নির্বাচিত প্রতিনিধি নিখোঁজ থেকে তাঁদের মহানিষ্ক্রমণ, কর্নাটকে নাটক হয়েই চলেছে

নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সেলফোনে ভয়েস রেকর্ডিং অ্যাপ ব্যবহার করবার পরামর্শ দিল কংগ্রেস

 |  3-minute read |   18-05-2018
  • Total Shares

বুধবার কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠকে হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত সব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকেই বারংবার একই প্রশ্নের সামনে পড়তে হয়েছে, তাঁরা কি কেউ বিজেপি শিবির থেকে কোনও রকম ইঙ্গিত পেয়েছেন? ১২ জন হাত তুলেছিলেন। এর পর কংগ্রেসের তরফে পরামর্শ দেওয়া হয় যে দলের নির্বাচিত বিধায়করা যেন তাঁদের সেলফোনে ভয়েস রেকর্ডিং অ্যাপ ব্যবহার করেন, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরণের ইঙ্গিতের তথ্যপ্রমাণ রেখে দেওয়া সম্ভব হয়।

কংগ্রেস শিবিরের দাবি, বিজেপি নেতা শ্রীরামুলুর এক প্রতিনিধি বৃহস্পতিবার এক নির্বাচিত কংগ্রেস প্রতিনিধির  সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু এই ফোনকল খুবই স্বল্পমেয়াদের ছিল। কল রেকর্ড করা হচ্ছে, এই আশঙ্কায় সেই বিধায়ক নাকি খুব শীঘ্রই ফোনটি কেটে দেন। অনেকেই মনে করছেন যে বেল্লরি গ্রুপকে কংগ্রেস বিধায়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই গ্রুপের প্রতিনিধিরা কংগ্রেসের পাতা ফাঁদের ব্যাপারে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তাই তাঁরা নাকি এখন কংগ্রেস বিধায়কদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের ফোন করছে। কংগ্রেসের দাবি, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের উপর চাপ সৃষ্টি করে নির্বাচিত কংগ্রেস প্রতিনিধিদের কংগ্রেস-জেডি(এস) জোট থেকে ভাঙিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

এর থেকে বোঝাই যাচ্ছে কর্নাটকে এখন কী ধরণের লুকোচুরি খেলা চলছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসকে আরও অস্বস্তিতে ফেলতে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বেঙ্গালুরুর শহরতলিতে অবস্থিত ঈগলটন রিসর্ট থেকে নিরাপত্তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এই রিসর্টে সদ্য নির্বাচিত কংগ্রেস জনপ্রতিনিধিকে রাখা হয়েছিল।

কোলার কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সাংসদ কেএইচ মুনিয়াপ্পা জানিয়েছেন, "একজন বিধায়কের সব সময়তেই নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এই অস্থায়ী সরকার নিজেদের খেয়ালখুশি মতো কাজ করে চলেছে। করতে দিন, এই সরকার পতন তো সময়ের অপেক্ষা।"

এরপর, বিএস ইয়েদ্যুরাপ্পা বেশ কয়েকজন আইপিএস অফিসারকে বদলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া গোয়েন্দা বিভাগে দু'জন নতুন অফিসারকে তিনি বদলি করেছেন যাতে রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি ভালোভাবে জানতে পারেন।

ঈগলটন রিসর্ট কর্নাটকের রামনগর জেলাতে অবস্থিত। রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী সেই রামনগর জেলার পুলিশ সুপারকে বদলি করে তাঁর পছন্দের এক অফিসারকে সেই পদে বসিয়েছেন।

