প্রতিষ্ঠান খাঁচায় বন্দি: সিবিআই সংঘাত এই কথাই প্রমাণ করে

আইন মহান, তবে পরিস্থিতি দেখে শুনে মনে হচ্ছে রাজনীতি হল মহত্তর

 |  4-minute read |   14-01-2019
  • Total Shares

রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার অবস্থা বেশ টালমাটাল। আর্থিক দিক থেকে দুর্বলদের জন্য সম্প্রতি আইন পাস করা হল। লোকসভা ও রাজ্যসভাতে এই বিল পাস হতে আর্ধেক কার্যদিবসও সময় লাগল না। এর থেকে এক বার্তাই পাওয়া যাচ্ছে - সংসদের এতটাই করুণ দশা যে দেশের সংবিধানকে নিয়ে খেয়াল খুশি মতো খেলা করতে পারে। আর এ সবের মাঝখানেই, এক রাশ লজ্জা দিয়ে মঞ্চে অবতীর্ণ হল দেশের গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই।

১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতের এই প্রথম সারির গোয়েন্দা সংস্থার অপমানে মাথা নিচু হয়ে যাওয়ার কথা এই মুহূর্তে। আমরা কোনও না কোনও প্রতিষ্ঠান দ্বারা চালিত। আর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আইনটা অবশ্যই অভিন্ন হওয়া প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানিক মর্যাদা আর অভিন্নতাই হল সংবিধানের মর্যাদা। 

body_011419054005.jpgভার্মাকে কি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল? [ছবি: পিটিআই]

আইনের প্যাঁচ

২৩ অক্টোবর ২০১৮ সালে অলোক ভার্মাকে সিবিআই নির্দেশকের পদ থেকে অপসারণের পরেই নাগেশ্বর রাওকে অস্থায়ী নির্দেশক হিসাবে নিয়োগ করা হয়। এর আগে ৩১ অগস্ট সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিটির কাছে অলোক ভার্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।

প্রশ্ন উঠতেই পারে, অগস্ট থেকে অক্টোবর -- মাঝের এই তিন মাস ধরে সিভিসি কী করছিল?

যাঁর বিরুদ্ধে তখন ফৌজদারি মামলা চলছিল, ভার্মার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সেই রাকেশ আস্থানাই।

আস্থানার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তকারীদেরকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি করে দেওয়া হয়। এ সব করার পরে সরকারকে কতটা নিরপরাধ বলা যেতে পারে?

প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কল এবং কেএম জোসেফের বেঞ্চ অলোক ভার্মাকে অপসারণের সিভিসির সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়ে ভার্মাকে আবার সিবিআই নির্দেশকের পদেই পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়।

৩১ জানুয়ারি অবসর গ্রহণ করার কথা ছিল অলোক ভার্মার।

তবে এ থেকে দু'টি বিষয় থেকে বোঝা যাচ্ছে -- পুনর্নিয়োগের নির্দেশ দিলেও আদালত পুরোপুরি ভাবে ভার্মার উপরে বিশ্বাস করেনি। প্রথমত ডিরেক্টর থাকলেও তিনি কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না বলে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেতা ও প্রধানবিচারপতি-বিশিষ্ট বিশেষ নিয়োগ কমিটিকে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে সাতদিন সময় দেওয়া হয়েছিল ভার্মার ভবিষ্যৎ ঠিক করার জন্য।

ভার্মার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সেই রিপোর্টকে প্রকাশ্যে আনা হয়নি। সাধারণত, এসব ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উপর পরবর্তী পদক্ষেপের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পর একদিনের মধ্যে বিশেষ কমিটি বৈঠক করেন যেখানে উপস্থিত ছিলেন প্ৰধানমন্ত্ৰী, লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে ও প্রধান বিচারপতির মনোনীত ব্যক্তি হিসেবে বিচারপতি একে সিক্রি।

প্রক্রিয়ায় গলদ

ভার্মাকে ডিজি ফায়ার, হোম গার্ডস ও সিভিল ডিফেন্সের অধিকর্তা পদে বদলি করার কথা ছিল। এই ধরনের বদলিতে আদালতের নির্দেশের প্রয়োজন না হলেও উপযুক্ত কারণ দর্শানোর প্রয়োজন হয়।

এ ক্ষত্রে বিষয়টিকে কী ভাবে আইনি করা হল?

বদলির নির্দেশ যখন দেওয়া হয়েছে তখন নিশ্চয় সরকারের পক্ষ থাকে পর্যাপ্ত কারণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভার্মাকে কি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল?

সুপ্রিম কোর্টও বিষয়টি নিয়ে তাড়াহুড়ো না করে বিশেষ কমিটিকে সাত দিনের সময় দিয়েছিল। এর কি কোনও প্রয়োজন ছিল ? ভার্মার ক্ষমতা এমনিতেই সুপ্রিম কোর্ট খর্ব করে দিয়েছিল। তার উপর তাঁকে আরও কোণঠাসা করা হল।

এর আগে অস্থায়ী ডিরেক্টরের দেওয়া বদলির নির্দেশগুলো ভার্মা প্রত্যাহার করেছিলেন।

এতেই কি নরেন্দ্র মোদীর সমস্যা হচ্ছিল? বিশেষ কমিটির কর্মপদ্ধতিও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।

প্রাক্তন বিচারপতি অনঙ্গ কুমার পট্টনায়ককে সুপ্রিম কোর্ট নিয়োগ করেছিল ২০১৮ সালে। ভার্মার বিরুদ্ধে সিভিসির তদন্ত প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখার জন্য। তিনি কিন্তু সিভিসির তদন্ত প্রক্রিয়ায় খুশি ছিলেন না। জানিয়েছিলেন, "সিভিসি কখনোই শেষ কথা হতে পারে না। ভার্মার বিরুদ্ধে কেলেঙ্কারির কোনও উপযুক্ত প্রমাণ নেই।" আদালতের উচিত ছিল এই মামলায় এই পুরোনো প্রসঙ্গকে ক্ষতিয়ে দেখা।

body1_011419054112.jpgভারতের এই তদনকারী সংস্থা এখন অপমানে জর্জরিত [ছবি: পিটিআই]

খেলাটা কী

এই সব ঘটনার মাঝেই পদত্যাগ করেছিলেন ভার্মা। আত্মপক্ষ সমালোচনার সুযোগ না পেয়ে এমনিতেই ক্ষিপ্ত ছিলেন তিনি। এর পর কার্যকাল শেষ হওয়ার আগে তাঁকে বদলি করে দেওয়ায় অপমানিত বোধ করেছিলেন তিনি।

এর পরেই দায়িত্ব নিয়ে নাগেশ্বর রাও ভার্মার প্রত্যাহার করা বদলির নির্দেশগুলো আবার কার্যকর করে ফেললেন।

এরই মাঝে দিল্লি হাইকোর্ট জানালো যে আস্থানার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মামলা কোনও মতেই খারিজ করা যাবে না।

ভুলটা কোথায় হয়েছিল?

অক্টোবর ২০১৮ সালে ভার্মার বদলি একটা ষড়যন্ত্রের অঙ্গ ছিল। সুপ্রিম কোর্ট ঠিক কথাই বলেছে, এই বদলি আইনসিদ্ধ ছিল না।

তবে আমার মতে, বিশেষ কমিটি গঠন ও ভার্মার ক্ষমতা খর্বের যে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছিল তা ভুল।

এই অচলাবস্থা সৃষ্টির জন্য মোদী সরকার প্রথম থেকেই দায়ী। ভার্মাকে নির্দেশক করে দেওয়ার পরে আস্থানাকে সমমর্যাদার একটি পদে বসানোর প্রয়োজনটা কী ছিল?

ঈশ্বর মহান, কিন্তু দু'জনকে পাশাপাশি বসিয়ে দেওয়ার খেসারত তার চেয়েও বেশি...।

আইন মহান, কিন্তু দেখে শুনে মনে হচ্ছে রাজনীতি অনেক বেশি মহত্তর।

(সৌজন্য: মেল টুডে)

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

RAJEEV DHAVAN RAJEEV DHAVAN

Supreme Court lawyer.

Comment