ইমরান খান আলাদা। ভোটে যাঁরা তাঁর দলের টিকিট পাননি, তাঁরাই বলছেন

ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেন, বিশ্রাম প্রায় নেন না

 |  6-minute read |   05-02-2019
  • Total Shares

জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্ত মানুষজনের সঙ্গে যখনই আমি কথা বলেছি তখনই সেই ব্যাপারে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছি, তাঁদের লক্ষ্য করেছি ও তাঁদের বোঝার চেষ্টা করেছি, এবং কখনোই নিজের পছন্দ-অপছন্দের কোনও প্রভাব এর উপরে পড়তে দেয়নি। আমার কাছে এ সব ব্যাপার ছিল অতীব সহজ-সরল: নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছেন বিভিন্ন পদে আসীন হয়েছেন, যাঁরা নিজস্ব ঢঙে কাজ করেন এবং যাঁরা সৎভাবে দেশের সেবা করতে চান ও মৌলিক ক্ষেত্রগুলিকে পরিবর্তিত করতে চান এবং সব দিকের বিচারে পাকিস্তানকে সত্যিকারের স্থিতিশীল পথে আনতে চান, একজন পাকিস্তানি হিসাবে কোনও দিনই এই সব বিষয়ে আমার আগ্রহের কোনও অন্ত ছিল না।

আমি পাকিস্তানের রাজনৈতিক গতিধারা দেখে অবাক হয়ে যাই – কত ভিন্ন ধরনের সরকার এখানে কাজ করেছে, ছোট ছোট ক্ষেত্র থেকে শুরু করে সার্বিক পরিবর্তনের জন্য তাঁরা কী ধরনের স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেছেন দেশের অর্থনীতি, পরিকাঠামো, অভ্যন্তরীণ ও বিদেশনীতি এবং সরারকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করার মতো বড় ধরনের পদক্ষেপের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবনের পরিবর্তন ঘটে এমন সব পদক্ষেপ দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই।

তবে শেষ পাঁচ মাসে যে সব পরিবর্তন হয়েছে সেগুলিকে ব্যতিক্রমী ও এক অর্থে অসমঞ্জসও বলা চলে। অনেককিছুই ভালো হয়েছে। শুরুটা হয়েছিল যখন ইমরান খান দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন। তখন অনেক কিছু বদলেও গেল।

pakistan-inside_0203_020519090926.jpgপাকিস্তানের রাজনৈতিক পটভূমিতে শেষ পর্যন্ত অনেক বদলই হল। (ছবি: রয়টার্স)

পঞ্চাবে পিটিআই (পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ) সরকারের এক মন্ত্রীর    কাছে শুনেছিলাম: “আমাদের সম্বন্ধে ভালো ভালো লেখার জন্য আমরা সাংবাদিকদের টাকাপয়সা দিই না, জন্য আমরা বিজ্ঞাপন দিই না, সেই জন্য আমরা যে সব ভালো কাজ করছি সে সব তুলে ধরার ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের বেশ অনীহা রয়েছে। সত্যি কথা বলতে কী, এ সবে আমরা একেবারেই গুরুত্ব দিই না। আমরা কাজ করতে এসেছি। কেপিতেও (খাইবার-পাখতুনখোয়া) একই ভাবে কাজ হচ্ছে; চিরকাল ধরে প্রচার করে আসা হচ্ছে যে কেপিতে কোনও কাজই হয়নি, আর এই কথাটা একেবারেই অসত্য। আমরা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে চলেছি, জয় আমাদের হবেই, ইনশাআল্লা (ঈশ্বরের কৃপায়)। গত তিরিশ বছর ধরে যে সব সমস্যা তৈরি হয়েছে আমরা যদি সেই সব সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করি তা হলে সে সব কাজ করার জন্য পাঁচ বছর যথেষ্ট সময়।”

পঞ্চাব সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের একজন উচ্চপদস্থ মহিলা আধিকারিক বলেন, “আমার পুরো কর্মজীবনে কোনও দিন এমনটা ঘটতে দেখিনি। আমাদের কার্যালয়ের একেবারে উপরতলা থেকে একেবারে নীচের তলা পর্যন্ত নিরীক্ষা করা (অডিট) হয়েছে আমার মনে হয়েছে যাঁরা ওই পুরোনো পন্থায় কাজ করে অভ্যস্থ তাঁরা এই ব্যবস্থায় মোটেই খুশি নন। কোনও সরকার যে তার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের দায়িত্বগুলি পালনের উপরে জোর দিচ্ছে এটা দেখেও ভালো লাগছে, তবে যেটা দুর্ভাগ্যজনক হল, পঞ্চাবে পিটিআই সরকার এ সবের মধ্যে নেই, অন্তত এখনও পর্যন্ত।” পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটিতে কাজ করা উচ্চপদস্থ এক আধিকারিক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নির্দেশ অনুযায়ী, অসামরিক নন এমন সাতজনের একটি দলকে নিয়োগ করেছেন। লোকসান করতে করতে এই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন প্রায় ভেঙে পড়ছিল। এই আধিকারিকরা কোনও বিভাগের প্রধান নন, কিন্তু তাঁরা এই প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত হওয়ায় তাঁরা তাঁদের দক্ষতা-অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করছেন। তাঁরা এই প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক, যাতায়াত বা অন্য কোনও সুযোগসুবিধা পান না, ছোট খাটো ব্যাপার – চা প্রভৃতির জন্য তাঁরা নিজের পকেট থেকেই খরচা করেন। যাতে এই নিগমটি আধুনিক হয়ে উঠতে পারে, লাভের মুখ দেখতে পারে এবং হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারে সে জন্য নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে।”

 

যাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল তাঁর বয়স এখন মোটামুটি মধ্য তিরিশ, ইতিমধ্যেই তিনি তিনজন প্রধানমন্ত্রীর জমানায় কাজ করে ফেলেছেন – ২০০৮ থেকে ২০১৮-র মধ্যে ইউসুফ রাজা গিলানি, নওয়াজ শরিফ ও শাহিদ খোকন আব্বাসি – এবং এখন তিনি কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের জমানায়। তিনি কোনও পরামর্শদাতাও নন বা কোনও মন্ত্রীও নন, ব্যক্তিগত আলাপচারিতার সময় ছোটোবেলার এক বন্ধুকে তিনি বলছিলেন যে, “আমি যে সব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করেছি তাঁদের মধ্যে ইমরান খানই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি শুধুমাত্র কাজই বোঝেন, এমন একজন প্রধানমন্ত্রীই দরকার। তিনি খুব সকালে কাজ শুরু করে দেন, বিশ্রাম প্রায় নেনই না এবং অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করেন। তিনি কাজ করেন না শুধুমাত্র জুহর, আসার ও মগ্রিবের নমাজের সময়। পুরো সচিবালয় তাঁর হাতের মুঠোয়: সারা দিন ধরেই তিনি একের পর এক বৈঠক করেন ও কাজের হিসাব নিতে থাকেন, ছুটির দিনও বাদ যায় না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কাজের চাপ বেড়েছে। এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রীকে দেখছি যিনি প্রকৃত অর্থেই প্রধানমন্ত্রীর করণীয় কাজগুলি করেন। শাহিদ খোকন আব্বাসি সম্ভবত আরেক জন প্রধানমন্ত্রী যিনি কাজ বুঝতেন আর কাজ নিয়ে যাঁর সবচেয়ে কম মাথাব্যথা ছিল তিনি হলেন নওয়াজ শরিফ। তাঁর ঘনিষ্ঠ লোকজনই তাঁর কার্যালয় চালাতেন, তিনি খুব সম্ভবত কিছুই করতেন না।”

একাধারে অন্ত্রেপ্রেনর, এটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও প্রযোজক বলেন, তিনি দুর্দান্ত ভাবে নিজেকে বারে বারে প্রমাণ করেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে, তা সে ক্রিকেটের ময়দান হোক, মানুষের ভালোবাসা হোক বা রাজনীতির ময়দান হোক – তিনি নির্ভীক, প্রশ্নাতীত দেশপ্রেম এবং সাধারণ মানুষের মঙ্গলের জন্য যে নজিরবিহীন কাজ করেছেন তাতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর উপরে আস্থা রাখার যথেষ্ট কারণ আছে এবং নতুন পাকিস্তান তৈরি হবে রিয়াসৎ-ই-মদিনার মূল ভাবের উপরে ভিত্তি করে।”

