ভোট অন অ্যাকাউন্ট নাকি অ্যাকাউন্ট অন ভোট?

বাজেটে ভালো দিক সামাজিক নিরাপত্তা; চাষিদের ২০০০ টাকা কি ভোটের জন্য?

 |  4-minute read |   01-02-2019
  • Total Shares

ভোট অন অ্যাকাউন্ট নাকি অ্যাকাউন্ট অন ভোট? প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পালানিয়াপ্পান চিদম্বরম। উত্তর হতে পারে, ১৯৯৫ সালে মনমোহন সিং যা করেছিলেন, ২০০৯ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায় যা করেছিলেন এবং ২০১৪ সালে চিদম্বরম নিজে যা করেছিলেন, সেই একই কাজ করলেন পীযূষ গয়াল। ভোটের কথা মাথায় রেখে অন্তর্বর্তী বাজেট।

gayal2_020119061354.jpgঅন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করতে চলেছেন পীযূষ গয়াল। (ছবি: পিটিআই)

মধ্যবিত্তদের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর কোনও কর নেই, তা তিনি ছোট ব্যবসায়ী হোন বা চাকরিজীবী বা অন্য কোনও ভাবে স্বনির্ভর। সঙ্গে কৃষকদের (যাঁদের দুই হেক্টরের কম জমি রয়েছে) বছরে ৬,০০০ টাকা। তিনটি কিস্তিতে দেওয়া হবে। প্রথম কিস্তির টাকা কৃষকরা পেয়ে যাবেন ৩১ মার্চের মধ্যে। মানে রেট্রোঅ্যাক্টিভ এফেক্ট। এই ধরনের কাজ সাম্প্রতিক অতীতে করেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়, যে কারণে হাচিসনের সঙ্গে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তবে এ ক্ষেত্রে সরকার কিছু পাবে না, দেবে।

রাহুল গান্ধী বলছেন, এই ঘোষণার অর্থ দিনে ১৭ টাকা করে দেওয়া। পাটিগণিতের হিসাবে ঠিকই বলছেন, তবে ফসল বোনার মুখে এই টাকাটি পেলে চাষিদের উপরকারই হবে। যদিও কংগ্রেস যে বলছে ভোট দেওয়ার জন্য চাষিদের ২০০০ করে দেওয়া হচ্ছে, রাজনৈতিক ভাবে তারা ভুল বলছে না।

বাজেট হয় আগামী অর্থবর্ষের। তাই একটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, চলতি অর্থবর্ষে সরকার যে কৃষকদের ২০০০ টাকা করে দেবে, তার সংস্থান ২০১৮-১৯ সালের বাজেটে যখন ছিল না, সেটি কোথা থেকে আসবে? আর্থিক প্রশ্নটি ধামাচাপা পড়ে যাবে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্য।

পশুপালনের উপরেও গুরুত্বর দিয়েছে সরকার। এই দিকটি অবহেলিতই ছিল। তাঁরা পঋণ পাবেন কৃষকদের মতো এবং ছাড়ও পাবেন। ঋণ ঠিকঠাক ভাবে শোধ দিতে পারলে সুদ দিতে হবে কার্যত ৪ শতাংশ হারে।

তবে এ বারের বাজেটে সত্যিকারের ভালো দিক হল সামাজিক নিরাপত্তা। মাসিক সামান্য অর্থের বিনিময়ে অবসর গ্রহণের পরে অন্তত ৩০০০ টাকা করে পেনশন (প্রধানমন্ত্রী শ্রম-যোগী মান্ধন)। ধরেই নেওয়া যায় যে এখন ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের ব্যক্তিরা এই প্রকল্পের আওতায় এলেও পরে এই সীমা বাড়ানো হবে। কৃষকদের ভাতা (প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি বা পিএম-কিষাণ) যেমন ভোটের কারণে বন্ধ হবে না, তেমন এই মান্ধন প্রকল্পও বন্ধ হবে না।

কৃষিঋণ মকুব করার চেয়ে পিএম-কিষাণ অনেক ভালো প্রকল্প তাতে সন্দেহ নেই, তবে জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্পের (যা ১০০ দিনের কাজ বলে পরিচিত) মতো এই প্রকল্পও সমর্থনযোগ্য বলে মনে হয় না।

ক্ষমতায় এসে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন যে ১০০ দিনের প্রকল্প তিনি বন্ধ করবেন না, কারণ তিনি প্রতিনিয়ত দেশকে মনে করাতে চান কংগ্রেস কী ভাবে দেশকে গরিব করে রাখতে চায়। এখন অবশ্য তিনি নিজেই সেই কাজ করলেন।

gayal_020119061514.jpgঅন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। (সৌজন্য: লোকসভা টিভি)

কুটির ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের (এমএসএমই) প্রতি মোদী সরকার সংবেদনশীল, তবে বিমুদ্রাকরণ এবং পণ্য ও পরিষেবা করের ফলে সবচেয়ে বড় ধাক্কা এঁরাই খেয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই বাজেটে তাঁদের প্রতি সদয় হয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

আয়কর কমলে লোকে খুশি হবে এটাই স্বাভাবিক। ঠিকঠাক বিনোয়োগ করতে পারলে বছরে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা পর্যন্ত যাঁদের আয় তাঁদের আয়কর দিতে হবে না। ব্যাঙ্কে সুদের উপরে আয়কর নেওয়া শুরু হয়েছিল ইউপিএ জমানায়, সেটাকেই চারগুণ ছাড় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এই ছাড় তাঁরাই পাবেন যাঁরা সঞ্চয় থেকে মাসে ৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত সুদ পান তাঁরা গরিব নন, অর্থাৎ এখানে উচ্চ মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তদের খুশি করতে চেয়েছেন মোদী।

আয়কর রিটার্নের পদ্ধতি আরও সহজ হয়েছে। যাঁরা এ বছর কর বাবদ টাকা ফেরত পেয়েছেন তাঁদের খুব তাড়াতাড়িই তা পেয়েছেন।

অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন এমন সফটওয়্যার খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে যার ফলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই স্বয়ংক্রিয় অ্যাসেসমেন্ট হয়ে যাবে। এটাও করদাতাদের জন্য সুখবর।

আয়কর সম্প্রতি ত্রাস হয়ে উঠেছিল, অন্তত বিরোধীরা সে কথাই বলছেন। পীযূষ গয়াল সাময়িক দায়িত্ব পেয়ে তার সদ্ব্যবহার করছেন। ২০১৯ সালে যদি  এনডিএ সরকার গড়তে পারে, তা হলে অর্থমন্ত্রকের সবচেয়ে বড় দাবিদার হবেন গয়াল। দু’দফায় তিনি দায়িত্ব সামলালেন এবং ভালো ভাবে।

কৃষিঋণ মকুবে এ রাজ্যের কৃষকদের তেমন লাভ হয় না, তবে মোদী সরকারের ঘোষণায় এই রাজ্যের কৃষকরাই সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন। প্রশ্ন হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী করবেন? তিনি কি সময়মতো রাজ্যের কৃষকদের তথ্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দেবেন? দিলে কৃষকরা বিজেপি সরকারের সুবিধা পাবেন, নাম না পাঠালে দিলে রাজ্যের কৃষকরা সুবিধা না পাওয়ার জন্য মমতার বিরুদ্ধে যাবেন। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থা শাঁখের করাতের মতো।

গত সাড়ে চার বছরে কী ভাবে অনাদায়ী ঋণ কমেছে সে কথাও বাজেট বক্তৃতায় সে কথা উল্লেখ করেছেন পীযূষ গয়াল।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment