২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি হারলে পরবর্তী পাঁচ বছর মোদী কী ভাবে সময় কাটাবেন

প্রায় ১৮ বছর ধরে ক্ষমতার শীর্ষে বসে রয়েছেন তিনি, হটাৎ সব ত্যাগ করে হিমালয় গমন সহজ হবে না

 |  3-minute read |   16-01-2019
  • Total Shares

২০০১ সালের ৭ অক্টোবর নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনিই প্রথম পূর্ন সময়ের আরএসএস প্রচারক যিনি কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন।

২০১৪ সালে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী না হওয়া অবধি নরেন্দ্র মোদীই গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থেকে গিয়েছিলেন।

কিন্তু গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার বছর ছ'য়েক আগে মোদীকে নিজের রাজ্য থেকে সরিয়ে দিয়ে উত্তর ভারতে পাঠানো হয়েছিল। সেই সময়, জাতীয় সচিব হিসেবে তাঁকে হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

body_011619042541.jpg২০০১ সালে গুজরাটের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আর ঘুরে দাঁড়াতে হয়নি নরেন্দ্র মোদীকে [ছবি: পিটিআই]

সেই সময় মোদী-বিরোধী বিজেপি কর্মীরা মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন, দলের রাজ্য কমিটিতে মোদী ভেদাভেদের রাজনীতি করছেন।

রাজ্য নেতৃত্ব ভেঙে পড়ার পর মোদী আবার গুজরাটে ফিরে আসতে সক্ষম হন - এর পর তিনি রাজ্যের অন্যতম সেরা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠেন এবং পরবর্তীকালে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনটিও দখল করে ফেলেন।

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পরে মোদী কি আবার বনবাসে চলে যাবেন? তাঁকে যদি বিরোধী আসনে বসতে হয় তাহলে তাঁর ভবিষ্যৎ কী হতে পারে?

মোদীর বয়স এখন ৬৮। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সময়ে মোদীর বয়স হবে ৭৩। তার মানে, তখনও মোদীর মধ্যে লড়াই করার ক্ষমতা থেকে যাবে।

হাজার হোক, মনমোহন সিং কিন্তু সত্তরে পা দেওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং ৮০ বছর বয়স অবধি তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে যান।

বয়স বৃদ্ধির ব্যাপারে মোদীর আরও একটি সুবিধা রয়েছে। যোগব্যামকে কিন্তু প্রচন্ড গুরুত্ব দেন তিনি।

২০১৯ লোকসভায় হেরে গেলেও মোদী কি পুনরায় ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন - এই বিষয় নিয়ে কিন্তু এখানে আলোচনা হচ্ছে না। ২০১৯ লোকসভায় হেরে গেলে মোদী কী ভাবে পরবর্তী পাঁচ বছর সময় কাটাবেন আমরা সেই আলোচনাই করছি।

body1_011619042633.jpgযোগব্যায়াম করে ৬৮ বছর বয়সেও ফিট মোদী [সৌজন্যে: টুইটার]

সাধারণত হার মানুষের উপর দু'ধরণের প্রভাব ফেলে - হারের ফলে জয়ে ফিরতে একজন একহয় মরিয়া হয়ে ওঠেন নয়ত ভেঙে পড়ে অনেক বেশি বিনয়ী হয়ে ওঠেন।

২০১৪ লোকসভাতে ২৮২টি আসন পাওয়ার পর অনেকেই বলেছিলেন যে বিজেপিকে পুরো ১০বছরের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। কিন্তু এর পর একের পর এক উপনির্বাচন ও বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হার বুঝিয়ে দিয়েছে যে বিজেপি অপরাজেয় নয়। তাহলে, সত্যি সত্যিই যদি ২০১৯ লোকসভায় বিজেপি পরাজিত হয়, তাহলে মোদী কী করবেন?

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার অনেক আগে বিজেপির মুখপাত্র ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই দায়িত্ব বেশ ভালোভাবেই সামলিয়েছিলেন তিনি।

দলের অন্দরমহলের বিরোধীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তিনি উঠে এসেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রচুর বিজেপি নেতাকে দলের মার্গদর্শক মন্ডলে নির্বাসনে পাঠিয়ে তিনি কিন্তু 'শত্রুর' সংখ্যা বাড়িয়েছেন। তাঁরা কিন্তু মোদী হওয়ার শেষে মোদীর 'খারাপ' সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

এখনও অবধি, ২০১৪ সালের প্রাপ্ত ভোট দিয়ে, তিনি তাঁদের মুখ বন্ধ করে রেখেছেন। কিন্তু একটি মাত্র হারই কিন্তু পরিস্থিতি আমূল বদলে দিতে পারে।

সংসদে বিরোধী হিসেবে বিজেপিকে ভালো মানায় কারণ বিরোধী দল হিসেবে বিজেপির অভিজ্ঞতা বেশি। দ্বিপাক্ষিক দ্বন্ধ, সন্ত্রাসবাদ কিংবা সামরিক চুক্তির মতো বিষয়গুলোতে খুব একটা বাধা দিতে দেখা যায় না বিজেপিকে। কারণ, দল হিসেবে জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে বিজেপি।

body2_011619042803.jpgশুধুমাত্র একটি পরাজয় কি তাঁকে বিরাট ধাক্কা দেবে [সৌজন্যে: টুইটার]

বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি থাকা মানেই সংসদে বেশ কয়েকজন ভালো বক্তা পাওয়া যায় - প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী, প্রমোদ মহাজন, সুষমা স্বরাজ, ভেঙ্কাইয়া নাইডু এবং স্বয়ং মোদী। বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে তর্ক শুরু করতে পারেন। এই অধিবেশনগুলোতে মোদী নিজে নেতৃত্ব দিতে পারেন।

তবে, পরাজয়ের ফলে মোদী যদি ভেঙে পড়েন, তাহলে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও কিন্তু বিরোধীদের আক্রমণ করতে পিছপা হবেন না মোদী।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদী বারংবার বলেছেন, তিনি ক্ষমতালোভী নন। শ'য়ে শ'য়ে কোটি ভারতীয়দের সেবা করতে পারাটাই তাঁর জীবনের একমাত্র ব্রত। কিন্তু এমন একজন যিনি গত ১৮ বছর ধরে ক্ষমতার শীর্ষে বসে ছিলেন তাঁর কাছে হটাৎ করে সব ত্যাগ করে 'হিমালয় গমন' কিন্তু কঠিন হবে।

তিনি এখানেই থাকবেন এবং লড়বেনও। তবে তিনি শুধু রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে লড়বেন না। তাঁর দলের অনেকেই কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবেন।

আর, তাঁর এই লড়াইটা কিন্তু উপভোগ করার মতোই হবে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

VANDANA VANDANA @vandana5

Author is a Delhi-based journalist.

Comment