আচ্ছে দিনের কথা ভুলে যান, সুপ্রিম কোর্টের অযোধ্যা রায় ২০১৯-এ মোদীর ফেরা সহজ করবে

রামমন্দির নিয়ে রাজনীতি তুঙ্গে ওঠা শুরু হয়ে যাবে

 |  5-minute read |   30-09-2018
  • Total Shares

প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বাধীন সর্বোচ্চ আদালতের তিন বিচারপতির বেঞ্চ ২৭ সেপ্টেম্বর জানিয়েছে যে ১৯৯৪ সালের ইসমাইল ফারুকি মামলার রায়কে আরও বেশি সংখ্যক বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চে পাঠানোর প্রয়োজন নেই।

তিন বিচারপতির মধ্যে দু’জন বিচারপতি এ ব্যাপারে সহমত হওয়ায় ১৯৯৪ সালের মামলার রায় আর পুনর্বিবেচনা করা হবে না।

প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ও বিচারপতি অশোক ভূষণ এই আবেদন অগ্রাহ্য করেছেন এবং বলেছেন যে অধিগ্রহণের প্রেক্ষিতেই ১৯৯৪ সালে রায় দেওয়া হয়েছিল।

প্রধান বিচারপতির বদলে রায় পাঠ করার সময় বিচারপতি ভূষণ বলেন, আগের রায়ে যে বলা হয়েছিল মসজিদ ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ নয় তার প্রেক্ষিত ছিল জনস্বার্থে সরকারের জমি অধিগ্রহণ করার অধিকার। তিনি জানিয়ে দেন যে আগের রায়ের সঙ্গে অযোধ্যার চূড়ান্ত রায়ের কোনও সম্পর্ক নেই সে জন্য নতুন করে কোনও বেঞ্চ গঠন করার প্রয়োজন নেই।

আগের রায়টি জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে দেওয়া হয়েছিল, তাই অযোধ্যা সম্পর্কিত কোনও বিচারে এর কোনও প্রভাব পড়বে না।

namaz_092418053328_0_093018054309.jpg১৯৯৪ সালে ইসমাইল ফারুকি মামলার রায়ে বলা হয় যে ইসলামে ধর্মাচরণের জন্য মসজিদ আবশ্যিক নয় (ছবি: পিটিআই)

অযোধ্যা জমি সংক্রান্ত বিবাদ নিয়ে তিন বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি চলতে থাকবে এবং তা  শুরু হবে ২৯ অক্টোবর।

যাই হোক, বিচারপতি আবদুল নাজির তাঁর সহ-বিচারপতিদের সঙ্গে একমত ছিলেন না এবং তিনি মনে করেন যে, মসজিদ সত্যিই ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ কিনা তা গভীর ভাবে বিশ্লেষণ করা দরকার এবং এটিকে সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানোর প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি বলেন যে যথাযথ ভাবে ধর্মীয় গ্রন্থগুলি পরীক্ষা না করেই ফারুকি মামলায় বলা হয়েছে একটি ধর্মের জন্য কোনটি অত্যাবশ্যকীয়। তাই বিষয়টি নতুন করে বিস্তারিত ভাবে পরীক্ষা করার প্রয়োজন আছে।

তিনি বলেন যে  এলাহাবাদ হাইকোর্ট ২০১০ সালে অযোধ্যা মামলার রায় দেওয়ার সময় ১৯৯৪ সালের রায়ের বিষয়টি উঠে এসেছিল এবং শিরুর মট্ মামলার রায়ও আনা উচিত।

সর্বোচ্চ আদালতের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ ১৯৯৪ সালে ডক্টর ইসমাইল ফারুকি মামলার শুনানিতে বলেছিলেন যে ইসলামীয় রীতি মানার ক্ষেত্রে মসজিদ অবিচ্ছেদ্য নয়। সেখানে বলা হয়েছিল যে, যে কোনও স্থানেই নামাজ পড়া যেতে পারে, এ জন্য মসজিদের প্রয়োজন নেই।

তখন বিতর্কিত সৌধ ঘিরে তাকা ৬৭.৭ একর জমি অধিগ্রহণকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন ফারুকি।

আশ্চর্যের কথা হল, সম্প্রতি বিজেপি-শাসিত হরিয়ানায় খোলা জায়গায় নমাজ পড়া নিয়ে সমস্যা হওয়া প্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টার বলেছেন উন্মুক্ত স্থানে নমাজ পড়ার কোনও প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র মসজিদেই নমাজ পড়তে হবে।

ওই রায় অযোধ্যা মামলা নতুন করে শুরু করার পথ খুলে দিয়েছে এবং সেই মামলার রায় বার হতে পারে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে।

babri-copy_080718040_093018054341.jpgএখন কী অবস্থা: বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ফলে হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের বড় অংশকে টানার যে স্বপ্ন বিজেপি দেখেছিল তা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হচ্ছে (পিটিআই)

নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইস্তেহারেই রামমন্দিরের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বসে আছে, অযোধ্যা মামলা নিয়ে রাজনীতিই আসন্ন দিনগুলিকে সরগরম করতে পারে।

রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাবরি মসজিদ পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হল সামাজিক বন্ধনের পরিবর্তন।

হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ চিরকালই ছিল তবে সেই ধ্বংস এবং তার পরবর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রাজনৈতিক আলোচনায় জাতিভেদের বদলে সাম্প্রদায়িকতাই উঠে আসে।

বিজেপিও সফল ভাবে জাতপাতের উপরে নির্ভর করে মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টি ও লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দলকে ছাপিয়ে যায়।

এত দিনে সমস্ত হিন্দু ভোটকে সঙ্ঘবদ্ধ করার স্বপ্ন সেই রাজনৈতিক দলের পূরণ হতে চলেছে।

২০০৪ সালে এবং তারপরে আবার ২০০৯ সালে কংগ্রেসের কাছে পরাজিত হয়ে বিজেপি আবার ‘হিন্দু হৃদয়ের সম্রাট’ হওয়ার দিকে এগোয়, নরেন্দ্র মোদী আবার সেই দলকে ক্ষমতায় ফেরান।

কাউকে সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তুলে না ধরে ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের ময়দানে নেমে দলের হিন্দুত্বের জাজ্বল্যমান মুখ যোগী আদিত্যনাথকে অপ্রয়োজনীয় করে রেখে এবং তার পরে জিতে আবার তাঁকেই ওই রাজ্যের সরকারের প্রধান করে দেয়।

যা ভাবা হয়েছিল সেই পথে হেঁটেই বিজেপির সভাপতি অমিত শাহের প্রকাশিত নির্বাচনের ইস্তেহার ‘লোক কল্যাণ পত্র’তে রামমন্দির প্রসঙ্গ ছিল।

bjp-manifesto_092718_093018054410.jpgমন্দির ওহিঁ বনায়েঙ্গে: বিজেপির রাজনৈতিক ইস্তেহারের একটা অংশই হল রামমন্দির (ছবি: পিটিআই)

লাভ জিহাদ এবং গোরক্ষার কথা প্রচার করে কৈরানায় উচ্চগ্রামে প্রচার করেছিল বিজেপি, তাতে লাভ হয়নি।

তাই চার বছর ধরে যে রাজনৈতিক প্রেক্ষিত তারা তৈরি করেছিল তা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে বিজেপি।

২০১৪ সালের সেই ‘আচ্ছে দিনে’র প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে গিয়ে এখন দলটিকে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ সামলাতে হচ্ছে, চাকরি নেই এবং রাজনৈতিক আত্মহত্যার সামিল হয়েছে মূল্যবৃদ্ধি।

কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তারা যে সব অভিযোগ করেছিল, সেগুলোই ঘুরে আসছে।

সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বিজেপি দিয়েছিল, আবার সেই প্রতিশ্রুতিতেই তারা ফিরে যাচ্ছে, তবে জম্মু-কাশ্মীরে পিডিপির সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গড়ার সময় তারা এই প্রতিশ্রুতিকে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল।

