চন্দ্রমুখীর সঙ্গে পরিচয় আছে? তেলঙ্গনার প্রথম রূপান্তরকামী প্রার্থী
ডেভিড বনাম গোলিয়াথ লড়াইয়ে বিজেপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন ৩২ বছরের রূপান্তরকামী
- Total Shares
তেলাঙ্গনা বিধানসভা নির্বাচনে যে ১,৮২১ প্রার্থী ভোটে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজনকে আলাদা করে চিহ্নিত করতেই হবে। তাঁর নাম চন্দ্রমুখী মুব্বালা। তিনিই নির্বাচনের একমাত্র ও রাজ্যের প্রথম রূপান্তরকামী প্রার্থী।
গোসামহল কেন্দ্রে ডেভিড বনাম গোলিয়াথদের লড়াইয়ে এই ৩২ বছরের রূপান্তরকামীকে স্বচ্ছন্দেই 'ডেভিড' বলে সম্বোধন করা চলে। বহুজন লেফট পার্টির এই প্রার্থী বিজেপি, কংগ্রেস ও টিআরএসের হেভিওয়েট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এক ফোঁটাও দ্বিধাবোধ করেননি। চন্দ্রমুখী অবশ্য তাঁর জন্মের সময়ে দেওয়া নামেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন - এম রাজেশ।
চন্দ্রমুখী নির্বাচনে জয় পেলে গোসামহল কিন্তু রীতিমতো ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারত। সে ক্ষেত্রে তিনিই রাজ্যের প্রথম রূপান্তরকামী বিধায়ক হতেন। তবে প্রবল জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তিনি বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতা টি রাজা সিংয়ের কাছে পরাজিত হয়েছেন।
ভাষণে হুমকি দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই ৪৩টি মামলা রুজু করা হয়েছে বিজেপির বিতর্কিত হিন্দুত্ব নেতা টি রাজা সিং লোধের বিরুদ্ধে। তবে নির্বাচনে তিনি ৬১,৮৬৪টি ভোট পেয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আবার হায়দরাবাদের গোরক্ষা কমিটির নেতা। এর আগে তিনি মুসলমান অনুপ্রবেশকারী ও যারা গরু খায় তাদের হত্যা করার হুমকি দিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন।
এখানে উল্লেখ্য, গোসামহলে মুসলমান ভোটারদের সংখ্যা কিন্তু নেহাতই কম নয়। তাছাড়া এই শহরে বেশ কিছু নাগরিক সমস্যা রয়েছে। স্থানীয়রা মনে করেন, এই সমস্যাগুলোর জন্য বিজেপির বিদায়ী বিধায়ক রাজা সিং দায়ী।
এই সমস্যাগুলোর সমাধান করার ও প্রান্তিক মানুষদের দুঃখ দুর্দশার প্রতিশ্রুতি দিয়েই এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ছিলেন চন্দ্রমুখী।
প্রচারের সময়ে তিনি বলে বেড়িয়েছেন, "নিকাশি ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট ও জঞ্জাল ব্যবস্থার উন্নতি করার জন্য আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অনেকেই এখনও বস্তিবাসী এবং শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। বিধায়ক হিসেবে আমি এই সমস্যাগুলোর সমাধানের চেষ্টা করব।"
বছর চারেক আগে রাজনৈতিক মঞ্চে প্রবেশ চন্দ্রমুখী। কিন্তু সেই সময়ে তিনি কখনই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা ভাবেননি।
তিনি জানিয়ে ছিলেন, "রাজনীতিতে প্রবেশের সময়ে তিনি শুধুই কোনও একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে মানুষের জন্যে ও এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্যে কাজ করতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আমি টিকিট পেয়ে গিয়েছি। আমার সম্প্রদায়ের লোকজন ভীষণ খুশি। এ রাজ্যে এই প্রথম কোনও রূপান্তরকামী নির্বাচনে লড়তে চলেছে। আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য রাজনৈতিক নেতারা কোনও চিন্তাভাবনা করেন না। তাঁরা যাতে আমাদের সম্প্রদায়ের জন্যে সুনির্দিষ্ট নীতির বন্দোবস্ত করেন সেই দাবি জানাতেই আমার রাজনীতিতে প্রবেশ।"
চন্দ্রমুখী, তেলেঙ্গনার প্রথম রূপান্তরকামী প্রার্থী [সৌজন্যে: ফেসবুক]
স্থানীয় একটি রূপান্তকামী সংগঠনের কর্মী চন্দ্রমুখী। তবে শুধু রূপান্তকামীদের সমস্যা নয়, চন্দ্রমুখী শিশু শিক্ষা সম্পর্কেও যথেষ্ট সচেতন। তিনি মনে করেন, একমাত্র সঠিক শিক্ষাই শিশু শ্রমিকের সংখ্যা কমাতে পারে।
রূপান্তকামী মানুষদের কথা বলতে গিয়ে তিনি জানালেন, "রূপান্তকামীদের জন্যে কোনও আবাসন প্রথা চালু নেই। সরকারি প্রকল্পগুলো সম্পর্কেও তারা খুব একটা সচেতন নন। এদের অনেকেরই ভোটার পরিচয় পত্র নেই। এই সমস্যাগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে।"
নির্বাচনের অধিকাংশ প্রার্থীই যখন কোটিপতি তখন চন্দ্রমুখী নির্বাচন কমিশনকে এফিডেভিট মারফত জানিয়েছেন যে নিজস্ব সম্পত্তি বলতে শুধুমাত্র ৪৮,০০০ টাকা, যা ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর আর অন্য কোনও সম্পত্তি নেই।
পায়ে হেঁটেই তিনি নির্বাচনের প্রচার করেছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি ভোটারদের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন।
নভেম্বরের শেষে দিন দুয়েকের জন্য নিখোঁজ হয়ে যান চন্দ্রমুখী। যদিও তাঁর মা অপহরণের অভিযোগ করেন, সে বিষয় এখনও অবধি কোনও মামলা রুজু করা হয়নি।
চন্দ্রমুখী এর আগে রূপান্তকামীদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি ২০১৪ সালের সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায় যাতে লাগু করা হয় সে বিষয়ে আন্দোলন করবেন। তিনি জানিয়েছেন, "নালসা রায়ে এই রাজ্যে কার্যকর করা উচিত। তা করতে পারলে রূপান্তকামীরা অনেকটাই সমস্যা মুক্ত হবেন। এর জন্যে আমি সর্বসম্মতভাবে চেষ্টা করে যাব।"
এখন যখন গোসামহল আবার একজন বিতর্কিত নেতাকে বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত করেছেন, তখন চন্দ্রমুখী নির্বাচনী প্রচার থেকে দূরে সরে আবার রূপান্তকামীদের অধিকার নিয়ে লড়াই শুরু করতেই পারেন।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে