এই মুহূর্তে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পেস আক্রমণ ভারতের, ভারতীয় ক্রিকেট এখন বেশ গতিময়

ভালো মানের পেসার আগেও ছিল, তবে এক সঙ্গে চারজন আগে দলে ছিল না

 |  4-minute read |   31-12-2018
  • Total Shares

১৯৯৮ সালের ইডেনের একটি টেস্ট ম্যাচের কথা মনে পড়ে গেল। কাঠফাটা গরমে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। আর ভারতের হয়ে নতুন বল হাতে জাভাগাল শ্রীনাথের সঙ্গে আক্রমণ শুরু করলেন ঘরের ছেলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই টেস্টে ছ'জন ব্যাটসম্যান একজন উইকেট রুক্ষক ও চার বোলার নিয়ে খেলতে নেমেছিল ভারত। চার বোলারের মধ্যে তিনজন স্পিনার আর একজন পেসার। তাই তো অলরাউন্ডার সৌরভকে দিয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করতে হয়েছিল।

বঙ্গ রাজনীতিতে একটা কথা প্রায়শই শোনা যায়: সিপিএম বা বামফ্রন্ট বিরোধীরা বলে থাকেন যে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইংরেজি তুলে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে নাকি অন্যান্য রাজ্য থেকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছিল জ্যোতি বসু নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার। ভারতীয় ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও এ ধরণের একটি সমালোচনা মাঝে মধ্যেই শোনা যায়। দেশের মাঠে তিন স্পিনার (কখনও আবার চার) নিয়ে মাঠে নেমে বিদেশের মাঠে টেস্ট জয়ের সম্ভাবনা প্রায় ম্লান করে দিয়েছিল আজহারউদ্দিন- অজিত ওয়াড়েকর জুটি।

নব্বইয়ের দশকে ভারতীয় ক্রিকেট দলের নিজস্ব একটি তকমা ছিল - 'দেশের মাঠে বাঘ বিদেশের মাটিতে ভিজে বিড়াল'। ভাঙা উইকেটে তিন বা চার স্পিনার নামিয়ে কখনও ইংল্যান্ড, কখনও অস্ট্রেলিয়া, কখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজ আবার কখনও নিউজিল্যান্ডকে পর্যদুস্ত করেছে আজহারের ভারত। যদিও তাদের দেশে গিয়ে তৎকালীন ভারতীয় দল প্রায় প্রতিবারই ল্যাজে গোবরে হয়েছিল।

এখানে একটা ছোট্ট তথ্য দিয়ে রাখি। ইডেনের যে টেস্টটির কথা প্রথমেই উল্লেখ করেছিলাম সেই টেস্টে সাড়ে চারদিনে শেষ হয়েছিল। আর, ম্যাচের সেরা কিন্তু কোনও স্পিনার হননি, সেই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন জাভাগাল শ্রীনাথ। অস্ট্রেলিয়ার ২০টি উইকেটের মধ্যে ৯টি উইকেট পেয়েছিল শ্রীনাথ-সৌরভ জুটি।

২০১৮ সালের বিরাট কোহলির ভারতের অবস্থাটা একেবারেই অন্যরকম। 'স্পিনারদের দেশ' ভারতের পেসাররা এখন সেয়ানে সেয়ানে পাল্লা দিয়ে চলেছেন বিশ্বের সর্বকালের সেরা পেস ব্যাটারির সঙ্গে।

body_123118011501.jpg

body1_123118011515.jpg

body2_123118011549.jpgভারতের পেস আক্রমণ এখন বিশ্ব সেরা [ছবি: রয়টার্স]

কী ভাবে? পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

বিভিন্ন দেশের দুনিয়া কাঁপানো পেসার ত্রয়ীর এক বছরের (ক্যালেন্ডার ইয়ার) উইকেট শিকারের দেখলেই বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। দেখা যাবে, এক বছরে সবচেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন বুমরা, সামি ও ইশান্ত। ২০১৮ সালে তাঁদের মোট শিকার সংখ্যা ১৩৪টি। ভেঙে দিয়েছেন ১৯৮৪ সালে গড়া মার্শাল হোল্ডিং ও জোয়েল গার্নারের রেকর্ড। সে বছর ক্যারাবিয়ান ত্রয়ীর সংগ্রহে ছিল ১৩০টি উইকেট।

বিদেশের মাঠে ভারতের টেস্ট জয়ের সংখ্যা বেড়েছে। আর, তার মূলে পেসাররা। বিপক্ষ দলের ২০টি উইকেট নেওয়ার মতো ক্ষমতা এখন ভারতীয় পেসারদের রয়েছে। আজহারের ভারত বা সৌরভের ভারতে যে ভালো মানের পেসার ছিল না তা নয়। কপিল দেব ছিলেন, জাভাগাল শ্রীনাথ ছিলেন, ভেঙ্কটেশ প্রসাদ ছিলেন, জাহির খান ছিলেন কিংবা আশিস নেহেরাও ছিলেন। কিন্তু বিরাটের ভারতের বিশেষত্ব হল এক সঙ্গে একই দলে চার পাঁচজন বিশ্বমানের পেসার রয়েছেন, যা আগে কোন দিনও কোন ভারতীয় দলে দেখতে পাওয়া যায়নি।

