মানসিক চাপ বেশি হলে অল্প বয়সেই অ্যালঝাইমার্সের লক্ষণ দেখা দিতে পারে

হু-র রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তের তালিকায় ভারত দ্বিতীয়

 |  3-minute read |   26-09-2018
  • Total Shares

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে আগে যে রোগটা নিয়ে আমরা বড় একটা মাথা ঘামাতাম না সেই অ্যালঝাইমার্স এখন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং আক্রান্ত হচ্ছে বহু মানুষ। ভারতেও রোগটির প্রকোপ অনেক বেড়েছে। দিল্লির অ্যালঝাইমার্স অ্যান্ড রিলেটেড ডিসঅর্ডার সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যার নাম 'ডিমেনশিয়া ইন্ডিয়া' এই রিপোর্ট অনুসারে দেখা গেছে যে বিশ্বে ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্তের তালিকায় ভারতের স্থান রয়েছে দু'নম্বরে। প্রায় ৪১ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম সাহা বলেন, "বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে বর্তমানে ডিমেনশিয়া হওয়ার অন্যতম বড় কারণ হল অতিরিক্ত মানসিক চাপ, তা সে অফিসেই হোক বা বাড়িতে। আমরা সবাই জীবনের ইঁদুর দৌড়ে টিকে থাকতে সবসময় দৌড়চ্ছি। অতিরিক্ত চাপের কারণে আমাদের ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া হয় না এবং ভালোভাবে ঘুম হয় না। বিভিন্ন কারণে হতাশা আমাদের জীবনের এখন নিত্যদিনের সঙ্গী বললেই চলে। মানুষ এখন সর্বদা ব্যস্ত। মানসিক চাপ বা স্ট্রেসে আমরা সবাই কমবেশি ভুগিয়ে থাকে। কিন্তু সেটা যখন মাত্রাধিক হয়ে পরে তখনই ঘটে বিপদ। অসম্ভব চাপের কারণে মানসিক অবসাদ হয়। সময় মতো সচেতন না হলে বা চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে জটিলতা আরও বেড়ে যেতে পারে।

body2_092618035844.jpgঅতিরিক্ত মানসিক চাপ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন

অ্যালঝাইমার্স রোগে আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কের কোষগুলির ক্ষতি হয়, তাই আক্রান্ত ব্যক্তি সব কিছু ভুলে যেতে থাকেন। এটি একটি বার্ধক্যজনিত রোগ হলেও এখন বার্ধক্যের অনেক আগেই বহু কম বয়সীর মধ্যেও এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। মূলত এই রোগটির লক্ষণ ৬০ বছর বয়সে দেখা দেয়া তবে এখন ৪০ পেরোতে না পেরোতেই ডিমেনশিয়া বিশেষ করে অ্যালঝাইমার্স চিহ্নিত হচ্ছে।  

বংশগত কারণ ছাড়া বর্তমানে প্রত্যেকদিনের চাপ পাশাপাশি দূষণ, অসুস্থ জীবনযাপন, উপযুক্ত খাবারদাবারের অভাব প্রভৃতি কারণেও ডিমেনশিয়া এখন অনেক কম বয়সেই মানুষের মধ্যে দেখা দেয়। 

তাই সময় থাকতে সচেতন হন।

ডায়েটিশিয়ান রণিতা ঘোষ বলেন, "খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ডিমেনশিয়া এবং অ্যালঝাইমার্স হওয়ার সরাসরি কোনও যোগাযোগ নেই। তবে শরীরকে সব সময় সুস্থ রাখতে খাদ্যের একটা বিশাল ভূমিকা আছে। সুস্থ থাকতে সুষম খাবারের প্রয়োজন। এমন খাবারদাবার খান যা খেলে স্মৃতিশক্তির ভালো থাকে। চিনা বাদাম, আখরোট, মটরশুঁটি প্রভৃতি মস্তিস্ক ভালো রাখে। যে সব খাবারে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে সেই জাতীয় খাবারদাবার খেলে মস্তিস্ক সুস্থ থাকে এবং এই ধরণের রোগের ঝুঁকি কমায়।

body4_092618040023.jpgবার্ধক্যজনিত রোগ হলেও এখন বহু কম বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যেও এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে

মস্তিষ্ক বিকাশে ভিটামিন ও প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ খাবারদাবার বেশি করে খান। প্রোটিন সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার যেমন শাকসব্জি, ফলমূল, মাংস, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার, কাঠবাদাম, সামুদ্রিক মাছ প্রভৃতি খান। অতিরিক্ত জাঙ্কফুড ও ফাস্টফুড খাওয়া বন্ধ করুন।

কী করবেন:

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং বলছে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ও জীবনযাপনেরও রোগটির সঙ্গে একটা বড় যোগাযোগ রয়েছে। তাই জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে হবে।

নিয়মিত ব্যায়াম, ধ্যান ও শরীর চর্চা করুন। অতিরিক্ত মানসিক চাপ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।

নিয়মিত গান শুনুন বা ভালো বই পড়ুন।বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিন। ৪০ বছর বয়সে পা দিলেই নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

body3_092618035913.jpg৪০ বছর বয়সে পা দিলেই নিয়মিতভাবে প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো করান

জীবনের ছোটোখাটো বিষয় উপভোগ করুন। মাঝেমধ্যেই বাড়ির সবাই মিলে বেড়াতে যান। যে কোনও বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনাচিন্তা না করার চেষ্টা করুন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।

পরিবারের সঙ্গে এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। অতিরিক্ত মদ্যপান বা ক্যাফিন থেকে দূরে থাকুন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment