ব্রিগেড সমাবেশ: যে পাঁচটি কারণে শহরবাসীর বড় অংশ ব্রিগেড পছন্দ করেন না

পর্যটন শিল্পে নতুন বর্ণমালার জন্ম দিয়েছে ব্রিগেড সমাবেশ: 'ব্রিগেড পর্যটক'

 |  4-minute read |   17-01-2019
  • Total Shares

দেখতে দেখতে আবার একটি ব্রিগেড চলে এল। এবার ব্রিগেড ডেকেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মমতা বন্দ্যোপধ্যায়ের নেতৃত্বে আসন্ন ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের বিরোধী জোটের ভবিষ্যৎ অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যাবে এই ব্রিগেডে। কংগ্রেস কি তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধী শিবিরে যোগ দিতে আগ্রহী? আর কোন কোন আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল এই শিবিরে যোগ দেবে তাও নাকি এই ব্রিগেড সমাবেশে স্পষ্ট হয়ে যাবে!

তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে এই ব্রিগেড সমাবেশের গুরুত্ব অসীম। হয়তো, আগামী পাঁচ বছর দেশের শাসন ব্যবস্থা কার হাতে থাকবে তারও কিছুটা আভাস পাওয়া যেতে পারে এই সমাবেশে। শোনা যাচ্ছে, বিজেপিও প্রস্তুত হচ্ছে পাল্টা ব্রিগেড সমাবেশের জন্য। বছরে অন্তত একটা ব্রিগেড সমাবেশ বামফ্রন্টের পুরানো রেওয়াজ। বলতে গেলে, কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সমাবেশ অনুষ্ঠিত করার অন্যতম পথিকৃৎ রাজ্যের বামদলগুলো।

তবে সিপিএম বা তৃণমূল কিংবা কংগ্রেস বা বিজেপি যে দলই ব্রিগেড সমাবেশ ডাকুক না কেন, শহরবাসীর এক বড় অংশই এই ব্রিগেড সমাবেশ পছন্দ করেন না।

কেন? আসুন দেখে নেওয়া যাক কোন পাঁচটি কারণের জন্য ব্রিগেড সমাবেশ শহরবাসীর এক বড় অংশের ঘোরতর অপছন্দ।

আগমনের বার্তা

মহালয়া যেমন মা দুর্গার মর্ত্যে আগমনের বার্তা জানান দেয়, ঠিক সেই ভাবেই ব্রিগেড সমাবেশের সপ্তাহখানেক আগে স্থানীয় নেতারা ব্রিগেড সমাবেশের জন্য নির্দিষ্ট দিনটির আগমনের বার্তা দিয়ে থাকেন। তবে সেই বার্তা প্রেরণের প্রক্রিয়া ওষ্ঠাগত করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। প্রায় প্রতিদিনই পাড়ায় পাড়ায় মঞ্চ বেঁধে স্থানীয় নেতারা স্থানীয় দলীয় সমর্থকদের বোঝানোর চেষ্টা করে থাকেন ব্রিগেডে যোগ দেওয়ার উপকারিতা কী কী।

বৈঠকগুলোতে যোগ দিতে না পারলে (পড়ুন না চাইলে) কুছ পরোয়া নেই। আপনি বাড়িতে বসেই শুনতে পাবেন স্থানীয় নেতার বক্তব্য। মাইক্রোফোন কোনও শব্দ ডেসিবেল মানে না। সুতারং, স্থানীয় নেতার জ্ঞানের হাত থেকে রক্ষা পেতে আপনার কাছে একটি মাত্র উপায় রয়েছে। রাত করে পাড়ায় ফেরা।

body1_011719050434.jpgব্রিগেডের দিন সাতেক আগে থেকেই পাড়ায় পাড়ায় আগোওমনের বার্তা শোনা যায় [নিজস্ব চিত্র]

এই স্থানীয় নেতা যদি কেউকেটা হন তা হলে তো সোনায় সোহাগা। মঞ্চ পাড়ার সরু গলিতে নয়, বড় রাস্তার এক ধারে তৈরি করা হবে। এর ফলে, যানবাহন চলাচলের গতি কমলেও নেতার কোনও যায় আসে না। তাঁর জ্ঞান অনেক বেশি সংখ্যক লোক শুনছেন। এটাই তো তাঁর পরম পাওনা। হাজার হোক, ব্রিগেডের দিন তাঁর পাড়া থেকে কত লোক ব্রিগেডে উপস্থিত থাকবে তার উপর তো সেই নেতার পারফর্ম্যান্স বিচার করা হবে দলের পক্ষ থেকে।

ব্রিগেডের দিনে যানজট

ব্রিগেড মানেই যানজট। লক্ষাধিক লোক যদি কলকাতার কেন্দ্রস্থলে এসে জমায়েত হয় তাহলে কী অবস্থা হতে পারে বুঝতে পারছেন। কিন্তু শহরের অন্যান্য অঞ্চলগুলোতেও একই অবস্থা। অনেকেই যেমন নিজেদের এলাকা থেকে বাস বা ম্যাটাডোর ভাড়া (যদিও ভাড়া দেওয়া হয় কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে) করে আসেন, অনেক নেতাই তাঁদের অনুগামীদের নিয়ে মিছিল করে ব্রিগেড যেতে পছন্দ করেন।

কয়েক'শো লোক নিয়ে মিছিল করে ব্রিগেড যাচ্ছি। এ দৃশ্য যদি এলাকার লোক দেখতে না পেলে নেতা হিসেবে দর উঠবে কেমন করে। তাই তো একেবারে রাস্তা আটকে, বুক ফুলিয়ে, বীর প্রতাপে মিছিল করে নেতারা এগিয়ে চলেন ব্রিগেডের উদ্দেশ্যে।

যাঁরা অফিসে কাজে যোগ দিতেন যাচ্ছেন বা অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছেন তাঁদের অসুবিধা নিয়ে এই নেতাদের কোনও মাথা ব্যাথা নেই। ব্রিগেডের দিন ব্রিগেড ছাড়া আর কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে নাকি? ঠিকই তো, আসলে আমরাই যে মূর্খের স্বর্গে বাস করছি।

ব্রিগেড পর্যটক

ব্রিগেড মানেই লোক টানতে হবে। তাই শুধু কলকাতা নয়, মফস্বল এমনকি বিভিন্ন জেলা থেকে শয়ে শয়ে লোক কলকাতায় আসে। এদের জন্য দলের তরফ থেকে যানবাহন, প্রাতঃরাশ এমনকি মধ্যাহ্ন ভোজের ব্যবস্থা করা হয়। ব্রিগেডে হাজিরা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। দুপুরের খাওয়া শেষ। এর পর খামোকা কেন সমাবেশে নেতা নেত্রীদের ভাষণ শুনতে যাব! তার চাইতে শহরটা একটু ঘুরে দেখলে ক্ষতি কী? সামনেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল বা কলকাতা জাদুঘর। খানিক দূরেই চিড়িয়াখানা। হাতে সময় থাকলে একটু সায়েন্স সিটিটাও ঘুরে দেখা যাক।

কলকাতার এই সব দ্রষ্টব্য স্থান পর্যটকদের জন্য। তাই ঘুরে দেখলে ক্ষতি কী? ক্ষতি রয়েছে। কারণ এই স্থানগুলো আবর্জনাময় করে তোলার ব্যাপারে বেশ সুনাম রয়েছে এই ব্রিগেড পর্যটকদের।

body_011719050537.jpgব্রিগেড মানেই ময়দানে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম [ছবি: পিটিআই]

সমাবেশের পরের দিন ব্রিগেডে যাওয়া বেশ যন্ত্রণাদায়ক। আগের দিনই যে ময়দানটা খোলা রান্নাঘরে পরিণত হয়েছিল। যেন রাজনৈতিক সমাবেশ নয় পিকনিক চলছিল। সব মিলিয়ে ব্রিগেডের দিনে ব্রিগেড পর্যটকদের নিয়ে বেশ চিন্তায় থাকে শহর কলকাতা।

মেট্রো রেলেও ভিড়

ব্রিগেডের দিন অফিস জনতা যানজটের ভয় বাস ছেড়ে মেট্রোতে চাপতে পছন্দ করেন। কিন্তু সেখানেও বিধি বাম। দক্ষিণে গড়িয়া আর উত্তরে দমদম থেকে দিনের ব্যস্ত সময়ের অধিকাংশটাই চলে যায় ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দিতে চলা রাজনৈতিক কর্মী সমর্থকদের দখলে। সব মিলিয়ে অফিস পৌঁছানো দেরিতে। কাজ শেষ করতে দেরি। অতএব বাড়ি ফিরতেও দেরি। এর চাইতে হয়ত হরতাল ভালো। হাজার হোক, রাস্তা ঘাট কিছুটা হলেও ফাঁকা থাকে।

গণ পরিবহণের অভাব

আপনি হয়ত বাড়ির সামনে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আপনার নিত্যদিনের বাসরুটের বাসটি আপনাকে না তুলে সোজা ঝড়ের গতিতে আপনার সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেল। আসলে সেদিন যে বাসটি রুটে চলছে না। অধিকাংশ নেতাই বাস ভাড়া করে নিয়েছে। সেই বাসে চেপে দলীয় অনুগামীরা ব্রিগেড যাবে। ট্যাক্সি? না, ট্যাক্সিও অন্যদিনের তুলনায় অনেক কম। কারণ চালকরা যে একদিনের ছুটি করে ব্রিগেড গিয়েছেন।

ব্রিগেডের দিন দশটা পাঁচটা অফিস করা সাধারণ চাকুরীজীবিদের একটাই আফসোস থাকে - চাকরি না করে রাজনীতি করলে ভালো হত। হাজার হোক, ঝক্কি পুহিয়ে অফিস যেতে হত না। ব্রিগেডে গিয়ে একটু পিকনিক করলেই কেল্লা ফতে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment