ঘরের শত্রু বিভীষণদের জন্যই কর্নাটকে বিজেপির এই পরিণতি

দলের একাংশ ইয়েদ্যুরাপ্পাকে বলির পাঁঠা করে ২০১৯ ভোটে সহানুভূতি কুড়োতে চাইছে

 |  3-minute read |   20-05-2018
  • Total Shares

"আমি দলীয় রাজনীতি করি না। আমি মানুষের জন্য রাজনীতি করি। তাই আমি অপমানিত বোধ করছি।"

শনিবার কর্নাটক বিধানসভায় দাঁড়িয়ে কথাগুলি বললেন বিএস ইয়েদ্যুরাপ্পা। আস্থা ভোটের আগেই পদত্যাগ করেছেন তিনি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য শুধুমাত্র বিরোধীদের উদ্দেশ্যে নয়, বরঞ্চ বিজেপি শিবিরে তাঁর সমালোচকদের লক্ষ্য করেও এই মন্তব্য তিনি করেছেন। গত এপ্রিলে আমি কর্নাটক সফরে গিয়েছিলাম। সেই সময় ইয়েদ্যুরাপ্পার এক ঘনিষ্ঠ আমাকে বিজেপির রাজ্য কমিটির অন্দরমহলের একটি খবর দিয়েছিলেন।

বিজেপির সেই ব্যক্তি আমাকে বলেছিলেন, "বিজেপি শিবিরের একটি অংশই চায় না যে বিজেপি ৯০টির বেশি আসন পাক। তাঁরা ভয় পাচ্ছেন যে বিজেপি একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গেলে ইয়েদ্যুরাপ্পা এতটাই ক্ষমতাশালী হয়ে যাবেন যে মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তিনিই আবার দলকেও নিয়ন্ত্রণ করবেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর ঘনিষ্ট শোভা করন্দলাজেকে দলের মাথায় বসাতেন তিনি। ইয়েদ্যুরাপ্পাকে কোনও ভাবেই কর্নাটক রাজনীতিতে সর্বশক্তিমান হতে দিতে নারাজ দলের মধ্যে তাঁর বিরোধীরা।"

এর পরের কয়েকটি ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে ষড়যন্ত্র সত্যি সত্যিই সংঘটিত হয়েছে। বিওয়াই বিজয়েন্দ্রকে বরুণা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী না করে দলের লিঙ্গায়ত ভোটব্যাঙ্ককে ক্ষিপ্ত করে তোলা হয়েছিল। অনেকেই মনে করছেন, ইয়েদ্যুরাপ্পাকে শিক্ষা দিতেই তাঁর বিরুদ্ধগোষ্ঠী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাও এমন একটা সময় যখন দলের তৃণমূল স্তরের নেতৃত্ব কিন্তু বরুণা কেন্দ্র থেকে বিজয়েন্দ্রকে প্রার্থী করবার জন্য আর্জি জানিয়েছিল। ইয়েদ্যুরাপ্পাকে নিজের মতো করে রাজ্য বিজেপিকে পরিচালনা করতে দেওয়া হয়নি বলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা অভিযোগ তুলেছেন।

এই মতবিরোধকে ধামাচাপা দিয়ে নরেন্দ্র মোদীর প্রচার দিয়ে বাজিমাত করতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু ইয়েদ্যুরাপ্পার শিবির এখন আফসোস করেছে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই বিজেপির আসন সংখ্যা ১৩০ ছুঁতে পারল না। ইয়েদ্যুরাপ্পা শিবিরের একজন জানালেন, "কিছু দলীয় নেতাদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্যই আজ বিজেপির এই হাল। খনি দুর্নীতির দুই প্রধান অভিযুক্ত রেড্ডি ভাতৃদ্বয়কে নিয়ে একের পর এক অপপ্রচার হয়ে গেল। কিন্তু তাঁরা নির্বাচনে কোনও ভাবেই অংশগ্রহণ করেননি। আমার তো মনে হয় তাঁরা অংশগ্রহণ করলেই বিজেপি আরও ভালো করতে পারত।"

