ভোটার তালিকা থেকে বাদ জ্বলা গুট্টার নাম: এই পরিস্থিতিতে আমরা কী করতে পারি
ভোটার তালিকায় নাম যোগ, বাদ ও সংশোধনের দায়িত্ব ইআরওদের, গাফিলতির শাস্তি তাঁরা প্রায় পানই না
- Total Shares
প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচনের সময় ভোটাররা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার সুযোগ পান।
ভোট দিতে গিয়ে যদি তারা আবিষ্কার করেন যে তাদের নাম ভোটার তালিকায় নেই, অর্থাৎ তাঁদের ভোটাধিকার নেই, তখন কী রকম উপলব্ধি হয়?
এই অভিজ্ঞতা যে শুধুমাত্র সাধারণ ভোটারদের ক্ষেত্রে হতে পারে এমনটা নয়। সেলিব্রিটিদেরও এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ৭ ডিসেম্বর এমনই অভিজ্ঞতা হল ভারতের জনপ্রিয় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় জ্বলা গুট্টার। বিশ্বমঞ্চে ভারতকে বারংবার গর্বিত করা এই ক্রীড়াবিদ সেদিন ভোট দিতে গিয়ে আবিষ্কার করলেন যে তাঁর ভোটাধিকার নেই।
সারা বছর ধরেই নির্বাচন কমিশন 'একটি ভোটের' গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের সচেতন করার চেষ্টা করে। কিন্তু সচেতনতা শিবিরে একবারের জন্যও বলা হয় না যে এই 'একটি ভোট' অনেক সময়েই কোনও কাজে আসে না। বরং, ক্ষিপ্ত ভোটারকে ভোটাধিকার হারিয়ে শুধুমাত্র একটি টুইট করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
[সৌজন্যে: ফেসবুক]
Surprised to see my name disappear from the voting list after checking online!! #whereismyvote
— Gutta Jwala (@Guttajwala) December 7, 2018
How’s the election fair...when names r mysteriously disappearing from the list!! ????????
— Gutta Jwala (@Guttajwala) December 7, 2018
গুট্টা জানিয়েছেন যে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার বিষয়টি তিনি নির্বাচনের দিন সকালে নির্বাচনী কেন্দ্রে পৌঁছানোর পরেই আবিষ্কার করেন।
গুট্টা তেলঙ্গনায় থাকেন। সেই রাজ্যে এ বছর ত্রিমুখী ভোট হচ্ছে। একদিকের রয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট (এই জোটে রয়েছে টিডিএস, টিজিএস ও সিপিআই)। অন্যদিকে, রয়েছে বিজেপি। রাজ্যের তৃতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী দল টিআরএস।
প্রথমে ঠিক ছিল আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু রাজ্যের মন্ত্রিসভার সুপারিশে ৬ সেপ্টেম্বর অকালেই বিধানসভা মুলতুবি করে দেওয়া হয়।
দুর্ভাগ্যবশত, গুট্টাই একমাত্র ভোটার নন যাকে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই এধরণের অভিযোগ শোনা যায়।
ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল বরুন ধাওয়ানের নামও [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
Spent more than an hour trying to find my name on the voters list but no luck! Any suggestions? Still have 5 more hours. I don't give up. pic.twitter.com/FNRRwsfimT
— Sanjeev Kapoor (@SanjeevKapoor) February 21, 2017
২০১৭ সালে বৃহৎ মুম্বই পুর নিগম (বিএমসি) নির্বাচন চলাকালীন প্রচুর বলিউড সেলিব্রিটির নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল।
এদের মধ্যে অন্যতম অভিনেতা বরুণ ধাওয়ান।
সেলিব্রিটি শেফ সঞ্জীব কাপূরও ২০১৭ সালের নির্বাচনের সময়ে তাঁর নাম ভোটার তালিকায় খুঁজে পাননি।
কিছু ভুলভ্রান্তি বা নেহাতই সরকারি বাবুদের গাফিলতির জন্য এই সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হয়। আর, তার ফল ভোগ করতে হয় ভোটারদের যারা বছরের পর বছর নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে মুখিয়ে থাকেন।
ভারতে ভোটার তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া কিন্তু অনেক সময়তেই রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়েছে যে শাসক দল টিআরএস, এআইএমএম ও কংগ্রেসের যৌথ চক্রান্তে হায়দরাবাদের ১৫টি বিধানসভা আসনের ভোটার তালিকায় জোর করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে এই বিষয় তদন্তের দাবিও জানানো হয়েছে।
যদি দেখা যায় যে অভিযোগ সত্যি এবং সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা (ইআরও) ইচ্ছাকৃত ভাবে এই নাম নথিভুক্ত করেছে তাহলে সংশ্লিষ্ট আধিকারীদের আইনানুযায়ী বরখাস্তও করা যেতে পারে। ভোটার তালিকায় নাম তোলা, বাদ দেওয়া বা ভুলভ্রান্তি ঠিক করার দায়িত্ব এই ইআরওদের।
সবক্ষেত্রেই যে ইআরওদের সাজা দেওয়া হয় এমনটা নয়। কিন্তু যে ভোটারদের নাম তাদের ভুলে বাদ গেল সেই ভোটারদের পরবর্তী ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে আরও পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হয়।
এটা কি গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা নয়? এটা কি ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা নয়?
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে