গয়ায় বছর ষোলোর মেয়েকে নির্মম ভাবে হত্যা: ছোট শহরের ছোট ঘটনায় তেমন হইচই হয় না
মেয়েটির মাথা কাটা হয়েছে ও মুখ অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি
- Total Shares
২৮ ডিসেম্বর বিহারের গয়া নিবাসী এক বছর ষোলোর মেয়ে তার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়।
এর ন'দিন পর তার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করা করা সম্ভব হয় - তার মাথা কেটে দেওয়া হয়েছিল, বুকে একাধিকবার আঘাত করা হয়েছিল আর মুখ অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এরও চার দিন পরে জাতীয় সংবাদমাধ্যম এই খবরটি নিয়ে হৈচৈ শুরু করে দেয় যখন স্থানীয় লোকেরা রাস্তায় নেমে অভিযোগ করে, হত্যা করার আগে মেয়েটিকে ধর্ষণও করা হয়েছিল।
এখনও অবধি এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টও এখনও পাওয়া যায়নি।
প্রতিবাদে পথে না নামলে শিশুধর্ষণ ও খুনের মামলায় তদন্ত হয় না [ছবি: পিটিআই]
মেয়েটির পরিবারের তরফ থেকে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলা হয়েছে। পুলিশ পাল্টা দাবি করেছে যে পরিবারের সম্মানরক্ষার্থে মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে।বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এখনও এই বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
চিন্তা করে দেখুন, এই ধরণের একটি অপরাধ যদি কোনও রাজনৈতিক নেতা বা ক্ষমতাশালী লোকের সন্তানের সঙ্গে ঘটত তা হলে কী হত? চিন্তা করে দেখুন, এই ধরণের ঘটনা যদি দিল্লি বা অন্য কোনও বড় শহরে ঘটত তা হলে কী হত?
সে ক্ষেত্রে যে মেয়েটির দেহ পাওয়াই যেত কিংবা অপরাধীকে গ্রেফতার করা হতই -- এমন কোনও নিশ্চয়তা দেওয়া না ঠিকই, কিন্তু ঘটনাটি নিয়ে নিঃসন্দেহে অনেক বেশি শোরগোল পড়ে যেত।
মোমবাতি হাতে মিছিল নামত রাস্তায়। টিভি ক্যামেরা তাদের অনুসরণ করত। রাজনৈতিক নেতারা টিভির পর্দার সামনে তর্ক জুড়ে দিতেন। আদালতেও বেশ কয়েকটি হলফনামা পেশ করা হত।
এর পাশাপাশি বাড়তি কিছু চোখের জলও পড়ত।
এর কোনওটাই অবশ্য ১৬ বছরের মেয়েটিকে ফেরত পেতে সাহায্য করত না, কিন্তু মেয়েটির নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বা মেয়েটির মৃত্যু নিয়ে মানুষ যে উদ্বিগ্ন সে কথা প্রকাশ পেত।
কিন্তু ছোট শহর বা ছোট মফস্বল নিয়ে কারোরই কোনও মাথাব্যাথা নেই।
'ছোট' লোকেদেরও কোনও গুরুত্ব নেই। তাদের বেঁচে থাকা বা মরে যাওয়ায় কারোরই কিছু আসে যায় না।
শুধুমাত্র যখন গয়ার কয়েকজন সমাজকর্মী পথে নামলেন আর মেয়েটির ক্ষতবিক্ষত শরীরের ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হল তখন সংবাদমাধ্যমে এই খবরটা প্রকাশ পেল।
মামলাটির তদন্তও সে ভাবে হয়নি। পরিবারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে যে নিখোঁজ ডায়েরি করার পরেও পুলিশ মেয়েটিকে খুঁজে বের করতে তৎপর হয়নি। উল্টোদিকে পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েটি ২৮ ডিসেম্বর পালিয়ে গেলেও ৩১ ডিসেম্বর আবার বাড়ি ফিরে এসেছিল। সেই রাত্রেই মেয়েটির বাবা তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে মেয়েটিকে বাড়ির বাইরে পাঠান। এই 'বন্ধু' ভদ্রলোকটি আগাগোড়াই স্থানীয় মস্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
নীতীশ কুমারকেও অনেক কিছুর জবাব দিতে হবে, কিন্তু প্রশ্নগুলো করবে কে? [ছবি: পিটিআই]
ঘটনা যায় ঘটুক না কেন, একজন ১৬ বছরের মেয়েকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে এবং আইনি ব্যবস্থা তাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ - মৃত্যুর আগেও এমনকি মৃত্যুর পরেও।
এই ঘটনায় যদি হলফনামার বন্যা বয়ে যেত, একের পর এক প্রতিবাদ শুরু হত কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে হ্যাসট্যাগ চালু হত তাহলে হয়তো পুলিশ অনেক বেশি সক্রিয় হত। মুখ্যমন্ত্রীও হয়ত নিজেকে 'সুশাসন বাবু' বলে প্রমাণ করতে উঠে পড়ে বসতেন। সংবাদমাধ্যমে অন্তত একবার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতেন এবং অন্তত একবার মেয়েটির বাড়ি ঘুরে আসতেন।
এই ধরণের সামাজিক বিষয়গুলোর উপর যদি একটি ১৬ বছরের মেয়ের ধর্ষণ ও খুনের তদন্ত নির্ভর করে তা হলে এ দেশের নারী সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে খামোকা অভিযোগ করে লাভ নেই। মুখ্যমন্ত্রীও যদি এ ধরণের নিন্দনীয় ঘটনার পর মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে নির্বাচনী ইস্যুতে নারী সুরক্ষার কোনও জায়গাই নেই।
নীতীশ কুমার সুশাসনের জন্য শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে উঠেছেন।
কিন্তু মুজাফ্ফরপুরের আবাসিক হোমের মামলার তদন্তের বহর আর এই মেয়েটির ঘটনার পর তাঁর অদ্ভুত নীরবতা এই সুশাসন যথেষ্ট প্রশ্ন চিহ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
ক্ষমতাবান লোকেরা যদি সময় সুযোগ পান তাহলে হয়তো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে