অন্ধ্রপ্রদেশ ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থার পর এখন কেন এত তৎপর চন্দ্রবাবু?

যে মমতা বিজেপি বিরোধিতায় অগ্রগণ্য তাঁকে চন্দ্রবাবু কেন সারির একেবারে শেষে রেখেছেন?

 |  3-minute read |   10-11-2018
  • Total Shares

১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের পরিত্রাতা ছিল তেলুগু দেশম পার্টি। ২০১৮ সালে এই মুহূর্তের যা পরিস্থিতি তাতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিনাশকারীর ভূমিকাতেও সেই তেলুগু দেশম পার্টিই।

দেশ সফরে বেরিয়েছেন তেলুগু দেশম পার্টিপ প্রধান তথা অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু, উদ্দেশ্য – এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে মহাজোট তৈরির প্রধান কারিগরের ভূমিকা পালন করবেন তিনি। একই ভূমিকায় কিছুদিন আগে দেশ সফরে বেরিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার তার কিছুদিন বাদে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কথা তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাও। তাঁদের দু’জনেই এখন এবং আপাতত এই ভূমিকা থেকে বনবাস নিয়েছেন। জেগে উঠেছেন চন্দ্রবাবু।

vajpayee_pti_111018023934.jpgবাজপেয়ী সরকারের জিয়নকাঠি ছিল তেলুগু দেশম পার্টি (ফাইল চিত্র/পিটিআই)

নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করে প্রত্যেকের সঙ্গে বৈঠক সেরে ফেলেছেন কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, তিনি এখনও কলকাতামুখী হননি। এই রাজনীতির মূল উদ্দেশ্যটা কী? কিছুদিন আগে সারা ভারত প্রত্যক্ষ করেছে এই একই তেলুগু দেশমই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল। সেই অনাস্থা প্রস্তাবে না ছিল দিক, না ছিল কোনও দিশা। একটি নিছক আঞ্চলিক রাজনীতির উদ্দেশ্য সাধন করতে সংসদের কক্ষ ব্যবহার করা হয়েছিল।

এই ক’মাসের মধ্যে কী এমন পরিস্থিতি হল যাতে সেই একই চন্দ্রবাবু নাইডু জাতীয় রাজনীতির মসীহা হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠলেন এবং কেনই বা যাবতীয় হিরোধী শক্তি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া) সকলেই সাধু সাধু রব তুলেছেন?

চন্দ্রবাবু নাইডু যখন প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তখন সংবাদমাধ্যমের ব্যাখ্যা ছিল: তিনি মুখ্যমন্ত্রী কম, সিইও বেশি। আজকেও কোথাও যেন সেই সিইও-র ভূমিকা পালন করছেন চন্দ্রবাবু – যার মধ্যে না আছে কোনও জাতীয় রাজনীতিক দৃষ্টিভঙ্গি অথবা নীতি ও আদর্শ। শুধুমাত্র নিজের ক্ষয়িষ্ণু আঞ্চলিক রাজনৈতিক ব্যবসাকে ফিরে পাওয়ার মরিয়া চেষ্টায় জনগণের টাকায় দেশভ্রমণে বেরিয়েছেন চন্দ্রবাবু।

kcr_mamata_inside_111018024011.jpgফেডেরাল ফ্রন্টের ডাক দিয়েছিলেন কে চন্দ্রশেখর রাও ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডেইলিও)

মনে রাখতে হবে ঠিক কী কারণে এনডিএ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন চন্দ্রবাবু।

তাঁর অভিযোগ একটাই – অন্ধ্রপ্রদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার উপযুক্ত সাহায্য তিনি কেন্দ্র থেকে পাননি এবং শেষ যে ধর্নাটি তিনি দিয়েছিলেন তা ছিল পোলাবরম বাঁধ সংক্রান্ত অভিযোগকে সামনে রেখে।

নিছক এই আঞ্চলিক দায়বদ্ধতাকে মাথায় রেখে আজ হঠাৎ তিনি জাতীয় রাজনীতির মধ্যমণি। সংস্থার সিইও হিসাবে তাঁর ম্যানেজমেন্ট স্কিলের উপরে ভরসা করে বসে আছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী থেকে ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিন পর্যন্ত – এমনকী বহুজন সমাজ পার্টির মায়াবতীও, হয়তো বা!

এনটি রামা রাওয়ের হাত ধরে তেলুগু দেশম তৈরি হওয়ার পর থেকে যে রাজনৈতিক দলের মূল ভিত্তিই ছিল কংগ্রেস বিরোধিতা, সেই রাজনৈতিক দর আজ রাহুল গান্ধীর মধ্যে যখন ভবিষ্যৎ ভারতের স্বপ্ন দেখেন তখন ধরে নেওয়াই যায় যে নিজের পায়ের তলার জমি কতটা খুইয়ে বসেছেন চন্দ্রবাবু।  

বিজেপি অন্ধ্রপ্রদেশে তেমন কোনও শক্তিশালী দল নয়, নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে চন্দ্রবাবু এখন ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মধ্যেও সিঁদুরে মেঘ দেখছেন।

সত্যিই এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি বিরোধিতায় একেবারেই অগ্রগণ্য গুরুত্বের দিক থেকে সেই মমতাকে চন্দ্রবাবু কেন একেবারে শেষের সারিতে রেখেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এতে কি বিজেপি-বিরোধী মহাজোটের বিশ্বাসযোগ্যতা কমছে না?

chandrababu-pti_111018024154.jpgএইচডি দেবগৌড়া ও এইচডি কুমারস্বামীর সঙ্গে চন্দ্রবাবু নাইডু (টুইটার)

তার উপর চন্দ্রবাবুকে এই অধিকার কে দিয়েছেন যে তিনি ঘোষণা করে দিলেন বিরোধী জোট কংগ্রেসের নেতৃত্বেই নির্দিষ্ট হবে। তাহলে কি চন্দ্রবাবুর এই অতিসক্রিয়তার পিছনে কংগ্রেসের কোনও কৌশল কাজ করছে? কারণ এ বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আড়ষ্ঠতা আছে, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের আড়ষ্ঠতা আছে, মায়াবতীর আড়ষ্ঠতা আছে এমনকি সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদবও মন খুলে কংগ্রেসের নেতৃত্বকে স্বাগত জানাতে পারছেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিশায় ফেডারেল ফ্রন্টের ডাক দিয়েছিলেন চন্দ্রবাবু সেটাকে লঘু করে কংগ্রেসকে সামনের সারিতে আনলেন।

ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার একাংশের তরফ থেকে চন্দ্রবাবুকে ভারতের ভবিষ্যতের চেহারা হিসাবে দেখানো শুরু হয়েছে। চন্দ্রবাবু যদিও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিনীত থাকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু তাঁর এই ভারত-সফর শেষ পর্যন্ত কবে কলকাতামুখী হয় সেটিকে নজর রেখে চলেছে রাজনৈতিক মহল।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PRASENJIT BAKSI PRASENJIT BAKSI @baksister

The writer is a veteran journalist.

Comment