অসমের পঞ্চায়েত ভোটে কেন বাঙালি-আবেগে কাজ হল না

প্রবাসী বাঙালি ও বাংলাভাষীদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক পার্থক্য অনেকটাই

 |  2-minute read |   15-12-2018
  • Total Shares

না ওরা বাঙালি, না ওরা কৃষক, না ওরা হিন্দু, না ওরা মুসলমান, না ওরা লিঙ্গায়ত, না ওরা মতুয়া।

স্বাধীনতার পরবর্তী যুগে ভারতের গণতন্ত্র নানা রঙে রঙীন। কিন্তু ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি এই সৌন্দর্যকে কদর্যের পর্যায়ে পর্যবসিত করেছে। আজ কৃষক একটা ভোটব্যাঙ্ক, লিঙ্গায়ত একটা ভোটব্যাঙ্ক, মুসলমান প্রথম দিন থেকেই ভোটব্যাঙ্কের চক্রব্যুহে আবদ্ধ। হিন্দুও এই রাজনীতির বাইরে যেতে পারছে না। জাতিবিন্যাস আগে থেকেই ভোটব্যাঙ্কের শিকার। নতুন করে যোগ হয়েছে মতুয়াদের মতো  উপ-সম্প্রদায়। তবে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতিতে একেবারে আধুনিক সংযোজন ভাষাভিত্তিক ভোটব্যাঙ্ক। চক দে ইন্ডিয়া সিনেমাতে কোচ কবির খান বিরক্ত হয়েছিলেন খেলোয়াড়দের পরিচিতিপর্বে। আমি ঝাড়ণ্ডের... আমি হরিয়ানার,. আমি মণিপুরের...। এই জবাব কবির খানের দলের দলগত সংহতির বিরোধী ছিল। যেটাকে আরেকটু বড় করে বললে দেশের সার্বভৌমত্বের বিরোধী ছিল।

chakde_121518024418.jpg খেলোয়াড়দের রাজ্যভিত্তিক পরিচয়ে বিরক্ত হয়েছিলেন কোচ কবির খান (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)

এটা ঠিক যে ভারতের প্রাদেশিক বিভাজন মূলক ভাষাভিত্তিক। কিনতু কোনও ভাষা কোনও রাজ্যের সম্পত্তিও নয় বা সেই ভাষায় কথা বলা মানুষ সেই রাজ্যের দায়বদ্ধতাও নয়। ভরতের যে কোনও গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকার তার প্রত্যেকটি নাগরিকের প্রতি দায়বদ্ধ।

এটা অত্যন্ত আশার কথা যে অসমের বাংলাভাষী মানুষ বিচিত্র ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে নিজেদের একনিষ্ঠ অসমবাসী হিসাবে প্রমাণিত করেছেন। বার বার যে কথাটা মাথায় রাখা প্রয়োজন যে, অসম অথবা আন্দামান অথবা দণ্ডকারণ্য অথবা দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্ক – এরা কেউই প্রবাসী বাঙালি নন, এঁরা সকলেই সেই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা, ঘটনাচক্রে এঁরা বাংলা ভাষায় কথা বলেন এবং এখনও পর্যন্ত বাংলা সংস্কৃতির ধারকবাহক এবং যতদিন থাকতে পারবেন সেটা আশার কথা।

অভিযোগ আছে যে শ্রীলঙ্কার তামিলভাষীদের সশস্ত্র আন্দোলনে তামিলনাড়ুর কোনও এক অংশের আর্থিক ও বৌদ্ধিক মদত ছিল। সেটা কি বাঞ্ছনীয়? বহু স্তরে এই আলোচনা হয়েছে যে শ্রীলঙ্কার তামিলভাষীরা শ্রীলঙ্কার মানুষ হয়ে উঠবেন না কেন? অসমের বাংলাভাষীরা প্রমাণ করেছেন যে তাঁরা কোনও রাজনৈতিক রণকৌশলের শিকার হতে রাজি নন।

হাতের কাছে সবচেয়ে বড় উদাহরণ বাংলাদেশ। আমি বাগুইআটিতে থাকি। বাগুইআটির প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারের এখনও কোনও না কোনও যোগসূত্র বাংলাদেশের সঙ্গে রয়ে গেছে। দিনের পর দিন তাঁরা অত্যাচারিত এবং সেই নিয়ে বাগুইআটির বাজার ও চায়ের দোকানে নিরন্তর আলোচনা চলে। বাংলাদেশের সেইসব মানুষ তো বাংলাভাষী। তা হলে কি আমরা সে ব্যাপারেও নাক গলাব বা  তার চেয়েও বেশি কিছু করব (তামিলনাড়ুর ওই এক গোষ্ঠীর মতো)?

assam_pp_pti_121518024450.jpg অসমে পঞ্চায়েত ভোট (ছবি: পিটিআই)

সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে একটি আসনও জোটেনি তৃণমূল কংগ্রেসের কপালে। আগামী দিনে অসমে তৃণমূল কংগ্রেসের বিস্তার ঘটবে কি ঘটবে না সেটা অন্য বিষয়। কিন্তু বাঙালি তত্ত্বকে খাড়া করে অসমের মাটিতে জমি খোঁজার চেষ্টা এটা যে অসমের বাংলাভাষীরা একেবারেই ভালো চোখে নেননি সে কথা আমি বারে বারেই বলার চেষ্টা করেছি।

প্রবাসী আর স্থানীয়, এই দুই মনস্তাত্ত্বিক পার্থক্যটা যতক্ষণ না বোঝা যাবে ততক্ষণ এই ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি বুমেরাংই হবে। এই প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয়ের উল্লেখ রাখা জরুরি যে একই রকম ভাবে ভারতে ব্যুমেরাং হবে কৃষিঋণ মকুবের রাজনীতি এবং পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PRASENJIT BAKSI PRASENJIT BAKSI @baksister

The writer is a veteran journalist.

Comment