মোদী বনাম মমতা: এখন অ্যাডভান্টেজ কে?
বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে আবার কথা শুরু হয়েছে
- Total Shares
নজরটা বাংলা থেকে ঘুরিয়ে দিল্লির দিকে করে দিতে ত্রুটি করেননি তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্রিগেডে তাঁর ডাকে ২৩ দলের নেতানেত্রীরা মঞ্চে উঠেছিলেন, হিন্দিতে যাকে বলে মহাগটবন্ধন। আর এ রাজ্যে এসে সেই মঞ্চটাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষায় হয়ে গেছে মহাঠগবন্ধন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন এ রাজ্য থেকে ৪২টা আসনেই জয়ী হতে চাইছেন, তখন বিজেপিও চাইছে এ রাজ্য থেকে যথাসম্ভব আসন ছিনিয়ে নিতে।
পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনের জোর যে তাদের নেই সে কথা ভালোভাবেই জানে বিজেপি। তাই মমতার ইস্যুতেই তাঁকে বিঁধতে চাইছে বিজেপি।
ময়নাগুড়ির জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। (ছবি: ডেইলিও)
গণতন্ত্র রক্ষা করতে নিজের তৈরি নিয়ম ভেঙে কলকাতার নগরপাল রাজীব কুমারের জন্য ধর্নায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, আর সেই ধর্নাকেই কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য, গরিব মানুষের টাকা যারা লুঠ করছে তাদের জন্য ধর্নায় বসেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে তদন্তে কেন মুখ্যমন্ত্রী ভয় পাচ্ছেন, সেই প্রশ্নও ময়নাগুড়ির জনসভায় করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ঠাকুরনগরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় এমন ভিড় হয়েছিল যে পাদপৃষ্ঠ হওয়ার ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবরও হয়েছিল। নিজস্ব ভঙ্গিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তখন তাঁর কথার জবাব না দিয়ে তাঁর ভাষা-ভঙ্গিমা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন নেত্রী। তবে প্রধানমন্ত্রীর ময়নাগুড়ির সভার পরে তিনি ছিলেন আক্রমণাত্মক।
- এর অর্থ প্রধানমন্ত্রীর নিশানা ব্যর্থ হয়নি এবং ভোটের আগে লড়াই জমে উঠেছে।
নেতামন্ত্রীরা গ্রেফতার হয়েছেন ঠিকই, তবে সারদা তথা বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার মামলা জনমানসে স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল। কলকাতার নগরপাল রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআইয়ের যাওয়া, কর্তব্যরত সিবিআই আধিকারিকদের পুলিশের হেনস্থা ও আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া এবং মুখ্যমন্ত্রীর ধর্না আবার তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই সংবাদমাধ্যমে নিজের কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীকে ম্যাডিবাবু বলে বিদ্রুপ করে রাফাল নিয়ে বেঁধেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও সারদা প্রসঙ্গ তিনি এড়িয়ে গেছেন এবং নরেন্দ্র মোদী তাঁকে ও তাঁদের জোটকে ভয় পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাফাল কী তা অনেকেই জানেন না, বোঝেন না। কিন্তু বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার শিকার অনেকেই।
প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা তোপ মুখ্যমন্ত্রীর। (ছবি: সুবীর হালদার)
দোষী-নির্দোষের বিচার হবে পরে। প্রশ্ন হল, এগিয়ে কে। ভোটের বাক্সে কে কাকে ভোট দেবেন সে কথা বলা সম্ভব নয়। তবে রাজনৈতিক লড়াই কোন জায়গায় তা বিচার করা যেতে পারে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রিগেডের সভায় ২৩ দলের প্রতিনিধিকে এনেছেন যার মধ্যে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী, বহু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তবে সভায় আশানুরূপ জনসমাবেশ ঘটেনি বলে অনেকে মনে করছেন। এ ক্ষেত্রে যদি কিছুটা ঘাটতি থেকে থাকে তা হলে তা পূরণ করে দিয়েছে তাঁর ধর্না। সেই মঞ্চে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি, লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র তেজস্বী যাদব এসেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ভিড় হচ্ছে। তবে যে সব মাঠে তিনি জনসভা করছেন তা ধারে-ভারে কোনও ভাবেই ব্রিগেডের সঙ্গে তুলনীয় নয়। বহুচর্চিত রাফাল নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বেশ কয়েকদিন ধরে অদ্ভুত ভাবে চুপচাপ। অন্য বিরোধীরাই এখন এ নিয়ে বলে চলেছে। তবে বাগ্নী প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণ অনেক বেশি শানিত।
এখনও কাগজে-কলমে তৃণমূলে থাকা সাংসদ সৌমিত্র খান তাঁর দলের বিরুদ্ধে গলা চড়িয়েছেন সংসদে। মমতার ব্রিগেডের মঞ্চে কংগ্রেসের দূত হয়ে লোকসভার কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে এলেও, সংসদে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন দাবি করেছেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী। ভোটে তার বিন্দুমাত্র প্রভাব না পড়লেও এই ইস্যুতেও অ্যাডভান্টেজ বিজেপি।