নাগরিক কল্যাণে রাষ্ট্র ব্যর্থ, এর দায় কে দেবে?

স্বাস্থ্য পরিষেবায় এগিয়ে দাবি করলেও বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিন্ন কথা বলছে

 |  3-minute read |   21-01-2019
  • Total Shares

উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়াড়া জেলায় এক দম্পতির ঘটনা মনটা ভীষণ খারাপ করে দিয়েছে। শ্রীনগরে উপত্যকার সবচেয়ে বড় প্রসূতি-সংক্রান্ত হাসপাতালের বাইরে একটা কার্ডবোর্ডের বাকস্ হাতে ওই দম্পতি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। লোকে যখন জানতে চাইল যে কেন তিনি ওই ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন, তখন সেই ঘটনার কথা তাঁরা জানতে পারলেন।

ওই বাক্সের মধ্যেই রয়েছে তাঁদের সদ্যোজাত সন্তানের নিথর দেহ। যখন সেই নারী প্রসবের সময় উপস্থিত হয় তখন তাঁদের সেই বরফে ঢাকা গ্রাম থেকে বহু মাইল তাঁরা হেঁটেছেন। হাঁটতে হাঁটতেই তাঁরা শ্রীনগরের এলডি হাসপাতালে পৌঁছে যান – অভিযোগ এখানে চিকিৎসকরা তাঁদের বিমুখ করেন।

হাড় হিম করা ঠান্ডার মধ্যে গভীর রাতে তাঁরা হাসপাতাল ছাড়েন। সেই মহিলার প্রসববেদনা তীব্র হয়, তাংদের কথায় ফের হাসপাতালের পথ ধরেন তাঁরা এবং পথেই তিনি প্রসব করেন। সেই সন্তান এখন মৃত।

main_baby-hand_01191_012119043534.jpgপ্রসববেদনা হচ্ছে দেখেও কাশ্মীরের ডাক্তাররা তাঁকে ফিরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। তিনি মৃত সন্তান প্রসব করেন – এর দায় কে নেবে? (উপস্থাপনামূলক চিত্র/ রয়টার্স)

চিকিৎসকের ঔদাসীন্যকে দায়ী করছেন ওই দম্পতি, লোকজ ন ক্ষেপে উঠেছেন, তবে আমরা জানি যে এই ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়।

শত শত দরিদ্র রোগী প্রতি নিয়ত এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হন – বেশির ভাগ ঘটনাই লোকের নজর এড়িয়ে যায়।

এই ধরনের ঘটনা প্রকাশ্যে এলেই লোকে হা-হুতাস করে – কয়েকদিন সে সব নিয়ে কথাবার্তা হয়, তারপরে লোকে সে সব ভুলে যায়।

বছর দুয়েক আগে, ২০১৬ সালেও এই ধরনের একটা ঘটনা সকলকে নাড়া দিয়েছিল। অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে একটা অ্যাম্বুসল্যান্সও দেওয়া হয়নি আর তাই সেই ব্যক্তি তাঁর মৃত স্ত্রীর দেহ কাঁধে করে ১২ কিলোমিটার হেঁটে গ্রামে ফেরেন। এ থেকে যে প্রশ্ন মনে আসছে তা হল – কেন স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো একেবারে প্রাথমিক প্রয়োজন থেকে নাগরিকদের বঞ্চিত করছে রাষ্ট্র? কেন দেশের সাধারণ পুরুষ ও সাধারণ নারীরা এখন এ ভাবে ভুগবেন?

main_odisha_man-carr_012119043609.jpg হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের থেকে শববাহী যান ও অ্যাম্বুল্যান্সের কোনওটিই পাননি বলে স্ত্রীর দেহ কাঁধে করে নিয়ে গ্রামে ফেরেন দানা মাঝি। (সূত্র: ওটিভি ভিডিয়ো গ্র্যাব)

বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি হচ্ছে এবং সারা বিশ্বেই সংশ্লিষ্ট সরকার সেই সব সুযোগ-সুবিধা সাধারণ মানু ষের নাগালে এনে দিচ্ছে। ক্ষমতায় যে দলই থাকুক না কেন – ভারত সরকার বারে বারে একই কাজ করে চলেছে – সর্ব ক্ষেত্রেই সাফল্যের চিত্র তুলে ধরছে – দেখাচ্ছে প্রতিটি ক্ষেত্রে কী বাবে দেশ বিকশিত হচ্ছে। যদি এটাই বাস্তব হয় তাহলে এই সময়ে দাঁড়িয়ে কেন আমরা দেখছি যে বরফপড়া শীতের রাতে রাস্তার উপরে সন্তান প্রসব করতে হচ্ছে কিংবা নিকটজনের দেহ কাঁধে করে নিয়ে ফেরার মতো করুণ দৃশ্যের সাক্ষী হতে হচ্ছে? বেশ কয়েক বছর ধরে কয়েকটি শিশু হাসপাতালে রয়েছে কারণ তাদের কোনও দাবিদার নেই। এই দেশেও এই ধরনের ‘অবাঞ্ছিত’ শিশুদের কল্যাণে বাস্তবিক ভাবে কোনও প্রকল্পই নেই।

এই পরিস্থিতি কী ভাবে বদল করা সম্ভব?

আমরা শুনে আসছি যে ভারত একটা কল্যাণকর গণতান্ত্রিক দেশ।

যদি এ কথা এখনও সত্যি হয়ে থাকে তা হলে কেন এই ধরনের অত্যাবশ্যক চাহিদাটুকুও মিটছে না?

লেখাটি পড়ুন  ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SHUJA-UL-HAQ SHUJA-UL-HAQ @shujauh

Senior Special Correspondent, India Today TV. In spare time I volunteer for Read Room Circle. Setup libraries for underprivileged.

Comment