সম্ভবত এই ইস্যুটিকে আবার সামনে নিয়ে আসার প্রয়োজন হয়েছে বুঝেই ২০১৮ সালে তৈরি হওয়া সাপেনেউলে জোট থেকে তারা বেরিয়ে আসে।

দেশের পক্ষে যা কিছু খারাপ সেই সব কিছুর জন্য নেহরু ও গান্ধী পরিবারকে দোষ দিয়ে যে আর সুবিধা হচ্ছে না তা তারা বুঝতে পারছে।

সরকারের সাফল্য নিয়ে খুব সম্ভবত একটি তালিকা প্রকাশ করবে নরেন্দ্র মোদী সরকার, তবে এই তালিকা প্রকাশ করা ক্রমেই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আগে বলেছিলেন যে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য পাঁচ বছর সময় যথেষ্ট নয়, তাই মোদী সরকার নতুন করে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে ফেলেছে, তবে নির্বাচকরা আর এই টোপ গিলছেন না।

রাজনৈতিক দুর্গ বলে যে হিন্দু ভোটের কথা তারা ভাবছিল বিরেধীদের একজোট হলে যে তা আর থাকবে না এবং মোদীও আর দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরবেন না সে কথা বুঝতে পেরেছ বিজেপি।

যে আসনটিতে জয়ী হয়ে সাংসদ হয়েছিলেন বিজেপির হুকুম সিং সেই কৈরানায় ২০১৭ সালে উপনির্বাচনে পরাজয় এবং গোরক্ষপুর ও ফুলপুর আসন, যে দু’টি আসন ছেড়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী, সেই দুই আসনে সংযুক্ত জোটের কাছে পরাজিত হয়ে বিজেপি বুঝতে পেরেছে যে তারা পিছিয়ে পড়ছে, হিন্দু আবেগ দিয়ে আর কাজ হবে না।

তফসিলি জাতি-উপজাতি ও অনগ্রসর শ্রেণী ও মুসলমান ভোট এককাট্টা হয়ে যাওয়া বিজেপির কাছে দুঃস্বপ্নের সামিল।

অযোধ্যা নিয়ে রায়ও যদি তাদের পক্ষেই যায় তা হলে তা নরেন্দ্র মোদীর উপরে আরও একটা বড় আঘাত, কারণ তারা বিরোধীদের, বিশেষ করে কংগ্রেসকে সংখ্যালঘু তোষণ করা নিয়ে দোষ দিয়ে এসেছে।

অযোধ্যায় আস্থাই হল দলটির ঘোষিত অবস্থান, সেই রাজনৈতিক বিশ্বাস এখনও নষ্ট হয়ে যায়নি।

rahul-gandhi-shiv-bh_093018054458.jpgএখন রাহুল গান্ধীর নরম হিন্দুত্বের চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হচ্ছে বিজেপিকে (ছবি: পিটিআই)

শিবভক্ত হিসাবে আচমকা উদয় হওয়া ‘পৈতাধারী’ রাহুল গান্ধীও ক্রমেই হিন্দুত্ব ভোটের ভিত পোক্ত করতে চাইছেন, এই অবস্থায় বিজেপিও জবরদস্ত কিছু একটা চাই হিন্দু আবেগকে উস্কানি দেওয়ার জন্য।

হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টায় বিজেপির নেতারা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করে দিয়েছেন যে অযোধ্যা নিয়ে রায় যদি পক্ষে না যায় তা হলে দরকারে তারা অর্ডিন্যান্স জারি করে দেবেন।

সুপ্রিমকোর্ট যদি দ্রুত রায় দেওয়ার পথ প্রশস্ত করে রামমন্দির নিয়ে রাজনীতিও তুঙ্গে উঠবে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SAIF ULLAH KHAN SAIF ULLAH KHAN @saifizm

Deputy Editor, DailyO

Comment