এক পিটিআই রাজনীতিক, যিনি ২০১৩ সালের নির্বাচনে পিটিআই-এর হয়ে ভোটে লড়ে হেরেছিলেন এবং ২০১৮ সালের ভোটে লড়ার টিকিট না পেয়ে বেশ হতাশ, তিনি বলেন, সবচেয়ে উৎসাহব্যঞ্জক হল এই প্রথম কোনও নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সরকার কঠিন ও জনমোহিনী নয় এমন সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং সমর্থন হারানোর ভয় করছে না। তাঁরা ভুল সংশোধন করে দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। আরেকটা পার্থক্য হল, ব্যক্তিগত আলাপচারিতার সময় দেখছি মন্ত্রীরা বেশ আশাবাদী ও খুশি কারণ তাঁদের কাজ করে দেখানোর পরিসর দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী তবে প্রতিদানে তিনিও কাজ চাইছেন। মন্ত্রিসভার সদস্যরা মনে করছেন যে বর্তমানে দেশের যে বিশ্রী অর্থনৈতিক অবস্থা রয়েছে সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, ইমরান খান কাজের মানুষ। কাজটি যতই কঠিন হোক না কেন বা যত দিনই সময় লাগুক না কেন, তিনি কখনও লক্ষ্যভ্রষ্ট হন না। সংক্ষেপে তাঁর ও তাঁর কাজ সম্পর্কে এ কথাই এখন বলতে পারি।”

imran-khan_020319125_020519091120.jpgযুদ্ধকালীন তৎপরতা: পুরো সচিবালয় তাঁর হাতের মুঠোয়, তিনি প্রতিদিন এমনকি ছুটির দিনেও বৈঠক করেন ও কাজের হিসাব চান। (ছবি: রয়টার্স)

সীমিত সংখ্যক শব্দের মধ্যে এই প্রবন্ধটি লেখার জন্য আমি মাত্র কয়েকজনের কথা উল্লেখ করলাম। এমন আরও অনেকে আছেন। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারের প্রথম কয়েক মাসে আমি যে ব্যাপারটা লক্ষ করলাম তা হল: যে দেশ নানা ধরনের কঠিন সমস্যায় জর্জরিত সেই দেশেই স্বনির্ভর, আত্মবিশ্বাসী, উন্নতিশীল ও প্রাণবন্ত পাকিস্তান তৈরি করার জন্য যাঁরা খেটে খাওয়া মানুষ, যাঁরা নীতিনির্ধারণকারী, যাঁরা দূরদর্শী তাঁদের সকলের মধ্যেই এক অভূতপূর্ব ইতিবাচক ও আশাবাদী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এটাই হল দীর্ঘ মেয়াদী পরিবর্তনের জন্য অল্পসময়ে ফুটে ওঠা প্রতিচ্ছবি।

পিটিআই সাংসদ, পরামর্শদাতা ও মন্ত্রী – যাঁরা দীর্ঘদিন দলের হয়ে কাজ করে আসছেন এবং ইমরান খানকে জানেন এবং তাঁর দর্শন, আদর্শ এবং পাকিস্তানের ভালোর জন্য তিনি কী ভাবছেন, সে কথা উপলব্ধি করতে পারেন এবং বৃহত্তম সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি রক্ষা করার দায়িত্ব যাঁদের উপরে তিনি সঁপেছেন, যাঁরা সরকারি নয় এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত নন তাঁরা সকলের মধ্যে এখন একটি সাধারণ মিল তৈরি হয়েছে: একটি বারের জন্য তাঁরা এক পথের পথিক হয়েছেন। পাকিস্তানের মঙ্গলের জন্য এখন তাঁরা ঐক্যবদ্ধ, নিবেদিত প্রাণ, অবিচল, আগ্রহী, অনুভূতিপ্রবণ এবং সর্বান্তকরণে একনিষ্ট, তাঁরা সেই ইমরান খানের নেতৃত্ব ও দর্শনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল যে প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র পাকিস্তানের এবং পাকিস্তানই যাঁর ধ্যানজ্ঞান।

ইমরানের খান একই নীতিতে কাজ করেন।

পাকিস্তানের মঙ্গলের ব্যাপারে আমার সদাসর্বদা সমর্থন রয়েছে এবং এ জন্য ইমরান খান ও পারিষদদের পাশে আমি পূর্ণ ভাবে রয়েছি। সবই পাকিস্তানের জন্য। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করব এবং ঐক্যবদ্ধ ভাবেই জয়ী হব। ঈশ্বর কৃপা করুন।

লেখাটি পড়ুন  ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

MEHR TARAR MEHR TARAR @mehrtarar

A former op-ed editor of Daily Times, Pakistan, and a freelance columnist.

Comment