বিজেপির ১০৪টি আসনে আটকে যাওয়ার প্রধান কারণ আত্মতুষ্টি ও জেলা স্তরের নেতাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। ইয়েদ্যুরাপ্পার শিবির থেকে দাবি করা হয়েছে যে বিজেপি প্রার্থী বাছাই করতেও ভুল করেছে। তাই ১৬জন বিদায়ী বিধায়ক এ বছর বিধাসভা নির্বাচনে হেরেছেন। ইয়েদ্যুরাপ্পার আরও এক ঘনিষ্ট মনে করিয়ে দিলেন, "১৬ জন বিদায়ী বিধায়ক জিততে পারলে আমাদের আসন সংখ্যা কিন্তু ১২০ তে পৌঁছে যেত।"

body_052018021417.jpgরাজনীতির স্মৃতিকথা লেখার সময় এখনও আসেনি ইয়েদ্যুরাপ্পার 

ইয়েদ্যুরাপ্পার শিবিরে আরও একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট ইয়েদ্যুরাপ্পা সরকারের সময়সীমা কমিয়ে দেওয়ার পর পার্টির তরফে প্ৰত্যেক কর্মী মন থেকে বিজেপি সরকার গঠনের চেষ্টা করেনি। সেই সুযোগে কংগ্রেস ও জেডি(এস) বিজেপি চোরাশিকারিদের আটকাতে সফল হয়েছে। উল্টে দলের একাংশ ইয়েদ্যুরাপ্পাকে বলির পাঁঠা করে ২০১৯ লোকসভা ভোটের জন্য মানুষের সহানুভূতি আদায় করতে চাইছে।

অথচ বিজেপির উচিৎ ছিল কংগ্রেসকে কর্নাটকে ক্ষমতাচ্যূত করে গোটা দেশে কংগ্রেসের সমস্ত এটিএম (পড়ুন ২০১৯ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী তহবিলের উৎস) বন্ধ করে দেওয়া। বিজেপি অবশ্য এখন মনে করছে যে এই নয়া স্ট্র্যাটেজি বেশি লাভজনক হবে কারণ এক্ষেত্রে কংগ্রেস এবং জেডিই(এস) জোটকে 'সুবিধাবাদী' বলে বিরোধিতা করতে পারবে বিজেপি।

এখন তাহলে ইয়েদ্যুরাপ্পা কী করবেন? তিনি তিল তিল করে কর্নাটকে বিজেপির সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর বয়স এখন ৭৫। কিন্তু গোটা রাজ্যজুড়ে তাঁর গ্রহণযোগ্যতার কথা মাথায় রেখে এই বয়েসেও তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করতে চেয়েছিল বিজেপি। তাই তো ইয়েদ্যুরাপ্পার আফসোসটাও বেশি। তিনি আন্দাজ করতে পারছেন যে রাজনীতিকে বিদায় জানানোর আগে তিনি হয়ত আর এই সুযোগ পাবেন না। শেষবার মাত্র দু'দিনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তিনি, অথচ তা কোনও গৌরবজনক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে নয়। নির্বাচিত বিধায়ক কেনাবেচা করে কোনওক্রমে ক্ষমতা দখল করতেই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন ইয়েদ্যুরাপ্পা - জনগণ তাঁর এই দু'দিনের সরকারকে এই ভাবেই আজীবন মনে রাখবে। কংগ্রেস একটি অডিও প্রকাশ করে প্রমাণ করতে চেয়েছে যে অডিওটিতে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে যে ইয়েদ্যুরাপ্পা এক বিধায়ককে প্রলোভন দেখিয়ে কিনতে চাইছেন। দাবি সত্যি হোক বা মিথ্যা, এই অডিও কিন্তু ইয়েদ্যুরাপ্পার ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।

৯৬ সালের বাজপেয়ীর মতো মতো ইয়েদ্যুরাপ্পাও তাঁর বিদায়ী ভাষণকে আবেপ্রবণ করবার চেষ্টা করেছেন। ইয়েদ্যুরাপ্পার নিশ্চয়ই মনে আছে যে ১৩দিনে বাজপেয়ী সরকারের পতনের দু'বছরের মধ্যেই আবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। এর মধ্যবর্তী সময় এইচডি দেবেগৌড়া দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন যাঁর পুত্র কুমারস্বামী ইয়েদ্যুরাপ্পার জায়গায় কর্নাটকের মসনদ দখল করলেন।

রাজনীতি অন্তঃপ্রাণ ইয়েদ্যুরাপ্পা। তাই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণা করবার সময় এখনও আসেনি।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

TS SUDHIR TS SUDHIR

The writer is a journalist.

Comment