জেনে রাখুন কোন খাবার আপনার অস্থিকে সুস্থ ও আরও সতেজ করবে

মাংস, প্রক্রিয়াজাত খাবারদাবার ও রান্নায় বিশুদ্ধ তেল কম

 |  3-minute read |   16-07-2018
  • Total Shares

হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে ওমেগা ৩-এর উপকারিতা সম্বন্ধে আমি আগেও আলোচনা করেছি। হার্টকে ভালো রাখতে ওমেগা ৩-এর ভূমিকা সম্বন্ধে এখন আমরা প্রায় সকলেই অনেক কিছু জানি এবং ক্রমশ মানুষ এই বিষয়ে আরও বেশি সচেতন হচ্ছে। সচেতন হওয়া নিঃসন্দেহে ভালো।

আজ আমি আমার লেখায় যে বিষয়টা নিয়ে কথা বলব সেটা নিয়ে এর আগে তেমন একটা আলোচনা হয়নি। যেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি সেই পুষ্টিকর পদার্থ নিয়ে যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বিশেষ উপকারী। গবেষণায় ক্রমশ পরিষ্কার হয়েছে যে ওমেগা ৬-এর চেয়ে যদি ওমেগা ৩-এ সমৃদ্ধ খাবারদাবার বেশি খাওয়া হয় তাহলে হাড় মজবুত হলেও শরীরে অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। তাই ঠিক পরিমাণে ওমেগা ৬-এর থেকে ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ খাবার খেলে হাড় মজবুত হয় ও তা খুব সহজে ভেঙেও যায় না।

প্রথমে দেখা যাক ওমেগা ৩ কী এবং আমাদের শরীরে ঠিক কতটা ওমেগা ৩-এর প্রয়োজন রয়েছে। যে সব স্নেহ পদার্থে দরকারি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে সেই সব খাবার খাওয়া উচিৎ। চিকিৎসা শাস্ত্রে এগুলোকে এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড (ইএফএ) বলা হয়। এই পদার্থগুলো শরীর না পেলে যেমন শরীর সুস্থ থাকবে না তেমনই শরীরে এই পদার্থ তৈরি হয় না। তাই শরীরের জন্য এই পদার্থগুলো অপরিহার্য।

আমাদের শরীর যেমন খাবার থেকে ভিটামিন, খনিজ ও অন্যান্য পুষ্টিকর পদার্থ পায় তেমনই খাবার থেকেই শরীর এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিডও পায়।

body_071618041226.jpgআমাদের পূর্বপুরুষ ওমেগা-৬ ও ওমেগা-৩ এই দুটোই ১:১ অনুপাতে গ্রহণ করতেন

এই ইএফএ-গুলি হল পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং এগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয় - ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। শরীর যদি এই দুটি ফ্যাটি অ্যাসিড ঠিকঠাক পরিমাণে না পায় তাহলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ শরীরে ওমেগা ৬-এর আধিক্য হলে শরীরে ফোলা ভাব হতে পারে বা রক্ত জমে যেতে পারে কিংবা কোনও রকম টিউমার জাতীয় কিছু দেখা দিতে পারে। সেই পরিস্থিতিতে ওমেগা ৩ আবার একদম উল্টো কাজ করে। তাই শরীরে যদি উভয়ের পার্থক্য খুব বেশি হয়ে পড়ে তাহলে হাড় দুর্বল হয়ে যায়। হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার একটা প্রধান কারণ হল উভয়ের এই ভারসাম্যের অভাবে কোষে কাইটকিনের ক্ষরণ অনেক বেড়ে যায় তাই হার দুর্বল হয়ে পড়ে।

আমাদের পূর্বপুরুষরা ওমেগা ৬ এবং ওমেগা ৩ এই দুটোই ১:১ অনুপাতে গ্রহণ করতেন। আর এখন সেই অনুপাতটা গিয়ে ঠেকেছে ১৭:১-এ, যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। খারাদাবার এমন ভাবে খেতে হবে যাতে আমাদের শরীর ৩:১ কিংবা ১:১ অনুপাতে এই দুটি পদার্থ পেতে পারে।

body1_071618041440.jpgস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী

গবেষণায় দেখা গেছে খাবারে যদি ওমেগা ৩-এর পরিমাণ ঠিক থাকে তা হলে সাইটোকিনের উৎপাদনে ভারসাম্য বজায় থাকে ও হাড় ভালো থাকে। এর সঙ্গে আর্থারাইটিসের একটা যোগ রয়েছে।

অস্টিওআর্থারাইটিস বেশি দেখা যায়। অস্টিওআর্থারাইটিস হল অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক একটি হাড়ের রোগ যার ফলে অস্থিসন্ধির কার্টিলেজ ক্ষয়ে যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন অতিসক্রিয় হয়ে পড়ে তখন অস্থিসন্ধির টিস্যুগুলো আক্রান্ত হয়। এর ফলে অস্থিসন্ধিতে যেমন যন্ত্রণা হয় ও ফুলে যায় তেমনই তা ভঙ্গুর হয়ে যায়। এই সমস্যাকে রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস বলা হয়।

শরীরের ফোলা ভাব দেখা দিলে ওমেগা ৩-এ সমৃদ্ধ খাবার খেলে সেই সমস্যা দূর হয়। তাই আর্থারাইটিস হলে অস্থিসন্ধির ব্যথা বা সহজেই হাড় ভেঙে যাওয়া দূর হয় কারণ ওমেগা ৩ শরীরে গিয়ে সেইসব রাসায়নিকগুলির উপর কাজ করে যেগুলোর ক্ষরণ হলে এই সমস্যাগুলো হতে পারে।

body2_071618041540.jpgউপযুক্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় খাবার খান

তাই উপযুক্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবারদাবার খান। পাশাপাশি যে সব খাবারে ওমেগা ৬ বেশি রয়েছে সেই সব খাবারদাবার কম খান, না হলে ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে।

মাংস, প্রক্রিয়াজাত খাবারদাবার ও রান্নায় বিশুদ্ধ তেল কম খান।

যে সব স্নেহ পদার্থ শরীরের পক্ষে উপকারী সেই সব স্নেহ পদার্থ বেশি করে খান। যদিও কোন কোন খাবারে পুষ্টিকর স্নেহ পদার্থ আছে তা খুব সহজেই জেনে নেওয়া সম্ভব তবে আমি এখানে আরও কয়েকটি খাবারের নাম বলব যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর স্নেহ পদার্থ থাকে। সেগুলো হল তিসি, চিয়া বীজ (chia seeds), আখরোট, আম, পালংশাক, ব্রকোলি ও ফুলকপি। এ ছাড়াও আরও কিছু বনৌষধি আছে যাকে ইংরেজিতে হার্বস বলা হয় যেমন - লবঙ্গ, অরিগানো ও পেপারমিন্ট--এতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৬।

তাই নিয়মিত এই জাতীয় খাবারদাবার খেলে হাড় মজবুত হবে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে 

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

KAVITA DEVGAN
Comment