এর আগে কংগ্রেসের পরিকল্পনা ছিল যে বিধায়কদের কোচি উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। কেরলের পর্যটনমন্ত্রী তো টুইটারে খোলা আমন্ত্রণও জানিয়ে রেখেছিলেন।

body_051818051616.jpgএই টুইট নিয়ে মজা শুরু হতেই তা সরিয়ে ফেলা হয়

কংগ্রেস শিবির থেকে দাবি করা হয়েছে যে তাদের ভাড়া করা চাটার্ড বিমান চক্রান্ত করে উড়তে দেয়নি বিজেপি। এই প্রসঙ্গে অসামরিক বিমান মন্ত্রী জয়ন্ত সিনহা টুইট করে জানিয়েছেন যে অভ্যন্তরীণ চাটার্ড বিমানের ক্ষেত্রে এ দেশের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ডিজিসিএর কোনও অনুমতি লাগে না। শুধুমাত্র, লোকাল এটিসির (এক্ষেত্রে বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরের) অনুমতিই যথেষ্ট।

কুমারস্বামী অভিযোগ জানিয়েছেন যে কংগ্রেস নেতা আনন্দ সিংকে তদন্তকারী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে রীতিমতো হুমকি দেওয়া হচ্ছে যাতে তিনি বিজেপিতে যোগদান করেন। আনন্দ সিং জানুয়ারি অবধি বিজেপিতেই ছিলেন। এরপর তিনি কংগ্রেসে যোগদান করেন এবং এবার কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচিত হন। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে তাঁকে দু'বার বেআইনি খনি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।

রায়চুড় জেলার প্রতাপ গৌড়া পাতিলও বিজেপি থেকে কংগ্রেসে যোগদান করেছিলেন। আপাতত তিনি নিখোঁজ। জেডিএসের তরফে দাবি করা হয়েছে যে রেড্ডি ভাতৃদ্বয় তাঁকে ফুসলিয়ে নিয়ে গেছেন। অন্যদিকে, কংগ্রেসের রাজ্য সচিব মধু গৌড় জানিয়েছেন যে ওই ব্যক্তি কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।

bus_051818113040_051818051826.jpgএই বাসেই যাত্রা করছেন লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের নির্বাচিত কংগ্রেস প্রতিনিধিরা 

কংগ্রেসের টিকিটে যে ১০জন লিঙ্গায়ত নির্বাচন জিতেছেন তাঁরাও নাকি বিজেপির চোরাশিকারের তালিকায় রয়েছেন। রাজ্যের ভোক্কালিগা-লিঙ্গায়ত ঝামেলাকে হাতিয়ার করে তাঁদের দলে টানতে চান বিজেপি। এ ক্ষেত্রে বিজেপির বাজি কংগ্রেস নেতা কুমারস্বামী স্বয়ং। কারণ তিনি নিজে ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি।

এত অভিযোগের পরেও বিজেপি কিন্তু স্বস্তিতে নেই। ইয়াদ্যুরাপ্পাকে বেশ নিশ্চিন্ত দেখালেও দলের এক বর্ষীয়ান নেতা কিন্তু স্বীকার করে নিয়েছেন যে বিধায়ক সংখ্যা নিজেদের অনুকূলে করতে পারাটা বিজেপির পক্ষে সহজ হবে না। বিজেপি শিবির ভয় পাচ্ছে এই ভাবে মরিয়া হয়ে বিধায়ক খুঁজতে নামলে তা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিতে পারে।

দক্ষিণ কর্নাটক বরাবরই ভোক্কালিগদের শক্ত ঘাঁটি। তাই দক্ষিণ কর্নাটকের বিজেপি নেতারা এখন থেকেই ২০১৯ নির্বাচন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

এই লেখাটা যখন লিখছি তখন কংগ্রেস জয়ী জনপ্রতিনিধিদের জন্য হায়দারাবাদের পার্ক হায়াত (বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা টি সুব্বিরামি রেড্ডি এই হোটেলটির কর্ণধার) ও তাজ কৃষ্ণ প্যালেস হোটেল ভাড়া করে ফেলেছে। পার্ক হায়াতে সানরাইজার্স হায়দারাবাদ দলটিও থাকে।

আইপিএল ও কেপিএল (কর্নাটক পলিটিকাল লিগ) মিলেমিশে এক হয়ে গেছে।

লেখাটা পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

TS SUDHIR TS SUDHIR

The writer is a journalist.

Comment