি ক্ষতিসাধনের জন্যই করা হয়েছে। আমরা ভালভাবে জানি যে মুখের মাস্কগুলি এক ব্যক্তি থেকে অপর ব্যক্তিতে করোনা এবং অন্যান্য শ্বাস প্রশ্বাসের সংক্রমণ হ্রাস করতে সহায়তা করে। এই ধরণের পোস্টের কারণে লোকজন মুখে মাস্ক ব্যবহার করায় নিরুৎসাহ বোধ করতে পারেন।"
ডাঃ কুমার জোর দিয়ে বলেছেন যে মুখে মাস্ক ব্যবহারের ফলে হাইপোক্সিয়া হয় না এবং এটি মস্তিষ্ক বা হার্টের কার্যকারিতায় কোনও বিরূপ প্রভাব ফেলে না। তিনি আরও বলেন, “যদিও দীর্ঘক্ষণ শক্ত করে আটকানো মাস্ক ও চোখকে সুরক্ষিত রাখার চশমা ব্যবহার করলে কিছু স্বাস্থ্যকর্মীদের মাথা ও মুখে ব্যথা হতে পারে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা মার্কিন যুক্তরাষ্টের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের কেন্দ্রও দীর্ঘক্ষণ মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে কোনো সতর্কবার্তা দেয় না।
অতএব চিকিৎসকদের মতে, কাপড় দিয়ে তৈরি ভালভ ছাড়া সাধারণ সার্জিকাল মাস্ক দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারের জন্য একদম নিরাপদ।মাস্কটিকে যথাযথ আকারের হতে হবে এবং সেটি এতটাও শক্ত হওয়া উচিত নয় যাতে ব্যবহারকারীর শ্বাসরোধ হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন স্বাস্থ্যসেবাগুলিতে দীর্ঘক্ষণ মাস্ক ব্যবহার এড়ানো উচিত কারণ এতে মাস্কগুলির কার্যকারিতা হ্রাস হয় এবং এর সাথে অক্সিজেনের অভাব হওয়ার কারণ নেই।
JHOOTH BOLE KAUVA KAATE
The number of crows determines the intensity of the lie.
- 1 Crow: Half True
- 2 Crows: Mostly lies
- 3 Crows: Absolutely false