এক সঙ্গে এতগুলো বিশ্বমানের পেস বোলার থাকা মানে লড়াইটা শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও। লড়াইটা শুধু বিপক্ষের সঙ্গে নয়, নিজেদের সঙ্গেও। একটা কী দুটি ম্যাচ খারাপ খেলা মানেই সাজঘরে বসে সময়ে কাটাতে হতে পারে। কারণ পরিবর্ত পেসারটি যিনি এতদিন সাজঘরে সময় কাটাচ্ছিলেন তিনিও বিশ্বমানের। আর একবার প্রথম একাদশ থেকে বাদ পড়া মানে প্রত্যাবর্তনটা মোটেই সহজ হবে না। সুতরাং আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই।

এবছরের অনান্য দেশগুলোর পেস ত্রয়ীর পারফর্ম্যান্স যদি মিলিয়ে দেখা যায় তা হলে দেখতে পাবেন উইকেট শিকারের দিক থেকে দু'নম্বরে রয়েছে দক্ষিন আফ্রিকার পেস ত্রয়ী। কিন্তু ইশান্তদের ১৩৪টি শিকারের তুলনায় তাঁরা কিন্তু অনেকটাই পিছিয়ে। তাঁদের শিকার সংখ্যা মাত্র ১১২টি। সবচেয়ে বড় কথা, ১১২টির মধ্যে রাবাডা একাই ৫২টি উইকেট পেয়েছেন। অন্য দু'জন ফিল্যান্ডার (৩২) ও মর্কেলের (২৮) শিকার সংখ্যা তুলনায় অনেকটাই কম। অন্যদিকে ভারতের তিন পেসারের - বুমরা (৪৭), সামি (৪৭) ও ইশান্ত শর্মা (৪০) শিকার সংখ্যার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই।

এই পরিসংখ্যানগুলো থেকে একটা বিষয়ে পরিষ্কার, ভারতে এখন শুধু পেসার তৈরি হচ্ছে না। বরঞ্চ বলা ভালো, গুণগত মানের পেসার হচ্ছে। বিরাটের তূণ এখন পেসারময়। চাইলে, তিনজন কেন পাঁচ জন পেসার নিয়েও প্রথম একাদশ সাজাতে পারে ভারত।

নব্বই দশকের কথা বলছিলাম। কী এমন ঘটে গেল মধ্যে দু'দশকে যে বিশ্বের সেরা পেস আক্রমণের স্বীকৃত আদায় করে নিল বেদী, প্রসন্ন, চন্দ্রশেখর, বেঙ্কটপতি রাজু, রাজেশ চৌহান বা অনিল কুম্বলের ভারত?

ভারতীয় পেস বোলিংয়ের ভোল পাল্টে দেওয়া যাওয়ার জন্য কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে প্রতিভাবান পেসার বাছাই করে তাদের ঘসেমেঝে বিশ্বমানের তৈরি করতে কোনও কসুর করেনি ভারতীয় বোর্ড। এই তরুণ প্রতিভাবানদের ফিটনেস থেকে শুরু করে যাবতীয় সব কিছুর উপরেই তীক্ষ্ণ নজর রেখেছিল ভারতীয় বোর্ড। তারপর যথা সময় তাদের জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

কৃতিত্ব দিতে হবে টিম ম্যানেজমেন্ট এবং অধিনায়ক বিরাট কোহালিকেও। বর্তমান ভারতীয় দলের টিম ম্যানজেমেন্ট শুধুমাত্র পেসারদের সম্মান করে না, তাঁদেরকে বহু মূল্যবান সম্পদের মতো আগলে রাখেন। এই তো কিছুদিন আগে শোনা গিয়েছিল যে নিজেদের বিজনেস ক্লাসের আসনটি পেসারদের জন্য ছেড়ে দিয়ে ইকোনোমি ক্লাসে গিয়ে বসেছিলেন বিরাট ও অনুষ্কা। যাতে, বিমানে পা ছড়িয়ে বসতে পারেন বুমরারা।

বিরাটদের এই আত্মত্যাগের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। আর এই আত্মত্যাগের ফল তো ক্রিকেট মাঠেই পাওয়া যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ক্যাঙ্গারুরা নাকানি চোবানি খাচ্ছে।

আগামী সপ্তাহে শুরু হচ্ছে সিডনি টেস্ট। আর এই টেস্ট জেতার জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা করবে অস্ট্রলিয়া। একটা কথা কিন্তু স্বচ্ছন্দে বলে ফেলা যায়। উইকেট নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কিন্তু খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না তারা।

ঘূর্ণি উইকেটে আমরা বরাবরই স্বচ্ছন্দ। আর, ভারতীয় ক্রিকেট এখন আক্ষরিক অর্থে গতিময়ও।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ARPIT BASU ARPIT BASU @virusfound007

Arpit Basu is the Special Correspondent with the India Today Group’s fact check team. With more than one-and-a-half decade's experience in print and digital media, he has reported on aviation, transport, crime, civic and human interests issues. His sting operation on how precious Aviation Turbine Fuel, meant for Kolkata airport, was pilfered and sold in local market as ‘white kerosene’ received widespread acclaim. Arpit has worked with reputed media houses like The Times of India and Hindustan Times and had received letter of appreciation for reporting during the Phalin cyclone in Odisha in 2013.

Comment