নিজের ভাবমূর্তিতে নিজেই বন্দি ইমরান খান, তাই ভারতের সেরা বাজি তো তিনিই

ইমরান মসনদে রয়েছেন মানে পাকিস্তানে উদ্বেগ পরিস্থিতি কায়েম থাকবে, ভারতকে কোনও সিদ্ধান্তই নিতে হবে না

 |  4-minute read |   23-01-2019
  • Total Shares

বছর কয়েক আগে এক ব্যাক্তিগত আলাপচারিতায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর এক প্রাক্তন আধিকারিক আমাকে জানিয়েছিলেন, দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উপযুক্ত প্রধানমন্ত্রী কে হতে পারেন - ইমরান খান নাকি নওয়াজ শরিফ কিংবা আসিফ আলী জারদারির মতো পুরোনো মুখ - তা নিয়ে তিনি বেশ দ্বিধাগ্রস্ত।

উত্তরে আমি তাঁকে জানালাম যে ভারতীয় হিসেবে আমার ইমরানকেই পছন্দ। সেনাবাহিনীর সেই আধিকারিককে আর বলে দিতে হল না যে আমার এই চিন্তাভাবনা উৎস কোথায়।

body_012319030146.jpgনিজের ভাবমূর্তিতে নিজেই বন্দি ইমরান খান [ছবি: রয়টার্স]

যুক্তরাষ্ট্র থেকে শিক্ষা নেওয়া যাক

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরানের যোগ্যতা নিয়ে আমার সেই অতিথির মনে যথেষ্ট ছিল। তাই সেদিন তিনি আমার বক্তব্যকে বিশেষ গুরত্ব দেননি। কিন্তু এখন পাকিস্তানের মসনদে বসেছেন ইমরান খান। আর, তার সঙ্গে সঙ্গে, আমি আরও নিশ্চিত হয়েছি যে ভারতের পক্ষে এর চাইতে ভালো আর কিছুই হতে পারত না, যদিও তা উল্টোদিক থেকে।

ইমরানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া ভারতের জন্য ভালো খবর নয়। কারণ তিনি শুধুমাত্রই পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাতের পুতুল। ইমরান প্রধানমন্ত্রী হওয়া মানে আমরা স্বচক্ষে দেখে চলেছি তাই আমরা পেতে চলেছি। কিন্তু তাঁর পূর্বসূরিরা কী দিচ্ছেন সে বিষয় নিশ্চিত ছিলেন না।উল্টোদিকে, কী পেতে চলেছি সে বিষয় নিশ্চিত ছিলাম না আমরাও।

এই তত্ত্বকথা শুনতে যতটা ভালো লাগে, কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে এই তত্ত্ব ততটা জোরালো নয়।

কারণ পাকিস্তানের মসনদে যেই থাকুক না কেন সম্পর্কটা চিরকালই সাপে নেউলে থেকে যাবে।

গত দু'দশক ধরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবিরত লড়াই চালিয়ে এই সার সত্যতা কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র উপলব্ধি করতে পেরেছে।

পাকিস্তানের নেতারা যুক্তরাষ্ট্র বারংবার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং প্রতিবারই যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের পিছনে ছুরি মেরেছেন।

মনে রাখবেন কোনও দিনও কোনও 'হাতের পুতুলের' সঙ্গে কথা বলেনি যুক্তরাষ্ট্র। দে দেশের নেতারা সরাসরি দেশের তৎকালীন নেতাদের সঙ্গে কথা বলতেন। এর পরেও তাঁদের ভাগ্যে লবডঙ্কা জুটেছিল।

পাকিস্তান থেকে বেশ কিছু উদ্দেশ্য পূরণ করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাই ভারতের থেকেও সে দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক সম্পর্ক অনেক বেশ মজবুত ছিল।

কিন্তু, এর পরেও, যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু পাকিস্তানের কাছ থেকে তাদের চাহিদা উদ্ধার করতে পারেনি।

আর, এহেন পরিস্থিতি, ভারতীয়রা মনে করছে যে শুধুমাত্র পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি বা সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করতে পারলেই দু'দেশের সম্পর্ক আবার মধুর হয়ে উঠবে। বুঝতে হবে পাকিস্তানের লোকেরা কিন্তু ভারতকে ঘৃণা করে, বিশেষ করে ভারতের হিন্দুদের।

সম্প্রতি, যুক্তরাস্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে কিছু কথা বার্তা আদানপ্রদান হয়েছে। পাকিস্তানের মানসিকতা যে বদলেছে তা নয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাও চেষ্টা করে চলেছে। ভারতের ক্ষেত্রে কিন্তু তৃণমূল স্তরে পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। এমনকি, দু'দেশের সীমান্ত সংক্রান্ত অচলবস্থাগুলোও একই রকম রয়ে গিয়েছে।

আলোচনার নামে প্রহসন

এটা সত্যি যে সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা শুরু করেছে পাকিস্তান।

ভারত মনে করছে যে বর্তমানে পাকিস্তান যে দুর্বল পরিস্থিতিতে রয়েছে। এই ধারণা মোটেও সত্যি নয়। সাধারণত যখন কোনও দুর্বল পক্ষ আলোচনা শুরু করে তখন ধরে নেওয়া যায় সেই আলোচনা থেকে শক্তিশালী পক্ষ লাভবান হয়। কিন্তু ভারত পাক সম্পর্কের মজাটাই যে অন্যরকম। এখানে দুর্বল পক্ষ আলোচনা শুরু করলেও কোনও রকম সমঝোতায় যেতে রাজি হয় না। উল্টোদিকে, শক্তিশালী পক্ষের কাছে এই আলোচনাগুলো অপ্রাসঙ্গিক রয়ে যায় কারণ সেই পক্ষ কোনও মতেই সমঝোতায় রাজি থাকে না।

এর মানে, দুর্বল পক্ষ শুধুমাত্র 'বাজিয়ে দেখার' উদ্দেশ্যেই শক্তিশালী পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে চায়। ভারত সরকারও তো এই কথা বাস্তবে মেনেও নেয়। সম্প্রতি, বিদেশ মন্ত্রক দপ্তরের মুখপাত্র জানিয়েছেন সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পাকিস্তান এখনও প্রতারণা করে চলেছে।

body1_012319030355.jpgতিনি তো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রক্সি প্রধানমন্ত্রী [সৌজন্যে: টুইটার]

পরবর্তী স্ট্রাটেজি

সুতারং, যতক্ষণ বাস্তবে পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন ঘটছে না ততক্ষন পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করে কোনও লাভ হবে না।

এই পরিবর্তন ঘটানোর জন্য এক হয় আমাদের কিছু করতে হবে নয়ত কিছু একটা ঘটার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হবে।

ভারত যেহেতু আগ বাড়িয়ে কিছু করবে না তাই আমাদের পাকিস্তানের উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে।

আর, এই জায়গাতেই ইমরান খানকে আমাদের 'সেরা পছন্দ' বলে মনে করা হচ্ছে।

বিগত ছ'মাসে ইমরান খানের মধ্যে একাধিক চরিত্রের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তিনি ক্রমাগত বিরোধীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে আসছেন অথচ প্রশাসনিক সূক্ষ্ম বুদ্ধি প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি জনপ্রিয় এবং জনদরদী হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন কিন্তু পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য কোনও পরিকল্পনা তিনি নিতে পারেননি।

তিনি নিজের ভাবমূর্তিতে নিজেই বন্দি হয়ে রয়েছেন। নিজের করা কটূক্তির ও নিজের প্রতিহিংসাপরায়ণতার শিকার তিনি নিজেই হয়েছেন। তাঁর দেওয়া বড় বড় প্রতিশ্রুতিতে তিনি নিজেই জামিনবন্দি হয়ে রয়েছেন।

তিনি এমন একটা পুতুল যাঁকে নিয়ে বেশিদিন খেলা করা সম্ভব নয়, আবার যাঁকে খেলা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়াও সম্ভব নয়।

ইমরানকে সরাতে না পারলে দ্রুত পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। ইমরানকে সরিয়ে দেওয়া মানে ক্ষমতা দখল করে নেওয়া কিন্তু তার পরিণাম ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।

ইমরান খান যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন পাকিস্তান জুড়ে উদ্বেগ কায়েম থাকবে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের উচিত অপেক্ষা করা। যখন কোনও সমাধান সূত্র দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না, বা বলা ভালো সমাধান সূত্র নেই, তখন ধৈর্য্য ধরে নিজের শক্তি বৃদ্ধির উপর মনোনিবেশ করা উচিত। যতক্ষণ পর্যন্ত কিছু না হারিয়েই নিজের চাহিদা পূরণ করা যায় ততক্ষন পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত।

(সৌজন্যে: মেল টুডে)

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUSHANT SAREEN SUSHANT SAREEN @sushant sareen

The writer is a strategic affairs analyst and a Pakistan expert

Comment