ভিডিয়ো গেমস খেলা অন্যায় নয়, তবে তাতে আসক্তি মোটেই ভালো নয়

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি 'গেমিং ডিসঅর্ডার' রোগটিকে তাদের তালিকায় যোগ করেছে

 |  3-minute read |   20-09-2018
  • Total Shares

সাম্প্রতিক কালে শিশুদের মধ্যে ভিডিয়ো গেমস খেলা র ঝোঁক খুব বেড়ে গেছে যার ফলে শুধু তাদেরই যে ক্ষতি হচ্ছে এমনটা নয়, সামাজিক ক্ষতিও হচ্ছে। তাই সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু একটি নতুন রোগকে তাদের তালিকায় সামিল করেছে। এই নতুন রোগটির নাম 'গেমিং ডিসঅর্ডার'।  এই প্রথমবার হু ভিডিয়ো গেমের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তিকে মানসিক সমস্যা বলে ঘোষণা করল।

মানসিক ক্লান্তি দূর করতে ছোট হোক বা বড়, সবারই বিনোদনের প্রয়োজন আছে। তবে সেই বিনোদন যখন লাগামছাড়া পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখনই বিপদ ঘটে।  

ঠিক তেমন ভাবেই ভিডিও গেম খেলার অনেকগুলো উপকারিতা থাকলেও যখন তা মাত্রাধিক হয় তখন সমস্যা দেখা দেয়।

দিনের বেশিরভাগ সময়টাই তারা এই সব খেলা নিয়ে কাটিয়ে দেয়। তখন তাদের কাছে ওই ভার্চুয়াল জগতই চূড়ান্ত বাস্তব হয়ে ওঠে। শিশুদের অপরিপক্ক মনে খুব সহজেই দাগ কেটে যায়। আমরা এখন খবরের কাগজ খুললেও আকছার দেখতে পাই ভিডিয়ো গেমস খেলার নেশায় শিশুরা মারাত্মক সব দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলছে। একটি শিশুর পক্ষে এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসাটা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।   

body1_092018030250.jpgসম্প্রতি ব্লু হোয়েল ভিডিয়ো গেমস খেলার ফলে বহু অল্পবয়সীদের মৃত্যু হয়েছে

সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ভিডিও গেমস যেমন ব্লু হোয়েল, ফোর্টনাইট ব্যাটেল রোয়াল, সিনামন পাউডার গেম বা মোমো খেলে বহু বাচ্চা ও কমবয়সীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে।

আমি সত্যি ভেবে উঠতে পারি না যে যখন এইধরণের খেলা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছাড়া হচ্ছে তখন সেইসব তার উপর কোনও রকম নজরদারি কেন চালান হয় না বা এইসব খেলাগুলোকে কেনই বা ছাড় দেওয়া হয়? বা সেগুলো নিষিদ্ধ কেন করে দেওয়া হয় না?

body5_092018030403.jpgপিঙ্ক হোয়েল খেলাটি শিশুদের জন্য ভালো

কী ধরণের সমস্যা হতে পারে?

অতিরিক্ত ভিডিও গেম খেললে বাচ্চাদের মনোযোগের অভাব ঘটে।  তারা পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে না। মনটা সব সময় চঞ্চল হয়ে থাকে।

তারা আর মাঠে গিয়ে খেলাধুলো করতে চায় না।

ভিডিয়ো গেমসের বাইরে এরা আর কিছুই ভাবতে পারে না এমনকি বাবা-মা এবং বাড়ির অন্যদের প্রতি কোনও টান অনুভব করে না।

body2_092018030538.jpgব্লু হোয়েল খেলার একটি চ্যালেঞ্জ হল নিজের হাত কেটে একটা তিমি মাছ আঁকতে হয়

বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এরা অন্যান্যদের সঙ্গে এমনকি বন্ধুদের সঙ্গেও ঠিকমতো মেলামেশা করতে পারে না।  তাদের নতুন বন্ধু হয়ে ওঠে ভিডিয়ো গেমস।       

ভিডিয়ো গেমসে বিভিন্ন মারামারির খেলা খেলতে খেলতে ক্রমশই তাদের আচরণও আক্রমণাত্মক এবং মারমুখী হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত খেলার ফলে তারা আসক্ত হয়ে পড়ে। এই নেশা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে তাদের শরীরের উপর খারাপ প্রভাব পরে। দীর্ঘক্ষণ একজায়গায় বসে খেলতে খেলতে তাদের শরীরের যেমন ওজন বেড়ে যায়, তাদের শ্রবণশক্তি ব্যাহত হয় এবং চোখের নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে।

body4_092018030658.jpgনতুন একটি ভিডিয়ো গেম মোমোও ভয়ঙ্কর

বহু ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে যে তারা ঘুম, খাওয়াদাওয়া বা পড়াশোনা করতে চায় না। এর ফলে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, তাই গোড়াতেই সতর্ক না হলে যা অনেক সময় হাতের বাইরেও চলে যেতে পারে।

কী ভাবে শিশুকে ভিডিও গেমের আসক্তি থেকে দূরে রাখবেন:

ইন্টারনেটে গেম খেলার সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। অভিভাবককে সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে।

শিশুদের ও কম বয়সীদের কাউন্সিলিং বা সাইকো থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করান হয়।

শিশুকে বকাঝকা না করে তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে অতিরিক্ত ভিডিয়ো গেমস খেললে তাদের কী ধরণের সমস্যা হতে পারে। ওদের খেলার মাঠে নিয়ে যান।

body3_092018030606.jpgশিশুকে খেলার মাঠে নিয়ে যান

শিশু যে কাজ করতে ভালোবাসে সেই কাজগুলো করতে তাকে উৎসাহিত করুন। সর্বোপরি অবিভাবককে শিশুর দিকে সতর্ক নজর রাখতে হবে সব সময়। স্কুলের শিক্ষকদেরও সচেতন হতে হবে।

বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত গেম নির্বাচন করুন। ব্লু হোয়েল খেলাটি যখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তখন সেই মারাত্মক খেলার থেকে আসক্তি কাটাতে বাজারে আসে আর একটি খেলা যার নাম পিঙ্ক হোয়েল। এই খেলাটি খেলে বহু বাচ্চা ব্লু হোয়েলের তীব্র আসক্তির হাত থেকে মুক্তি পায়।

সন্তানকে তার সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে খেলার সুযোগ দিন।

শিশুকে মাঝে মধ্যে বেড়াতে নিয়ে যান।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

DR. GAUTAM SAHA DR. GAUTAM SAHA

PSYCHIATRIST, CHAIRPERSON- INDIAN ASSOCIATION FOR CERIATRIC MENTAL HEALTH

Comment