বর্তমান রাজনীতি ও সুভাষচন্দ্র বসু: বিজেপির শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, সিপিএমের দাবি ও কংগ্রেসের অস্বস্তি

এ বার পাঠ্যপুস্তকে বদল চায় সিপিএম, তা হলে সত্যিকারের ইতিহাস কোনটা ?

 |   Long-form |   04-12-2018
  • Total Shares

পশ্চিমবঙ্গের সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক চরিত্র প্রশ্নাতীত ভাবেই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। দেশে যতদিন ছিলেন ততদিন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন এবং লালকেল্লায় আজাদ হিন্দ ফৌজের বিচার তাঁকে শ্রদ্ধা ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে লর্ড ওয়াভেল তো কলকাতায় এক সাক্ষাৎকারে বলেওছিলেন যে সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের কথা ভারতের মানুষ জেনে যাওয়ার পরে তাঁদের পক্ষে আর ভারতে শাসন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

তাঁকে পরের প্রশ্নটি করা হয়েছিল, ভারতের স্বাধীনতায় গান্ধীজির ভারতছাড়ো আন্দোলনের প্রভাব নিয়ে। উত্তরে তিনি একটিমাত্র শব্দ বলেছিলেন: ‘মি-নি-ম্যাল’। কিন্তু এই কথোপকথের প্রচার সে ভাবে নেই, পাঠ্যপুস্তকে এ কথা থাকবে তা কষ্টকল্পনা।

সুভাষচন্দ্র বসুর মহানিষ্ক্রমণ এবং অন্তর্ধান তাঁকে কিংবন্তীর আসনে বসিয়েছে। তবে কমিউনিস্টরা প্রথম থেকেই তাঁর অবদান অস্বীকার করেছেন এমনকি দলীয় মুখপাত্রে তাঁকে ‘তোজোর কুকুর’ বলতেও তাদের বাধেনি। হিদেকি তোজো ছিলেন ইম্পেরিয়াল জাপানিজ আর্মির জেনারেল। একই সঙ্গে তিনি ইম্পেরিয়াল রুল অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধানও ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান থেকেই সুভাষচন্দ্র বসু ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও পরিচালনা করেছিলেন।

bosetojo_120418031044.jpgসুভাষচন্দ্র বসু ও হিদেকি তোজো

সেই সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনকে (২৩ জানুয়ারি) দেশপ্রেম দিবস হিসাবে ঘোষণা করার দাবি করছে সিপিএম। ফরওয়ার্ড ব্লকই অবশ্য সবার আগে এই দাবি করতে শুরু করে। তবে তাদের এই দাবিতে কোনও দিনই গুরুত্ব দেয়নি অন্য বামদলগুলো। কেন্দ্রে একাধিক বার তাদের বন্ধু সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সিপিআই কেন্দ্রীয় সরকারের শরিক হওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত। তখনও ফরওয়ার্ড ব্লকের এই দাবিতে গুরুত্ব দেয়নি বাম দলগুলি। এমনকি সুভাষচন্দ্র বসু সংক্রান্ত কোনও ফাইলও প্রকাশ করেনি ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত শাসনকালে।

সুভাষচন্দ্র বসু ফরওয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা পরে রাজনৈতিক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। বাম আমলেই ধীরে ধীরে গুরুত্ব কমছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের। এখন এ রাজ্যে তাদের প্রকৃত অস্তিত্ব কী তা বলা মুশকিল।

নজর ঘোরানো যাক কেন্দ্রের দিকে। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান নিয়ে প্রচার তুঙ্গে ওঠে। প্রচারে উঠে আসে সর্দার সরোবর ও বিশ্বের সবচেয়ে বড় মূর্তির কথা। কংগ্রেসের ভোটে জিতে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল বল্লভভাই প্যাটেলেরই। কিন্তু মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর ইচ্ছায় প্রধানমন্ত্রী হন জওহরলাল নেহরু। তার পরে ব্যতিক্রমটুকু ছাড়া পুরো কংগ্রেস জমানায় প্রধানমন্ত্রী হয়েছে হয় তাঁর পরিবার থেকে, না হয় তাঁর পরিবারের ইচ্ছায়। এই সব যুক্তির পরে কংগ্রেস আমলে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন হয়নি বলে প্রচার শুরু করে বিজেপি।

patel_120418031136.jpegবল্লভভাই প্যাটেলের অবদান বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে স্ট্যাচু অফ ইউনিটির ভাবনা (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)

২০১৪ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারি প্রায় সমস্ত প্রকল্পই ছিল নেহরু-গান্ধী পরিবারের নামে। সাধারণ চিঠি পাঠানোর প্রায় সব ডাকটিকিটও (ডেফিনিটিভ পোস্টেজ স্ট্যাম্প) ছিল মহাত্মা-ইন্দিরা-নেহরু-রাজীবের ছবি দেওয়া। দুই কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী ও নরসিমহা রাওয়েরও কোনও স্বীকৃতি ছিল না কংগ্রেসি আমলে (অর্থনৈতিক উদারীকরণেও মনমোহন সিংয়ের নাম যে ভাবে করা হয়, নরসিমহা রাওয়ের নাম সে ভাবে করা হয় না)।  জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পরে লালবাহাদুর শাস্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হন এবং তাসখন্দে তাঁর মৃত্যু হয়। রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পরে প্রধানমন্ত্রী হন পিভি নরসিমহা রাও।

ভোটের বাজারে বেশ কিছুদিন ধরেই বিজেপি অভিযোগ করে আসছে, গান্ধী পরিবার কংগ্রেসের অন্য নেতাদের মর্যাদা দেয়নি। এই অভিযোগকে পুরোপুরি মিথ্যা বলা যায় না। কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এই পরিবারই কংগ্রেসের সভাপতিত্ব করেছে। কোনও যোগ্য বর্ষীয়ান নেতা পুরো পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য সেই সুযোগ পাননি। এটাকেও ইস্যু করেছে বিজেপি।

সর্দার প্যাটেলকে নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করছে – এমন অভিযোগ করলেও কোনও দিনই কংগ্রেস বলতে পারেনি কী ভাবে তারা প্যাটেলের মর্যাদা দিয়েছে বা কেন তাঁকে তারা মর্যাদা দেয়নি। এই অবস্থায় আচমকাই রীতি ভেঙে লালকেল্লায় পতাকা তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, দেশের ‘প্রথম প্রধানমন্ত্রী’ নেতাজির সুভাষচন্দ্র বসুকে স্মরণ করে। ভারতের একাংশকে ব্রিটিশদের দখলমুক্ত করে সেখানে প্রথম পতাকা তুলেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুই।

cellular_120418031158.jpgসেলুলার জেল পরিদর্শন করছেন সুভাষচন্দ্র বসু

সুভাষচন্দ্র বসুর অবদানকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বীকৃতি দেওয়ায় এ রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলি পড়ল মহা সমস্যায়। কারণ শুধু বাংলায় নয়, ভারতেই সুভাষচন্দ্র বসু খুব বড় ইস্যু। যদি এমন একটি পরিস্থিতি কল্পনা করা যায় যে মোদী সরকার বিদেশ থেকে নেতাজি সংক্রান্ত সব ফাইল আনিয়ে তা প্রকাশ করে দেখিয়ে দিল যে সুভাষচন্দ্রের অন্তর্ধানের নেপথ্যে গান্ধী পরিবারের কেউ ছিলেন তা হলে ভোটের ফল কী হবে বলা মুশকিল। সে কথা নরেন্দ্র মোদী খুব ভালো ভাবেই জানেন। বিশেষ করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা আপাতত যাচ্ছে না।

গোপন নথি প্রকাশ করা অনেক সময় সম্ভব হয় না আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিচার করে। এই অবস্থায় আন্দামানের সেলুলার জেলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলনের ৭৫ বছর পূর্তিকে বেছে নেন বিজেপি নেতা তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই দিন রীতি ভেঙে পতাকা তোলেন লালকেল্লায় (শুধুমাত্র স্বাধীনতা দিবসেই লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী)। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নেতাজির পরিবারের সদস্য চন্দ্রকুমার বসু (চন্দ্রকুমার বসু বিজেপির প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন)। কার্যত দিনটিকে তিনি প্রথম স্বাধীনতা দিবসের মর্যাদা দিয়েছেন।

এর পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নাম করে প্রচার করে দেয় বিজেপি। সেই সরকারকে কোন সাতটি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছিল সেই প্রচারও শুরু করে দেয়।

award_120418031237.jpgনেতাজির নামে জাতীয় পুরস্কার চালু করে তা প্রদান করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)

এমন অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া সিপিএম দাবি করছে যাতে সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনকে দেশপ্রেম দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয় এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের কথা পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একটি দল যখনই কারও রাজনৈতিক উত্তরাধিকার দাবি করে তাঁর অবদানকে স্বীকৃতি দিচ্ছে তখনই রাজনৈতিক লাভের জন্য তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে অন্য দলগুলি, এটাই আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি।

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে পাশে রেখে এ রাজ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বচরন্দ্র বিদ্যাসাগর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষুদিরাম বসু প্রমুখের উত্তরাধিকার যখন বিজেপি নিতে গেছে তখন কেউ অত মাথা ঘামায়নি। কারণ তাতে রাজনৈতিক ভাবে কারও লাভ-ক্ষতি কিছুই ছিল না। তবে বিজেপি যখন সুভাষচন্দ্র বসুকে মর্যাদা দিতে শুরু করল এবং সমস্ত প্রথা ভেঙে লালকেল্লায় শ্রদ্ধা জানাল, তখন অন্য দলগুলোরও টনক নড়ল।

নরেন্দ্র মোদীর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনও দল টুঁশব্দটি করতে পারল না। কারণ এখনও ভারতের রাজনীতিতে নেতাজির যা ভার তা অন্য কোনও নেতা-স্বাধীনতা সংগ্রামী-দেশনায়কের নেই। খারাপ কথায়, ভোটের বাজারে নেতাজিকে নিয়ে বাঙালি তথা ভারতীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে যে রিটার্ন পাওয়া যাবে, অন্য কাউকে ভাঙিয়ে তা পাওয়া যাবে না। তাই সিপিএমও দাবি করে বসল পাঠ্যপুস্তক সংশোধন-সংযোজন করার, পাঠ্যপুস্তকে আজাদ হিন্দ ফৌজের গৌরবময় অধ্যায় সংযুক্ত করার।

আমার প্রশ্ন এখানেই।

কোন ইতিহাস সত্য আর কোন ইতিহাস মিথ্যা সেটি কে বিচার করবে? কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই পংক্তি মনে পড়ে যায়, ইতিহাসের পাতায় তোমরা পড় কেবল মিথ্যে, বিদেশীরা ভুল বোঝাতে চায় তোমাদেরই চিত্তে...

রাজ্যে বামফ্রন্টের শাসনকালের বছর বারোর মাথায় পঞ্চম শ্রেণীর ইতিহাস থেকে বাবর-হুমায়ুন-আকবরদের সরিয়ে দিয়ে, তার বদলে চলে আসেন মার্কস, লেনিন, এঙ্গেলেসরা। তাঁদের মাহাত্ম্যের পাশাপাশি লেখা হয় হিটলারের অত্যাচারের কথা। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জায়গা কমে যায়। যদিও ডিরোজিওদের কথা সেখানে ছিল। মানে আগে পড়ানো হত ইংরেজদের লেখা ইতিহাস, পরে বিপ্লব-রেনেসাঁ-কমিউনিজমের সমর্থকদের লেখা ইতিহাস।

রাজনৈতিক পালা বদলের সঙ্গে পাঠ্যপুস্তকেরও পরিবর্তন ঘটে। চিরকাল ইতিহাস রচনা করেছেন বিজয়ীরাই, আগে সমরাঙ্গনে জয়ীরা ইতিহাস লিখতেন, এখন লেখেন ভোটযুদ্ধে জয়ীরা। তাই রাজ্যের রং লাল থেকে নীলসাদা হওয়াতেও পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন হয়েছে। দেশের ক্ষেত্রেও সেই ধারা রয়েছে।

nehrugandhi_120418031343.jpgমহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহরু: কংগ্রেস এঁদের বাইরে কাউকেই স্বীকৃতি দেয়নি বলে সরব বিজেপি

পরের প্রশ্ন, ইতিহাস কোনটা?

সিংহল থেকে প্রাপ্ত বৌদ্ধ শাস্ত্রের ফরাসি অনুকবাদের কথা পড়ে অশোক নামে এক রাজার কথা জেনেছিলেন অতীতহীন ভারত ভূখন্ডের বিদেশি শাসকের আধিকারিকরা। তারপরে মাটি খুঁড়ে বার হতে থাকে ইতিহাস। জানা যায় সিন্ধু সভ্যতার কথা। সারা বিশ্বে আফ্রিকা থেকে মানুষ ছড়িয়ে পড়লেও সিন্ধু সভ্যতায় আর্যরা এসেছিলেন ইউরোপ থেকে। এ কথা বিশ্বাস করলে আপনি ম্যাকলে পদ্ধতির প্রডাক্ট, বিশ্বাস না করে উল্টো কথা বললে, মানে সভ্যতাটি স্থানীয় মানুষের তৈরি, আপনি হয়তো বেশি মাত্রায় জাতীয়তাবাদী। আজকাল ইন্টারনেটে এমন তথ্য ঘুরছে যে মানুষ নাকি ভিন গ্রহ থেকে পৃথিবীতে এসেছে, তারা এলিয়েন। সেখানে হয়তো জায়গা ছিল না।

ম্যাকলে নীতির অনুসারী এবং স্বাধীনতার পর থেকে মাঝের কয়েকটি স্বল্প মেয়াদ ও বাজেপেয়ী জমানা বাদ দিলে দেশের ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস তাদের মতো করে ইতিহাস রচনা করেছে যেখানে চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষচন্দ্র বসু, ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ, ক্ষুদিরাম বসু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলদের কথা বলা নেই বা নামমাত্র উল্লেখ আছে। সেখানে গান্ধী-নেহরু কী করেছেন সেটাই রয়েছে।

কংগ্রেসের ইতিহাসে রয়েছে দেশভাগের ব্যথায় গান্ধীজির অনশনের কথা, বিজেপি লিখবে কী ভাবে পঞ্চাব ও বাংলার একাংশ পাকিস্তান থেকে কেটে বারতে রেখেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। কংগ্রেসের ইতিহাসে রয়েছে কোন ভাবনা থেকে দেশে রাশিয়ার ধাঁচে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা চালু করেছিলেন জওহরলাল, বিজেপি লিখবে তী ভাবে ৬৮৪টি দেশীয় রাজ্যের বেশিরভাগকে মূল ভারত ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন সর্দার প্যাটেল। কংগ্রেসের ইতিহাসে রয়েছে গান্ধীজির ভারতছাড়ো আন্দোলনের কথা, বিজেপি এবার চাইছে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের মহানিষ্ক্রমণ থেকে দেশের জন্য আত্মবলিদানের কথা। কংগ্রেস এতদিন বলেছে কী ভাবে নাথুরাম গডসের গুলিতে গান্ধীর মৃত্যু হয়েছিল, বিজেপি এখন বলবে ১৯৪৬ সালে ডায়রেক্ট অ্যাকশন ডে-তে গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংয়ের কথা।

এর পাশাপাশি দেশ গঠনে আরএসএসের অবদান, সাভারকরের বীরত্বও প্রচার করবে। রাজনৈতিক কারণে অবশ্য সাভারকরের অবদানকে গৌরবান্বিত করার বিরোধিতা আবার কোনও দল নাও করতে পারে!

greatcalcuttakilling_120418032043.jpgগ্রেট ক্যালকাটা কিলিংয়ের কথা এ রাজ্যে বলে না কোনও দলই

সত্যিকারের ইতিহাস রচনা করা সম্ভব। ঐতিহাসিক নিদর্শন, সময়ের সঙ্গে সব ধরনের পরিবর্তন (আবহাওয়া পরিবর্তন-সহ) এবং বিবর্তন বিশ্লেষণ করে সেই ইতিহাস লেখা সম্ভব। আধুনিক ইতিহাস রচনার জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হল মহাফেজখানাগুলিতে রক্ষিত নথি ও ছবির বিশ্লেষণ করা – অবশ্যই যে কোনও ধরনের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে।

শাসক বদলালে ইতিহাস বদলায়, সিপিএম চাইছে নেতাজির কথা লেখার সময় বিজেপি যেন একক কৃতিত্ব দাবি করতে না পারে।

তা হলে ইতিহাস কোনটা? যাঁরা আগ্রহী তাঁরা মহাফেজখানায় চিঠিচাপাটি খুলে, সরকারি আদেশনামা পড়ে সত্যটা খোঁজার চেষ্টা করুন। কারণ রবীন্দ্রনাথ অনেক দিন আগেই বলে গেছেন, যা ঘটে তা সত্য নহে/ কবি, তব মনভূমি রামের জন্মভূমি/ অযোধ্যার চেয়ে সত্য বলে জেন...

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment