তরুণরা যখন নির্বাচনী ‘জুমলা’: কেন সচিন ও জ্যোতিরাদিত্য দায়িত্ব পেলেন না

যদি অনভিজ্ঞ রাহুল গান্ধী দলের হাল ধরতে পারেন তাহলে অন্যরা নন কেন?

 |  4-minute read |   15-12-2018
  • Total Shares

মধ্যপ্রদেশের সর্বোচ্চ পদের জন্য সাতচল্লিশ বছর বয়সী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার চেয়ে বেশি গুরুদ্ব দেওয়া হয়েছে বাহাত্তর বছর বয়সী কমল নাথকে। রাজস্থানেও ৪১ বছর বয়সী সচিন পাইলটের বদলে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ৬৭ বছরের অশোক গেহলটকে পছন্দ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী।

দেশের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দলকে তরুণদের দল হিসাবে দেখিয়ে আসা হচ্ছিল – আরেকটু এগিয়ে বলতে গেলে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের নেতৃত্বের ভার দেওয়া হচ্ছিল তরুণদের হাতে।

শোনা যাচ্ছে, অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করেই সিন্ধিয়ার বদলে কমল নাথকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যে দলের নেতৃত্ব রয়েছে ভারতের কোনও একটি রাজ্যেও একা হাতে সংগঠন তৈরির কোনও রকম অভিজ্ঞতা না থাকা ৪৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তির হাতে, তিনি এখন তারুণ্যের উদ্দীপনাকে ছাপিয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন অভিজ্ঞতাকে – একে বিশ্বাসের অপলাপ ছাড়া আর কী-ই বা বলা যেতে পারে?

scindia-690_12141803_121518071740.jpgশোনা যাচ্ছে, অভিজ্ঞতার কথা ভেবেই জ্যোতিরাদিত্যের বদলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কমল নাথকে (উৎস: পিটিআই)

রাজস্থানের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।

সচিন পাইলটকে উপেক্ষা করা হয়েছে, যদিও তিনি রাজস্থানের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তৃণমূল স্তর থেকে দলের কাজ করে চলেছেন।

গুজ্জর সম্প্রদায় সচিন পাইলটকে সর্বতো ভাবে সমর্থন করেছেন তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী পদটি রাহুল গান্ধী দিয়েছেন অশোক গেহলটকে – এ ভাবে একটা ব্যাপার রাহুল গান্ধী স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এই দলকে তরুণদের দল হিসাবে তুলে ধরা ফাঁকা আওয়াজ – কংগ্রেসের ‘জুমলা’ ছাড়া কিছুই নয় – যার মাধ্যমে তারা তরুণদের সমর্থন জোগাড় করেছে।

দেশের তরুণরা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি মাত্রায় রাজনীতি সচেতন। তাঁরা যে শুধু মাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন তর্ক-বিতর্কে যোগ দিচ্ছেন তা নয়, তাঁরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সংহত।

  • ভারতের নগর ও গ্রামের পথেঘাটে এখন ২০-র আশপাশে যাদের বয়স তাদের প্রাধান্যই বেশি। দেশের অর্ধেক নাগরিকের বয়স ২৫ বছরের কম এবং এক-তৃতীয়াংশ নাগরিকের বয়স এখন ৩৫-এর কম।

আ ২০১৭ ব্লুমবার্গ নিউজ অ্যানালিসিস থেকে জানা যাচ্ছে যে ২০২৭ সাল নাগাদ কর্মীসংখ্যার বিচারে ভারত থাকবে বিশ্বের এক নম্বরে।

youth-690_1214180320_121518071814.jpgদেশের অর্ধেকের বেশি নাগরিকের বয়স ২৫ বছরের কম (উৎস: পিটিআই)

রাহুল গান্ধী হয়তো ভারতের সম্বন্ধে এই তথ্যটি ঠিকমতো জানেন না, তবে ভারতে তরুণদের গুরুত্বের বিষয়টি তিনি অবশ্যই বোঝেন। বিভিন্ন সভায় এ নিয়ে তাঁকে প্রায়শই বলতে শোনা যায়।

  • তা হলে তিনি নেতৃত্বের দায়িত্ব তাঁদের হাতে তুলে দিতে কুণ্ঠা বোধ করলেন কেন?

যদি অনভিজ্ঞ রাহুল গান্ধী দলের সর্বোচ্চ দায়িত্ব হাতে তুলে নিতে পারেন এবং ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে কাজ শিখতে পারেন তা হলে তা দলের অন্যদের ক্ষেত্রে হবে না কেন? বিশেষ এমন একজন যাঁর রেকর্ড দলের সভাপতির চেয়ে অনেক ভালো?

তা হলে কি তরুণ তুর্কীদের ব্যাপারে রাহুল গান্ধী নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন? তাঁর কি শুধুই মনে হয় যে দলে তাঁর অবিসংবাদী ক্ষমতাকে তাঁরা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসতে পারেন আর সে জন্যই তিনি তাঁদের আগেভাগে আটকে দিতে চাইছেন – যিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন?

সচিন ও জ্যোতিরাদিত্য দু’জনেই তাঁদের বাবা রাজেশ পাইলট ও মাধরবাও সিন্ধিয়াকে দেখেছন নিরলস ভাবে কাজ করতে, রাহুলের বাবা রাজীব গান্ধীর চেয়ে অনেক বেশি করে।

তাঁরা নিজেদের রাজ্যে কাজ করেছেন কংগ্রেস দলকে আরও শক্তপোক্ত করতে, দল দল তাঁদের জন্য যেটুকু দিয়েছে তা সম্বল করেই তাঁরা এ কাজ করেছেন। এখন কেন রাহুলের মনে হচ্ছে না যে তাঁরা আরও বড় দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট অভিজ্ঞ নন?

  • সচিন পাইলটকে তাঁর প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে পাইলট যে সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি সেই সম্প্রদায়কে অসন্তুষ্ট করার ঝুঁকি রাহুল গান্ধী নিয়ে ফেলেছেন, রাজস্থানে তাঁদের সংখ্যা মোটামুটি ৬০ লক্ষ।
  • এবং জ্যোতিরাদিত্যকে যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বঞ্চিত করা হল সেই রাজ্যে তরুণদের হার মোট জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশ।

gehlot-690_121418032_121518071913.jpgপ্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিসর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে কঠোর পরিশ্রম করেছেন সচিন পাইলট (উৎস: পিটিআই)

তা হলে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ও সচিন পাইলট রাহুলের অনুগামী হিসাবে লোকসভায় যাবেন এবং রাহুল যখন কিছু বলবেন তখন তাঁরা সাংসদদের শান্ত রাখার চেষ্টা করে যাবেন আর রাহুল যখন চোখ মারবেন বা জড়িয়ে ধরবেন তখন তাঁরা তাঁর হয়ে সাফাই দিয়ে যাবেন? তাঁরা কি কোনও দিনই কংগ্রেস সভাপতি পদে বসতে চাইবেন না?

অথবা বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে বেশে তারুণ্যে ভরা গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী হতে চাইবেন না?

jyoti-690_1214180328_121518071945.jpgসংসদে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া হলেন রাহুল গান্ধীর ছায়াসঙ্গী (উৎস: পিটিআই)

দলের তরুণরা দ্বিতীয় স্তরেই থেকে যান, রাহুল গান্ধী কি এটাই নিশ্চিত করতে চাইছেন?

এখন সারা বিশ্ব আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জন্য কর্মসংস্থান কমে যাওয়া, সাইবার নিরাপত্তা, অনন্য যৌন আবেদন প্রকাশ করা, সাইবার-টেররিজমের মতো নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। কংগ্রেস ও বিজেপি দুই দলের কথাই বলছি – এই সব দলে যে সব প্রবীণ দলকে প্রাচীরের মতো রক্ষা করার চেষ্টা করেন, এই সব নতুন নতুন সমস্যা সম্বন্ধে তাঁদের খুব একটা ধারনা নেই – আর এ সব নিয়ে কিছু করার ব্যাপারে তাঁদের খুব একটা চিন্তাভাবনাও নেই।

কারও ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতার ভাবের জন্য এই সব নতুন নতুন সমস্যার কোনও সমাধান কি আমরা কোনওদিনও পাব না? এটাই আমাদের দেশের পক্ষে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

VANDANA VANDANA @vandana5

Author is a Delhi-based journalist.

Comment