অন্য বিকল্প ভাবনা ছিল না ছন্নছাড়া বিজেপির, তাই হাল ধরতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে

আডবাণীর রথযাত্রার সময় একাধিক বিকল্প ভাবা ছিল দলের ম্যানেজারদের

 |  3-minute read |   07-12-2018
  • Total Shares

পশ্চিমবঙ্গ আন্দোলনের রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামের রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ প্রতিবাদের রাজ্য। এটা ঠিক যে একটি গণতান্ত্রিক এবং আইনসম্মত দেশে কোনও বিতর্ক যখন আদালতের চার দেওয়ালের সওয়াল-জবাবেব মধ্যে আবদ্ধ থাকে, তখন আদালতকে অবমাননা করা বাঞ্ছনীয় নয়। কিন্তু আন্দোলন বা প্রতিবাদ বা সংগ্রামে কোনও শিকল পরানো নেই আদালতের পক্ষ থেকে।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি টেলিভিশনের পর্দায় তো রয়েছে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাস্তায় কতটুকু রয়েছে এই নিয়ে বিতর্ক চরমে। দলের রাজ্য সভাপতি জায়গায় জায়গায় আক্রান্ত হচ্ছেন, গণতন্ত্রের পক্ষে তা খুবই হানিকর। তবে প্রশ্নটা হচ্ছে প্রতিবাদটা কোথায়?

463475-modi-rupa-pti_120718052719.jpgকেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মরিয়া চেষ্টা, যে ভাবেই হোক আসনসংখ্যা বাড়াতে হবে পশ্চিমবঙ্গে (ফাইল চিত্র/ পিটিআই)

বিরোধী রাজনীতির একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। রথযাত্রা অবশ্যই সেই রকম একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। কিন্তু যখনই কোনও একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি একটি রাজনৈতিক দল পরিকল্পনা করে তখন তার একটি 'প্ল্যান বি'ও থাকা বাঞ্ছনীয়। রথযাত্রা শুরুর দিন রাজ্য বিজেপির গতিপ্রকৃতি একেবারেই ছন্নছাড়া।

দিল্লি থেকে দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি অমিত শাহ ব্যাটন হাতে না তুলে নিলে এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ দিনে টেলিভিশনের পর্দায় রাজ্য বিজেপি বেশিক্ষণ টিকে থাকত বলে মনে হয় না।

তৃণমূল কংগ্রেস শাসকদল। তারা তাদের রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করে চলেছে। কিন্তু পক্ষান্তরে তৃণমূলের এই তথাকথিত রাজনৈতিক কৌশলই আপাত ভাবে বাঁচিয়ে রেখেছে রাজ্য বিজেপিকে।

এর আগে বেশ কয়েকবার আদালতের রায়ের বদান্যতায় রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল করতে পেরেছে বিজেপি। এ বারে রথযাত্রা উপলক্ষে গত দু-তিন দিনে রাজ্য বিজেপির পদক্ষেপগুলো এটাই ইঙ্গিত করছে যে আদালতের উপরেই ভরসা ছিল অনেক বেশি, নিজেদের পারদর্শিতা বা সংগঠনের তুলনায়। আদালত বেঁকে বসায় সামনে কোনও 'প্ল্যান বি' নেই, বাজার গরম রাখতে আসতে হচ্ছে খোদ সর্বভারতীয় সভাপতিকে।

লালকৃষ্ণ আডবাণী থেকে তপন শিকদার – পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রথযাত্রার ইতিহাস বেশ পুরোনো এবং এই রথযাত্রা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর রাজনৈতিক কর্মসূচি। শঙ্করাচার্য থেকে বিবেকানন্দ পর্যন্ত নানা মুনি-ঋষির ভারতভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে রাজনৈতিক রূপ দিতে স্বর্ণজয়ন্তী রথযাত্রার পরিকল্পনা করেছিলেন  লালকৃষ্ণ আডবাণী। এটা ঠিক যে তাঁকে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার হতে হয়েছিল বিহারে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের হাতে। কিন্তু সে দিনও বিজেপির ম্যানেজাররা 'প্ল্যান বি' প্রস্তুত রেখেছিলেন। যার ফলে সেই রথযাত্রার পূর্ণ রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে সক্ষম হয়েছিল বিজেপি।

advanibd_05011709041_120718052804.jpgলালকৃষ্ণ আডবাণী রথযাত্রা (ফাইল চিত্র/ ডেইলিও)

সঙ্ঘ পরিবারে যাত্রা একটি অত্যন্ত পরিচিত জনসংযোগের হাতিয়ার। সঙ্ঘ পরিবার গঙ্গাজল যাত্রা করেছে, ইটযাত্রা করেছে এবং প্রত্যেকবার নিজেদের জনপ্রিয়তা এককদম করে বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এই সব যাত্রারই পরিণতি ছিল ১৯৯২ সালের করসেবা এবং পরবর্তী কালে আডবাণীর স্বর্ণজয়ন্তী রথযাত্রা।

কিন্তু প্রত্যেকটি যাত্রায় ছিল সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং 'প্ল্যান বি', 'সি' অথবা 'ডি'। কোনও বারেই পরিস্থিতি এতটা ছন্নছাড়া মনে হয়নি।

১৯৭৭ সাল অথবা ২০১১ সাল – পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা পরিবর্তন বাস্তবে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনেরই ফল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পছন্দ হোক বা না হোক, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মমতার বহু তথাকথিত বেআইনি পদক্ষেপকে আন্দোলন হিসাবেই মনে রেখেছে। সেটি বেদীভবনই হোক, সেটি লেক গার্ডেন্সের বস্তি উচ্ছেদই হোক অথবা মধ্যরাতে নন্দীগ্রামের পথে আক্রান্ত হওয়াই হোক এবং এমনকি সিঙ্গুর থেকে ফিরে এসে বিধানসভা ভবন ভাঙচুরই হোক না কেন।

তারও আগে দিনের পর দিন কেশপুরের রাস্তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাপিয়ে বেড়ানোর ফলশ্রুতি ২০১১ সালের ক্ষমতা পরিবর্তন।

গত সাত বছরে একটার পর একটা লোপ্পা বল দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রত্যেকটা ক্যাচ মিস করেছে বিরোধী দলগুলি। এখন যখন বিজেপি দাবি করছে যে তারাই প্রধান বিরোধী দল, তা হলে তাদের দায় সবচেয়ে বেশি। রাজনৈতিক উত্থানপতন যদি আদালতের বিচারকদের মুখের দিকে তাকিয়ে নির্ভর করে, তা হলে সেই দলের ম্যানেজাররা কতটা অপরিণামদর্শী সেটা সহজেই অনুমেয়।

দিল্লিতে বসে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অর্থ এবং লোকবল – কোনও কিছুতেই কার্পণ্য করছেন না। কৈলাস বিজয়বর্গীয় থেকে অরবিন্দ মেনন, মাথাভারী পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিজেপি – কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মরিয়া চেষ্টা, যে ভাবেই হোক আসনসংখ্যা বাড়াতে হবে পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু বাস্তবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কতটা ভরসা পাচ্ছেন তার ইঙ্গিত পাওয়া যাবে রাজ্য বিজেপির আগামী রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলি থেকে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PRASENJIT BAKSI PRASENJIT BAKSI @baksister

The writer is a veteran journalist.

Comment