মরুভূমিতে ঝড় উঠছে: বুথফেরত সমীক্ষার ফল অনুযায়ী ক্ষমতা দখল করছে কংগ্রেস
ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া সমীক্ষায় ২০০ আসনের রাজস্থানে ১৬৩ থেকে ৫৫-৭২-এ নামছে বিজেপি
- Total Shares
দ্য ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া বুথফেরৎ সমীক্ষায় মনে করা হচ্ছে রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল আসনে জয়ী হতে চলেছে কংগ্রেস, ২০০ আসনের বিধানসভায় তারা পেতে পারে ১১৯ থেকে ১৪১টি আসন।
এই সমীক্ষায় মনে করা হচ্ছে যে বিজেপি পেতে পারকে বড়জোর ৫৫ থেকে ৭২টি আসন – ২০১৩ সালে তারা ১৬৩টি আসনে জিতেছিল, তাই বিজেপির পক্ষে এই ফল অত্যন্ত খারাপ।
এই রাজ্যে যে সব রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা কম, তাদের মধ্যে বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) ১-৩ টি আসন এবং অন্য দলগুলি ৩ থেকে ৮টি আসন পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
কোন কোন ব্যাপার বিজেপির বিরুদ্ধে গেল?
যে দল ক্ষমতায় থাকে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার একটা রীতি রয়েছে রাজস্থানে, আর বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী এ বারে মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া প্রবল ছিল। অন্য অনেকে তো বটেই, বিজেপির দলীয় কর্মীরা পর্যন্ত বলছেন যে তিনি অত্যন্ত ‘উদ্ধত’ এবং তাঁর কাছে পৌঁছানোই ‘দুষ্কর’ হয়ে পড়েছিল।
এ রাজ্যে বিজেপির প্রধান ভোটব্যাঙ্ক যে রাজপুতরা তারাও নানা কারণে বিরক্ত, এর মধ্যে রয়েছে পদ্মাবৎ নিয়ে হইচই এবং গ্যাংস্টার আনন্দপাল সিংয়ের সঙ্গে গুলির লড়াই, সর্বোপরি কয়েকমাস আগেই রাজ্য বিজেপির প্রধানের পদ থেকে সরানো হয়েছে রাজপুত নেতা গজেন্দ্র শেখাওয়াতকে।
এ ছাড়াও বিগত কয়েক বছর ধরেই অভূতপূর্ব ভাবে কৃষি-সমস্যায় জর্জরিত হয়েছে রাজস্থান।
শুধুমাত্র এ বছর এপ্রিল-মে মাসেই রাজস্থানে পাঁচজন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। সমাধান হিসাবে ঋণ মকুবের কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার এবং ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার – অনেকেই বলছেন যে এটি যথেষ্ট নয়। কংগ্রেস এটিকেই ভোটের অস্ত্র করেছে এবং এই অস্ত্র দিয়েই নানা ভাবে সরকারকে আক্রমণ করছে।
আরেকটা বড় কারণ হল বেকারত্ব নিয়ে সরকারের প্রতি বিরক্তি।
২০১৩ সালে ১৫ লক্ষ কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বসুন্ধরা রাজে, চার বছর পরে রাজ্যে ২০-২৯ বছর ব.সীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫৫ শতাংশ, স্নাতক পাস করেও বেকার রয়েছেন রাজ্যের ১৪ শতাংশ।
রাজের সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে – সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল খনি দুর্নীতি।
এ ছাড়াও বিজেপির অন্দরেও বসুন্ধরা রাজে খুব একটা জনপ্রিয় নন, অনেক সময়ই তাঁর সঙ্গে অমিত শাহের দ্বন্দ্ব সংবাদ শিরোনামে এসেছে।
বিজেপির কর্মী-সহ অনেকেই মনে করেন যে রাজে উদ্ধত এবং তাঁর কাছে পৌঁছানোই দুষ্কর (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)
আরেকটি ব্যাপার হল এ রাজ্যে সংরক্ষণ নিয়ে চিরকালীন প্রতিযোগিতা। ঐতিহ্যগত ভাবে গুজ্জররা বিজেপিকেই ভোট দিয়ে আসছে। বর্তমানে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য যে সংরক্ষণ রয়েছে তার মধ্যেই গুজ্জরদের জায়গা করে দিয়ে তাঁদের দীর্ঘগদিনের দাবি মেটানোর চেষ্টা করেছেন বসুন্ধরা রাজে। তবে তার পরেও গুজ্জররা মনে করছে যে তাদের দাবি পুরোপুরি মেটেনি, আবার দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর সুযোগ-সুবিধা ভোট করা জাটদের সংরক্ষণেও থাবা পড়েছে।
কংগ্রেসের সুবিধা
যে কয়েকটা মাত্র রাজ্যে এখনও রাজ্যস্তরে কংগ্রেসের ভালো নেতৃত্ব রয়েছে তার মধ্যে রাজস্থান অন্যতম, আর এবার তারা যথেষ্ট ভাবেই লড়াই করেছে।
রাজ্যে তৃণমূল স্তর থেকে দলকে শক্তিশালী করার জন্য ভীষণ পরি শ্রম করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সচিন পাইলট, এ বছর জানুয়ারি মাসের উপনির্বাচনে তার ফলও ফলতে দেখা গেছে।
কংগ্রেস তার সর্বশক্তি দিয়ে সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে প্রচার করেছে, ছোট শহরগুলিতে গিয়েও কৃষিতে সঙ্কট ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রচার করেছে।
পাইলট ও গেহলটের মধ্যে আপাত ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও কংগ্রেস মোটামুটি ভাবে ঐক্যবদ্ধ ভাবেই লড়াই করেছে (ছবি: পিটিআই)
খুব চাতুর্যের সঙ্গেই জাতপাতের তাস খেলেছে কংগ্রেস – তারা রাজপুতদের ক্ষোভকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে তবে এমন ভাবে যাতে অন্য কোনও তাদের উপরে ক্ষেপে না ওঠে। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে পাইলট গুজ্জর বলে তাঁকে তারা ভাবী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তুসলে ধরেনি, কারণ তাতে আবার জাটরা হতাশ হতে পারত।
সচিন পাইলট ও অশোক গেহলটের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যেই ফুটে উঠেছে, কিন্তু কার পরেও দল সেই দ্বন্দ্বকে ঢেকে রাখতে অনেকটাই সফল হয়েছে।
যদিও বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল যে ভোটের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কংগ্রেসে বিশৃঙ্খলা দেখা গিয়েছিল।
যখন প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া প্রবল তখন বসুন্ধরা রাজের গৌরবযাত্রা এবং অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা তাতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিতে পেরেছে। আরএসএস-ও রাজের প্রতি তাদের বিরক্তি অনেকটাই রেখেঢেকে রাখতে পেরেছিল, ঘটনা হল তৃণমূলস্তরে নির্বাচনী প্রচারে তারা সহায়তাও করেছিল।
যদি বুথফেরত সমীক্ষার ফলে বিশ্বাস করা যায় তা হলে বলতে হবে যে লম্বা শীত কাটিয়ে অনেক অনেক দিন পরে এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে চলেছে কংগ্রেস।
যদি না রাজ্যে ইতিহাস সৃষ্টি করেন।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে