আগে সংখ্যালঘুদের ভাঁওতা দিয়েছেন, এখন বিজেপির পথ নিয়েছেন মমতা

বেকার বাড়লে শস্তায় শ্রম কেনে বেসরকারি সংস্থা, রাজ্যও সে ভাবে সিভিক পুলিশ-সিভিক টিচার নিচ্ছে

 |  4-minute read |   02-02-2019
  • Total Shares

রবিবার জনগণের ব্রিগেড। প্রথমেই জানাতে চাই যে এটি হল রিট্রাইাভ্যাল অফ দি ব্রিগেড লিগ্যাসি অ্যান্ড গ্লোরি, অর্থাৎ ব্রিগেডের সেই ঐতিহ্য ও গৌরব পুনরুদ্ধার করা। আর তা একমাত্র তখনই সম্ভব যখন মানুষের যে দাবি, মানুষকে নিয়ে সেই দাবি তুলে ধরা হবে।

cpi-msupporters_reut_020219030421.jpgঘুরে দাঁড়াতে চাইছে সিপিএম (উপস্থাপনামূলক ছবি: রয়টার্স)

দ্বিতীয়ত ক্ষেতমজুর, প্রান্তিক কৃষক, কৃষকরা এখন কৃষির সমস্যা নিয়ে জেরবার। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ভাঁওতায় তাঁদের জীবন দুর্বিসহ। তার সঙ্গে রয়েছে বেকার সমস্যা। সারা দেশে তো কোটি কোটি বেকার রয়েছেই, তার মধ্যে এ রাজ্যে লক্ষ লক্ষ বেকার রয়েছেন। সম্প্রতি যে ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, সেই রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে বেকারত্ব সর্বকালীন রেকর্ড করছে, আর দেশের গড়ের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের গড় অনেকটাই বেশি। তাই সার্বিক ভাবে দেশের যা অবস্থা, তার চেয়ে রাজ্যের অবস্থা আরও খারাপ।

বিজেপি সরকারের বক্তব্য, আমাদের দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) যখন এক বেশি আছে তার মানে তা চাকরিও আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে দেশের রাজ্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে কম মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (এসজিডিপি) পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ শতাংশ। রাজ্যে নতুন কোনও কলকারখানাও হচ্ছে না।

রাজ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হয় পুলিশ বিভাগে ও শিক্ষকতায়। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রয়েছে দুর্নীতি ও শূন্যপদ। সরকার দীর্ঘদিন টালবাহানা করে পুলিশের বদলে সিভিক ভলান্টিয়ার আর শিক্ষকতার ক্ষেত্রে সেই একই ধাঁচে সিভিক টিচার নিয়োগ করছে বেকারত্বের সুযোগে।

cpim-logo-875_020219030510.jpgবাম আমলে ব্রিগেড। (ফাইল ছবি: রয়টার্স)

ঠিক যে ভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি চায়, যত বেকারত্ব বাড়বে তারাও ততই শস্তায় শ্রম কিনতে পারবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারও সেই পথেই চলছে। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা যত বাড়বে তত শস্তায় তিনিও শ্রম কিনতে পারবেন। অশিক্ষিত ও অল্পশিক্ষিত বেকার বাড়লে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে, তোলাবাজির রাস্তা করে দেওয়া হবে।

তৃতীয় বিষয় হল নিরাপত্তাহীনতা। রাজ্যের মহিলারা নির্যাতিত হচ্ছেন, কিন্তু নির্যাতনে দোষী একজনেরও শাস্তি হয়নি। আজ রাজ্যে কোনও মহিলা সুরক্ষিত নন। আর রাজ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়তে বাড়তে এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে শিশুরা পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। রাজ্যে পাচার বেড়েছে। দারিদ্রের জন্য এবং একই সঙ্গে সুরক্ষার অভাবই এ জন্য দায়ী – আমাদের রাজ্য থেকে এখন ‘ক্রীতদাস’ যাচ্ছে অন্যত্র।

চতুর্থ বিষয় হল, যাঁরা মধ্যবিত্ত, কর্মচারী, অসংগঠিত শ্রমিক – যাঁরা যেখানেই কাজ করুন না কেন – তাঁদের যা প্রাপ্য অর্থাৎ যা নির্দেশিত, যা অর্জিত – সেগুলি তাঁরা পাচ্ছেন না, শুধু ঘোষণাই হচ্ছে। 

  • রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনগুলিতে চরম অরাজক অবস্থা। পুরো প্রক্রিয়া সর্বস্তরেই এখন নৈরাজ্যের অবস্থা।

সামাজিক ভাবে যে বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ আছেন, বিশেষ করে আদিবাসীদের জীবন সবচেয়ে বেশি দুর্বিসহ। তফশিলি জাতির মানুষের নিয়োগ পুরো দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে হাজার হাজার শিক্ষক অভূতপূর্ব ভাবে পোস্টার হাতে নেমেছেন রোস্টার মানার দাবিতে। কেন্দ্রের পাশাপাশি আমাদের রাজ্যেও নিয়োগ সংক্রান্ত রোস্টার মানা হয় না তফসিলি জাতি-উপজাতিদের চাকরির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে।

  • এ রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও সংরক্ষণের নিয়ম সরকার মানছে না। কারণ জালিয়াতি করে টাকার বিনিময়ে চাকরি দিচ্ছে তারা।

এই সব মানুষের দাবি নিয়েই লালঝান্ডা লাগাতার লড়ছে, নবান্নয় গেছে, পুলিশের মুখোমুখি হয়েছে, গ্রামে গ্রামে মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে, দলীয় কার্যালয় আক্রান্ত হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস বলেছিল যে লালঝান্ডাকে শেষ করে দেবে, এটাই তাদের লক্ষ্য ছিল। এখন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে কথা বলছেন যে বিরোধীদের শেষ করে দেবেন, তারই ঠিকা এ রাজ্যে নিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তারাও একই পথের পথিক, তারাও একই কায়দায় কাজ করছে।

কেন্দ্রীয় বাজেটে যেমন দেখা গেল কোনও পরিসংখ্যান ও তথ্যের যথার্থতা নেই, কোন খাতে কী ভাবে আয় হবে তারও কোনও ঠিক ঠিকানা নেই। সরকার কোনও সমীক্ষাই করেনি।

  • কেন্দ্র ও রাজ্য – দুই সরকারই তথ্যের অধিকার বন্ধ করে দিয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যে সব তথ্য পরিবেশন করেন তা শুধু ভ্রান্ত নয়, বিকৃত।

মানুষ এই দুর্বিসহ জীবনযন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। সংগঠিত ভাবে যখন তাঁরা বেরিয়ে আসতে চাইছেন, তখনই হচ্ছে লালঝান্ডার মিছিল। লালঝান্ডার জমায়েত ও লড়াই। কৃষক এখানে আত্মহত্যা না করে এখানে সংগঠিত ভাবে তাঁরা তাঁদের ফসলের দাম, জমির অধিকার পেয়েছেন। এখন আমরা আবার নতুন করে চাইছি তাঁদের ফসলের দামের অধিকার দিতে হবে, জমির অধিকার দিতে হবে।

cpim-pti_020219031154.jpgলালঝান্ডা লড়ছে মানুষের স্বার্থে (উপস্থাপনামূলক চিত্র: পিটিআই)

সংখ্যালঘুদের জন্য টিপু সুলতান মসজিদের ইমামকে দিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক ধোঁকা দিয়েছেন। এখন টিপু সুলতান মসজিদের সেই ইমামও নেই, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এখন বিজেপির পথ নিয়েছেন। বিজেপি কুম্ভমেলা নিয়ে ভোট চাইলে তৃণমূল কংগ্রেস গঙ্গাসাগরের কথা বলছে, বিজেপি রামজয়ন্তী পালন করলে তৃণমূল হনুমানজয়ন্তী পালন করছে। ওঁরা রামমন্দির করবেন, তো মমতা সূর্যমন্দির করবেন।

কেউ কেউ ভেবেছিলেন যে তৃণমূলের যে সন্ত্রাস, গণতন্ত্রের নিধন, লুঠপাট ও দুর্নীতি (যার মধ্যে পঞ্জি স্কিমও রয়েছে) তা বন্ধ করতে হবে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো করে, তাতে গোটা রাজ্যে এখন কাঁটা বিছানো হয়ে গেছে, একটি কাঁটার বদলে এখন দু’টি কাঁটা হয়ে গেছে।

এখন আর কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা সম্ভব নয়। দুই কাঁটাকেই শেষ করতে হবে। উন্নয়ন ও সম্প্রীতি দিয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের কাঁটা নির্মূল করতে হবে। সেই শপথ নিতেই ব্রিগেড।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

MD SALIM MD SALIM @salimdotcomrade

Socio-political worker. Politbureau Member, CPI(M). MP from Raiganj, WB. Former General Secretary, DYFI. Out-of-Box thinker tempered with pragmatism.

Comment