প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষের ১০০ বছর, যে কলকাতা মনে করিয়ে দেয় ফুলের মূল্য

রাসকিন বন্ডের পিতার সমাধিও রয়েছে এখানেই

 |  3-minute read |   29-11-2018
  • Total Shares

ডেরা গাজি খাঁয়ে ফ্রাঙ্কের সমাধির পাশেও কি এমন ভাবে ফুলগাছ হয়ে আছে? সমাধিটা দেখে প্রথমে এই কথাটিই মনে হল। মনে পড়ে গেল প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ফুলের মূল্য গল্পটির কথা। ম্যাগির বহু কষ্টার্জিত শিলিং ফিরিয়ে দিয়ে সে দিন মিস্টার গুপ্ত বলতে পারেননি, “আমাদের দেশে ফুল যেখানে অজস্র পরিমাণে পাওয়া যায় পয়সা দিয়া কিনিতে হয় না।”

কলকতায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নিহত সেনার সমাধিফলকের পাশে ফুলের গাছ দেখেই মনে পড়ে গেল ম্যাগির কথা, বছর তেরো-চোদ্দোর অ্যালিস মার্গারেট ক্লিফোর্ড। সামান্য আয়ের সেই মেয়েটি অতি কষ্টে রোজগার করা একটা শিলিং (এক পাউন্ডের ২০ ভাগের এক ভাগ বা ১২ পেনি) দিয়েছিল লেখকের হাতে, তাঁর ভাই ফ্রাঙ্কের সমাধিতে ফুল দেওয়ার জন্য। 

flower_112918043727.jpgফুল ফুটে রয়েছে সমাধির পাশে (ডেইলিও বাংলা)

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে ১০০ বছর আগে, ১১ নভেম্বর। কলকাতা শহরে সেই বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের সমাধিস্থল রয়েছে আলিপুরের কাছে কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভসে। বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই এই সমাধিস্থল ছিল, তাই দুই বিশ্বযুদ্ধের জওয়ানদের মাঝে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন যোদ্ধা নন এমন অনেক ব্যক্তিও। রাসকিন বন্ডের পিতার সমাধিও রয়েছে এখানেই।

প্রতিটি ফলকে শুধু জওয়ানের নামই নয়, লেখা রয়েছে তিনি কোন রেজিমেন্টের, সেই পরিচয়ও। আর রয়েছে সেই রেজিমেন্টের মনোগ্রাম।

রয়্যাল ওয়ারউইকশায়ার রেজিমেন্টের মনোগ্রাম দেখে থমকে দাঁড়ালাম। ২৮৩ বছর আগে তৈরি হওয়া এই রেজিমেন্টের মনোগ্রামে রয়েছে এ দেশের কৃষ্ণসার মৃগ। লোগের সেই ম্যাসকটের নাম ববি। ম্যাগির দেওয়া সেই শিলিংটার সঙ্গে কোথাও যেন মিল খুঁজে পেলাম। শিলিংকেও তো সে দেশে চলতি কথায় বব বলে তো!

aaa_112918052733.jpgরয়্যাল ওয়ারইউকশায়ারের লোগোয় ভারতীয় কৃষ্ণসার ববি (ডেইলিও বাংলা)

১৮৮১ সালে তৈরি হওয়া ইয়র্ক অ্যান্ড ল্যাঙ্কাস্টারের ক্যাপ-ব্যাজে রয়েছে বাঘ, মানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, ১৯১৮ সালের মার্চে যে উইমেন্স অকজিলিয়ারি ফোর্স তৈরি হয়েছিল, সেই ফোর্সের এক সেনাকর্মীর সমাধিও রয়েছে এই সমাধিস্থলে।

কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশনের তত্ত্বাবধানে রয়েছে ভবানীপুর সেমেট্রির এই অংশটুকু। সমাধিস্থলটি সরকারি ভাবে ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত, তবে মূল ফটক দিয়ে ঢুকে বাঁ দিকে গেলে তার অনের আগের সমাধিফলকও দেখা যাবে ১৮৬৪ সালের আগেও এখানে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমাধিস্থ করা হয়েছে। লিখিত ইতিহাস অনুযায়ী, ফোর্ট উইলিয়ামের ব্রিটিশ সেনাকর্মী ও তাঁদের পরিবারের লোকের জন্য ব্রিটিশ আমলে এই সমাধিক্ষেত্রটি ব্যবহার করা হত।

প্রথমে সামরিক ও অসামরিক বলে আলাদা জায়গা চিহ্নিত করা ছিল না, তবে ১৯৫৪ সালে ভবানীপুর সিমেট্রির একাংশ নির্দিষ্ট করা হয় যাঁরা দুই বিশ্বযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের জন্য। তাই এই অংশেও এমন অনেকের সমাধি রয়েছে যাঁরা যুদ্ধে প্রাণ দেননি। সমাধিফলকের ধরণ দেখলেই অবশ্য তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ৯৫ জন ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৬১৭ জন শেষ শয্যায় শায়িত রয়েছেন এখানে। খ্রিস্টান ছাড়াও হিন্দু ও মুসলমান জওয়ানের সমাধিও এখানে আছে। আর এই অংশে রয়েছে ২২৫টি অসামরিক সমাধি।

last-pic_112918052814.jpgদুই বিশ্বযুদ্ধের জওয়ানদের সমাধি (ডেইলিও বাংলা)

তাজমহলের মতো ঔজ্বল্য নেই এই সমাধিস্থলের, থাকার কথাও নয়। শুকনো ফুলের ভার, আবেগ, কোনও নেই কোনও সমাধিফলকের গায়ে। না জানা বীরগাথা আর বীরত্ব সম্বল করে চিরশয্যায় শায়িত রয়েছেন দেশের জন্য দেশ ছেড়ে দূরে পাড়ি দেওয়া ফ্রাঙ্কের মতো বীরেরা। হয়তো কোনও দিন ম্যাগির কোনও উত্তরসূরী এখানে এসে খুঁজে নেবেন কোনও ফ্রাঙ্ককে, তারপরে তাঁর সমাধির সামনে ফুল রেখে বাতি জ্বেলে দেবেন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment