লোকসভা নির্বাচন ২০১৯: প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে মমতা কেন প্রথমে?
যে কোনও হিসাবেই তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস
- Total Shares
আগামী ২০ জানুয়ারি সকালে সংবাদপত্রের পাতায় অথবা ১৯ জানুয়ারি দুপুরে টেলিভিশনের পর্দায় আবার একটা ছবি দেখবে ভারত। দেশের একদল নেতানেত্রী মঞ্চের সামনে হাত তুলে দাঁড়িয়ে বিরোধী ঐক্যের বার্তা দেবেন।
পছন্দ হোক বা না হোক, নরেন্দ্র মোদী অথবা বিজেপি অথবা আরএসএস একটা বিষযে নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন যে, লড়াইটা তাঁরা বনাম ওরা।
এটা ঘটনা যে যখনই ‘ওরা’র প্রশ্ন আসে সে ১৯৭৭ সালই হোক বা ২০১৯, প্রক্রিয়াটা বেশ লম্বা, জটিল বা অনিশ্চিত। কিন্তু এটাও সত্যি যে ১৯৭৭ সালে যে জনজাগরণ ছিল, ২০১৯ সালে অন্তত এখনও পর্যন্ত এমন কোনও আভাস পাওয়া যায়নি। ভোটের বাক্স কী বলবে, সে তো ভবিষ্যতের খাতায়।
নির্বাচন এসে গেছে। নানা রকমের অঙ্ক কষাও শুরু হয়ে গেছে, সেটাই স্বাভাবিক। আর এই অঙ্কতেই কিছু নতুন সম্ভাবনা আলোচনায় উঠে এসেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একদল মানুষ উচ্ছ্বসিত যে বিজেপির সভাপতি অসুস্থ। সোশ্যাল মিডিয়ার ধরন-ধারণ দেখলে মনে হয় যে দেশের মানুষ নির্বাচনের ফলাফল নিশ্চিত করে ফেলেছে। হয়তো বা সেটি সত্যি। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে জোট ঘোষণার পরে কোনও অঙ্কতেই ঠিক বোঝা যাচ্ছে না যে চূড়ান্ত ইতিবাচক ফলাফল করলেও কংগ্রেসের আসন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। নিজের ক্ষমতায় কংগ্রেসের লড়ার রাজ্য শুধুমাত্র মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, গুজরাট, পঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি ও অসম। বাকি প্রত্যেকটি রাজ্যে কংগ্রেস হয় সাইনবোর্ড, না হয় পরজীবী। এই সবক’টি রাজ্যেই চূড়ান্ত সাফল্যের পরেও অন্তত আজকের অবস্থায় কংগ্রেসকে ১০০-র বোশি আসন দেওয়া যাচ্ছে না। তা হলে সরকার গড়বে কে?
তাঁর মা সনিয়া গান্ধী, বিএসপি নেত্রী মায়াবতী ও তৃণমূলেন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মঞ্চে রাহুল গান্ধী, যদিও রাহুলের নেতৃত্ব তাঁরা মানবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। (ফাইল চিত্র: পিটিআই)
অন্যদিকে, বিজেপির চূড়ান্ত সমর্থকও মনে করেন না যে তাঁরা ২০১৪ সালের ফলাফলের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবে। সেক্ষেত্রে বিজেপি যদি একক বৃহত্তম দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে এবং সামান্য কিছু আসনের সমর্থনে জোট রাজনীতির ধর্ম মেনে সরকার গড়ার অবস্থায় থাকে, তা হলে নরেন্দ্র মোদী কি গ্রহণযোগ্য হবেন? নরেন্দ্র মোদী কি জোট রাজনীতিতে অটলবিহারী বাজপেয়ীর আদর্শ উত্তরসূরী হতে পারবেন? বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে সেটা বেশ কঠিন কাজ। ২৫০ আসনের কাছাকাছি পৌঁছাতে না পারলে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্ব মানিয়ে নেওয়া সঙ্ঘ পরিবারের পক্ষে যথেষ্ট কঠিন কাজ। তখনই খোঁজ পড়বে অটলবিহারী বাজপেয়ীর উত্তরসূরী কে – রাজনাথ সিং, নীতিন গডকরি নাকি অন্য কেউ?
এ বার পড়ে রইল তৃতীয় শক্তি। অঙ্কের হিসাব বলছে, বিপুল সংখ্যক আসন এবার হয়তো শেষ পর্যন্ত তৃতীয় শক্তির হাতেই থাকবে। এখন যে রসায়নে ভারতের রাজনীতি চলছে, সেখানে বিজেপিকে দূরে রাখতে ফর্মুলা হতে পারে দু’টো – কংগ্রেসের সমর্থনে তৃতীয় শক্তির সরকার অথবা তৃতীয় শক্তির সমর্থনে কংগ্রেসের সরকার।
জোট সরকার নাও মানতে পারে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্ব। (ফাইল ছবি: রয়টার্স)
আবার সেই প্রশ্নই উঠে আসছে যে, কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী রাহুল গান্ধী কি জোটের নেতৃত্ব দিতে পারবেন? তাঁর মায়ের কি ছেলের প্রতি এই বিশ্বাস আছে? তা যদি না হয় তা হলে আবার কোনও অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার নাকি কংগ্রেসের সমর্থনে তৃতীয় শক্তির সরকার? এ খানেই প্রশ্ন হল, অঙ্কের বিচারে তৃতীয় শক্তির অন্তর্নিহিত শক্তিটা কোথায়? অঙ্কের বিচারে অন্তর্নিহিত শক্তিটা হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল কংগ্রেস হুঙ্কার ছাড়ছে তারা ৪২-এ ৪২ পাবে। এটা ঘটনা যে তারা ৪২-এ ৪২ পাওয়ার মতো অবস্থায় একেবারেই যে নেই, সে কথা বলা যাচ্ছে না।
তৃতীয় বৃহত্তম দল হওয়ার সুযোগটা ২০১৪ সালে একটুর জন্য ফস্কে গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে। আজ জয়ললিতা প্রয়াত। ডিএমকে-ও যে ৩৯-এ ৩৯ পেয়ে ১০০ শতাংশ স্ট্রাইক রেট করবে সেই সম্ভাবনা নেই। উত্তরপ্রদেশে বুয়া-ভাতিজাও ৩৮ টা করে আসন নিয়ে ১০০ শতাংশ স্ট্রাইক রেট করার জায়গায় নেই। মহারাষ্ট্রে কোনও দল ৪০-এর চেয়ে বেশি পাবে, এমনও ভাবার কোনও কারণ নেই। সুবর্ণ সুযোগ একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে।
সুযোগ একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে। (ফাইল ছবি: রয়টার্স)
সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দল তিনি হতে পারবেন কিনা এবং হতে পারলে রাজনীতিকে তিনি কোন পথে চালিত করবেন, সেটা তাঁর সিদ্ধান্ত। কিন্তু তৃতীয় বৃহত্তম দল হওয়ার প্রেক্ষাপট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে প্রস্তুত। সম্ভবত এই বিষয়ে তিনি পুরোপুরি সচেতন এবং নিজের রাজনীতির ঘুঁটি তিনি সেই ভাবেই সাজাচ্ছেন।