অসমে বসবাসকারী বাঙালিদের কাছে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে আবেগ কতটা

তিনটি স্বায়ত্তশাসিত পরিষদ থাকলেও বরাকে পৃথক রাজ্যের দাবি ওঠেনি

 |  3-minute read |   03-11-2018
  • Total Shares

আমি অসম বিশেষজ্ঞ নই, অসমের ইতিহাসও আমার তেমন স্মরণে নেই। কিন্তু ঘটনাচক্রে পেশার তাগিদে গত তিন দশক ধরে অসম আমার হৃদয়ের বড় কাছাকাছি। বহু ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য হয়েছে।

বরাক এবং ব্রহ্মপুত্র – দুই উপত্যকাতেই বহু মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটেছে। তারই প্রেক্ষাপটে এবং সাম্প্রতিক ঘটনাক্রমের কারণে কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার অবতারণা এই লেখার মধ্য দিয়ে।

গেল গেল রব উঠেছে অসমের প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে। পাঁচজন নিরীহ মানুষের প্রাণ গেছে – নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়। অসমে একটি নির্বাচিত সরকার আছে। নিশ্চয়ই তারা এ বিষয়টির তদন্তে যথেষ্ট সক্রিয়। কৌতূহল ছিলই। যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গে গেল গেল রব উঠেছে তার নিরিখে বরাক এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বহু মানুষের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু কোনও সিদ্ধান্তে আসার মতো এখনও কোনও আত্মবিশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে না।

assam-protests-pti_110318083237.jpgতিনসুকিয়ায় বাঙালি হত্যার প্রতিবাদ (ছবি: পিটিআই)

নিহত ওই পাঁচজনের ভাষা বাংলা, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। অসমের একটি বড় অংশের মানুষের মাতৃভাষা বাংলা, এ বিষয়েও কোনও সন্দেহ নেই। অসমে জাতিগত সংঘাত বহু প্রাচীন—এ বিষয়েও কোনও সন্দেহ নেই। তাহলে আজকে কেন এত গেল গেল রব?

 একটা বিষয় নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, অসমের যে সমস্ত মানুষের মাতৃভাষা বাংলা তাঁদের পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে কোনও আবেগ নেই, তাঁরা ততটাই অসমবাসী যেমন চিত্তরঞ্জন পার্কের বাঙালিরা দিল্লিবাসী। কারণ ইতিহাসের কোনও পর্যায়েই এঁরা পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। চিত্তরঞ্জন পার্কের বাঙালিরা পূর্ববঙ্গ থেকে যেমন সোজা হাজির হয়েছেন দিল্লিতে, অসমের বাংলাভাষীরা একই রকম ভাবে পাহাড় পেরিয়ে শিলচর বা করিমগঞ্জ বা হাইলাকান্দিতে বসতি গড়েছেন।

এমনকি এঁদের মধ্যে খুব সামান্যই আছেন যাঁদের বৈবাহিক সূত্রে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যোগ আছে। এঁরা নিজেদের লড়াই নিজেরা করেছেন, নিজেদের জমি নিজেরা শক্ত করেছেন। এবং এঁরা যথেষ্ট সচেতন, ঐতিহাসিক ভাবে ব্রহ্মপুত্রের উপত্যকার অসমীয়াদের সঙ্গে এঁদের সংঘাতের ইতিহাস সম্পর্কে।

একটা অতি ক্ষুদ্র উগ্র ভাষাপন্থী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ছাড়া এরা কোনও দিনই নিজেদের অসম থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবেননি। বারবার সংঘাত হয়েছে, বহু বাংলাভাষী প্রাণ দিয়েছেন, তবুও এঁরা নিজেদের অসমের মানুষ হিসাবেই ভাবতে ভালোবেসেছেন।

এই রকম একটা অবস্থায় যতই বনধ হোক না কেন, অসমের বাংলাভাষীরা তাঁদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে অনেক বেশি আগ্রহী। সেখানে নাগরিক পঞ্জীকরণও কোনও সমস্যা নয়, অথবা তিনসুকিয়ার হত্যাকাণ্ড বেদনাদায়ক হলেও এটা কোনও কোনও কফিনে শেষ পেরেক নয়।

যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গ বিষয়টিকে ঘা করবার চেষ্টা করছে তাতে তাঁরা আতঙ্কিত এবং বিরক্ত।

এমন একটা অবস্থায় যথারীতি কিছু শক্তি আছেই যারা পরিস্থিতি থেকে লাভ ওঠাতে সক্রিয়। তা অসমীয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যেও আছে, বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যেও আছে।

একটা জিনিস মনে রাখতে হবে যে পশ্চিমবঙ্গে যেমন পাহাড় ও সমতলের মধ্যে একটা সুনির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক বিভাজন রয়েছে অসমেও তেমনি বহুধাবিভক্ত সাংস্কৃতিক বিভাজন আছে।

অসমে তিনটি স্বায়ত্তশাসিত পরিষদ আছে -- বরো, কার্বি-আঙলং এবং উত্তর কাছারের ডিমাহাসো। এর পরেও বরাক নিয়ে কোনও পৃথক রাজ্যের দাবি ওঠেনি। এ রকম একটা অবস্থায় নিশ্চয়ই পরিস্থিতি এমন হওয়া উচিত নয় যাতে বরাকের উগ্র ভাবনার মানুষজন কোনও বিচ্ছিন্ন ভাবনা আমদানি করতে পারেন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PRASENJIT BAKSI PRASENJIT BAKSI @baksister

The writer is a veteran journalist.

Comment