জাত-ধর্মের মতো এখন তৈরি হচ্ছে নতুন ভোটব্যাঙ্ক। কী ভাবে?

২০১৪ সালের পরের নির্বাচনী ফল মোদী ম্যাজিক হলে এখন তা অস্তমিত?

 |  3-minute read |   11-12-2018
  • Total Shares

স্বাধীনতার আন্দোলনে উল্লসিত গোটা দেশ। সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে দেওয়ালে বিপ্লবের পদধ্বনি। এবার মুক্ত হবে ভারতবর্ষ।

সংবাদ মাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী সেমিফাইনালে গো-হারান হার হয়েছে বিজেপির। খেলার নিয়ম অনুযায়ী ফাইনালে অবতীর্ণ হওয়ার কোনও অধিকারই নেই তাদের। ব্যঙ্গের পর্যায় থেকে উন্নীত হয়ে নেতা হয়ে গেলেন রাহুল গান্ধী। আর কোনও চিন্তা নেই, দেশ পেয়ে গেছে তার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীকে।

rahul_121118054849.jpgপরবর্তী প্রধানমন্ত্রী তা হলে রাহুল গান্ধী? (ছবি: রয়টার্স)

সারা দিন ধরে এই আলোচনায় ব্যস্ত দেশের মানুষ, অন্তত তাঁরা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাস্তবটা হল কেউ এক কণাও কিছু বোঝেননি। তাই যদি বুঝতেন তা হলে ছত্তীশগড়ে কংগ্রেসের ঝড় উঠত না, মধ্যপ্রদেশ বা রাজস্থানে ফলাফল বুঝতে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত না, তেলেঙ্গনায় চন্দ্রবাবুর সঙ্গে রাহুল বৈঠক করতেন না অথবা মিজেরাম থেকে কংগ্রেস বাতিল হয়ে যেত না।

raman_singh_121118054916.jpegছত্তীশগড়ে কংগ্রেস ঝড়ে উড়ে গেল মুখ্যমন্ত্রী রমণ সিংয়ের সব কৌশল (ইন্ডিয়া টুডে)

ভারতের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সৌন্দর্য হচ্ছে পাঁচ বছর অন্তর মানুষ কী করবে তার উপরে কোনও রাজনাতিক দলের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই এবং কোনও সংবাদমাধ্যম এ ব্যাপারে কিছু আন্দাজও করতে পারে না।

হিসাব অনুযায়ী রাজস্থানে বিজেপির সাফাই হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কেন হল না সে কথা কোনও সংবাদমাধ্যমেও জানে না, রাহুল গান্ধীও জানেন না। মধ্যপ্রদেশে বিজেপির হার নিয়ে অতৃপ্ত আত্মা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ঘোলা জলে মাছ ধরতে শুরু করেছেন। ছত্তীশগড়ে কংগ্রেসের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, সরকারটা গড়বে কী করে। কারণ তারা ভেবেই উঠতে পারেনি এতগুলো মন্ত্রী খুঁজে বার করতে হবে।

 

তবুও একটা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ জরুরি।

প্রথম কথা হচ্ছে, তিনটি রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরল কংগ্রেস। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত ইতিবাচক, কিন্তু যথারীতি দুর্ভাগ্যজনক যে সাফল্যের ভাগীদার সচিন পাইলট বা অশোক গেহলট বা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বা কমল নাথ। এই সাফল্যের কোনও অংশেই রাহুল গান্ধীর এক ইঞ্চিও কোনও অবদান নেই দেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে।

রাজস্থানের যে সমস্ত সাংবাদিক নির্বাচনের প্রস্তুতির খবর করতে গিয়েছিলেন তাঁরা সকলে নিশ্চিত যে এই ভোট বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে, কিন্তু একেবারেই রাহুল গান্ধীর পক্ষে নয়। মধ্যপ্রদেশের অভিজ্ঞতা বলে, ভোট মামা চৌহ্বানের পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে, তবে রাহুল গান্ধীর পক্ষে নয়। কিন্তু তবুও যদি ধরে নেওয়া হয় যে এই সাফল্য রাহুল গান্ধীর সাফল্য তা হলে ২০১৯-এর লড়াই নরেন্দ্র মোদী বনাম রাহুল গান্ধী। তা হলে মহাজোটের কী হবে? মহাজোটের মুখই বা কে হবে?

modirahul_1541169923_121118054941.jpegএই সাফল্য রাহুল গান্ধীর হলে ২০১৯-এ তাঁর লড়াই সরাসরি নরেন্দ্র বিরুদ্ধে (ইন্ডিয়া টুডে)

অন্য দিকে ২০১৪ সালের পরবর্তী নির্বাচনগুলি মোদী ম্যাজিকের ফল বলে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে। তা হলে তাদের মেনে নিতে হবে এই ভরাডুবি মোদী ম্যাজিকের শেষের ইঙ্গিত। অতএব ২০১৯-এ তারা কোন রণকৌশল নিয়ে ময়দানে নামবে সেটা অবশ্যই একটা বড় প্রশ্ন।

এটা ঠিক যে মানুষের মনে চরম আশা জাগিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এটাও ঠিক যে আজ যদি কোনও আশা ভঙ্গ হয়ে থাকে তা হলে সেই আশাগুলো মোদীর পাত্র থেকে রাহুল বা মহাজোটের পাত্রের দিকে সরে গেছে। যত বেশি করে মোদীর ব্যর্থতা তুলে ধরা হবে তত বেশি করে পরবর্তী সরকারের কাছ থেকে মানুষের আশা বেড়ে যাবে। এতে ভারতের মানুষের মূল সমস্যার কতটা সমাধান হবে জানি না তবে আশা-নিরাশার মাঝে ঝুলতে থাকবে দেশের মানুষ।

২০১৪ সালে মোদী সফল হয়েছিলেন মানুষকে আশা জাগিয়ে যেটা প্রমাণ করে ১৯৪৭ সাল থেকে ২০১৪ ,সাল পর্যন্ত সরকারগুলো মানুষের আশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু মোদীর দৌলতে মানুষ এখন আশা করতে শিখে গেছে। ভারতের রাজনীতিতে এটা একটা নুতুন সমস্যা।

কৃষক আশা করতে শিখে গেছে যে সে ঋণ করবে আর সেই ঋণ মকুব হয়ে যাবে। পরিণামে মধ্যবিত্তের মধ্যেও আশা জাগতে শুরু করেছে যে তাদের ইএমআই পরিচালিত জীবনের মধ্যেও সমাধানসূত্র দেবে কোনও একটি সরকার। শ্রমিক মনে করছেন তার জীবনও ঋণের জীবন থেকে বেরিয়ে আসার আশা বাতলে দেবে কোনও একটি সরকার। ধর্ম বা জাতপাতের মতো নতুন নতুন ভোটব্যাঙ্ক তৈরি হচ্ছে এ ভাবে। এমন অবস্থায় ঠিক কোনও অ্যাজেন্ডায় ২০১৯-এর নির্বাচন সঙ্ঘটিত হবে তা স্পষ্ট হবে আগামী ২-১ দিনের মধ্যেই।

হিন্দু মোদী নাকি হিন্দু রাহুল, কৃষক মোদী নাকি কৃষক রাহুল ইত্যাদি ইত্যাদি...

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PRASENJIT BAKSI PRASENJIT BAKSI @baksister

The writer is a veteran journalist.

Comment