শিব-জায়া দুর্গার বাপেরবাড়ি এসে বিজেপির উপর চাপ বাড়াতে চাইছেন শিবভক্ত রাহুল গান্ধী
কলকাতায় পুজো-রাজনীতি যোগের শুরু ছয়ের দশকে, এই ক্যানভাসে অন্য রং লাগাতে চলেছেন কংগ্রেস সভাপতি
- Total Shares
কলকাতার দুর্গাপুজো এবং কালীপুজো অনেক বছর ধরেই রাজনীতিবিদদের কাছে মেগা ইভেন্ট।
বামপন্থীরা সরাসরি অবশ্য এই ইভেন্টে নামতে পারেনি। নীতিগত কারণে দুর্গাপুজো থেকে দূরে থাকলেও শারোদোৎসবে জনসংযোগের সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি। তাই দক্ষিণপন্থী দলগুলি বড়, মেজ বা সেজ নেতাদের পুজো প্রতিযোগিতার বাজারে নেমে পড়লেও, বহুদিন ধরে সেখানে বামেরা পুজো মণ্ডপ চত্বরে বামপন্থী সাহিত্যের দোকান খুলে জনসংযোগ বজায় রাখতে চেয়েছে। তবে, ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরে পুজোর সময় বামপন্থী সাহিত্যের স্টল এখন দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয়।
অন্যদিকে, পুজোর জাকঁজমকে দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের যোগ বহুকালের।
তবে এবার পুজোর সঙ্গে রাজনীতির রাসায়নিক সমীকরণ বদলে দিতে চলেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। শোনা যাচ্ছে, অষ্টমীর দিন রাহুল গান্ধী কলকাতায় আসবেন। কলেজ স্কোয়ারে দুর্গাপুজোর মণ্ডপে গিয়ে অষ্টমীর অঞ্জলিও দিতে পারেন। সেই গোটা দিনটা তাঁর কলকাতায় কাটানোর কথা। কলেজ স্কোয়ারের দুর্গাপুজো বকলমে প্রদেশ কংগ্রেসের বর্তমান সভাপতি 'সোমেন মিত্রর পুজো'।
ছ'য়ের দশকে কলকাতার পুজোর সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের শুরু।
পুজোর সঙ্গে রাজনীতির রাসায়নিক সমীকরণ বদলে দিতে চলেছেন কংগ্রেস সভাপতি [ছবি: পিটিআই]
তৎকালীন কংগ্রেস আমলে অবশ্য দলীয় রাজনৈতিক হেভিওয়েটদের ছত্রছায়ায় আশ্রিত তৎকালীন বাহুবলীরা কালীপূজোতেই মেতে থাকতেন। তাঁরা মনে করতেন সারা বছর তাঁরা যে শক্তি প্রদর্শন করে থাকেন তার সঙ্গে শক্তি আরাধনার যোগ রয়েছে। তাই কালীপুজো নিয়ে মেতে থাকতেন। পরবর্তীকালে, কলকাতায় হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতারা দুর্গাপুজো নিয়ে মেতে ওঠেন।
কলকাতার পুজোর এই চিরাচরিত ক্যানভাসে এবার রাহুল গান্ধী অন্য রং লাগাতে চলেছেন। গুজরাটে গত বিধানসভা নির্বাচন থেকেই রাহুল গান্ধী, যে মাঠে বিজেপি নিজেকে চ্যাম্পিয়ন মনে করে - সেই হিন্দুত্বের রাজনীতিতে - বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে শুরু করেছেন। গুজরাটের বিধানসভা নির্বাচনে অসংখ্য মঠ-মন্দির দর্শন করে বিজেপিকে অনেকটাই চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলেন রাহুল। এর পরে সম্প্রতি ছত্তিসগড়, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের আসন্ন বিধানসভা ভোট ও ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে মানস সরোবর থেকে শিবের পুজো দিয়ে বিজেপির উপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছেন।
কংগ্রেসও এখন রাহুল গান্ধীকে শিবভক্ত বলে হালকা প্রচার শুরু করেছে। এই অবস্থায় রাহুল গান্ধী শিব-জায়া দূর্গা অর্চনার সুযোগ হারাতে চাইছেন না। বিশেষ করে দূর্গা তথা উমার বাপের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে এসে বিজেপির উপর চাপ বাড়াতে চাইছেন। কারণ বিজেপির চোখ এখন এই রাজ্যে, এবং তারা ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি শুরু করেছে।
কংগ্রেসও এখন রাহুল গান্ধীকে শিবভক্ত বলে হালকা প্রচার শুরু করেছে [ছবি:পিটিআই]
অন্যদিকে, আরএসএস রাহুল গান্ধীর এই কৌশলকে ভোঁতা করতে রামমন্দির ইস্যুকে জোরদার করে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গত মঙ্গলবারই বিশ্ব হিন্দু পরিষদে সাধু-সন্তদের সম্মেলনে সংঘ প্রধান মোহন ভগবৎ যে কোনও মূল্যে রামমন্দিরতৈরি করার ডাক দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সরকারের অনেক বাধ্যবাধকতা থাকে যা সাধু-সন্তদের থাকে না। তাই তাদেরই রামমন্দির বানানোর ভার হাতে তুলে নিতে হবে।" রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে রাহুল গান্ধীর নয়া কৌশলের পালের হাওয়া কাটতেই আসরে নেমেছেন আরএসএস প্রধান।
ফলে, অষ্টমীর দিন রাহুল গান্ধী পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুজোর মণ্ডপে পা রাখার অন্তরালে রাজনীতির স্রোত দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই।