আগুন নেভানোর জন্যে নয়, অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা লাগানো হয় শুধুমাত্র দমকলের ছাড়পত্র পেতে

বুঝতে হবে লাইসেন্সের জন্য নয়, বাঁচার জন্য অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা অতি জরুরি

 |  2-minute read |   21-09-2018
  • Total Shares

লক্ষ একটাই। যেনতেন প্রকারে দমকলের ছাড়পত্র জোগাড় করতে হবে। আর, ছাড়পত্র একবার হাতে চলে এলে আগুন প্রতিরোধ ব্যবস্থা সচল থাকুক বা অচল থাকুক তাতে অবশ্য কারুর খুব একটা মাথা ব্যাথা নেই। এর পর যদি কোনও বড় ধরণের অগ্নিকাণ্ড ঘটে তাহলে তো দমকল কর্মীরা রয়েছেনই।

ফের প্রমান করল বাগরি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ড

বাগরি মার্কেটে আগুনের পর আবারও একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে গেল। দমকলের ছাড়পত্র পেতে কলকাতা বহুতলে, বাজারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, হাসপাতালে বা বাণিজ্যিক বিল্ডিংগুলোতে অগ্নিনির্বাপন সরঞ্জাম লাগানো হলেও তা রক্ষনাবেক্ষন করা হয় না। এমনকি, প্রয়োজনে এই ব্যবস্থা কাজে লাগানোর মতো উপযুক্ত প্রশিক্ষণ বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকের ব্যবস্থাও করা হয় না।

বাগরি মার্কেটের ঘটনাতেই আসা যাক। দমকল বিভাগের কাছ থেকে লাইসেন্স পেতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই ব্যবস্থা ছিল কার্যত দৃশ্যত। ভূগর্ভস্থ জলাধার এবং ছাদেও বাসানো হয়েছিল জলের ট্যাঙ্ক। কিন্তু বহুদিন ধরেই এই ব্যবস্থা কী ভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে কোনও রকম মহড়াই হয়নি। রক্ষনাবেক্ষনেরও অভাব ছিল। যেদিন আগুন লাগলো সেদিন কোনও কাজেই এল না এই ব্যবস্থা। দমকল কর্মীদের একাংশের দাবি শুধু বাগরি মার্কেট শহরে যে সব জায়গায় অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা রয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ জায়গাতাই এই অবস্থা।

আইন কী বলছে

ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ১৫ মিটারের বেশি উচ্চতার বাড়ি হলেই দমকলের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। দমকলের কাছে একটা ফে জমা করে দমকল বিভাগের সুপারিশ মেনে ব্যবস্থা নিলেই এই ছাড়পত্র মেলে। তবে শুধু অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিলেই হবে না। তার উপযুক্ত রক্ষানাবেক্ষন করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় মেনে এই ব্যবস্থার মহড়া দিতে হবে। নিয়মানুযায়ী, প্রথম দু'বছরে তিন মাস অন্তর। এর পর থেকে বছরে দু'বার করে।

রক্ষনাবেক্ষন ও মহড়া ছাড়াও ওই বিল্ডিং-এ নিয়োগ করতে হবে অতন্ত দশজন সর্বক্ষণের ফায়ার ফাইটিং কর্মী। এছাড়া ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে প্রতি দু'বছর অন্তর ব্যবস্থার অডিট করতে হবে এবং এই অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

body_092118022540.jpgআগুন লাগলে দমকল কর্মীরা তো আছেন [ছবি: এএফপি]

বাস্তবে যা হচ্ছে

এই আইন যে পুরদস্তুর মানা হচ্ছে না তা বাগরি মার্কেটের আগুন থেকেই পরিষ্কার। অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা লাগিয়ে উপযুক্ত ফি দিয়ে দমকলের ছাড়পত্র আদায় করে নেওয়া হয়। বছর শেষে লাইসেন্স পাওয়ার আগে কোনও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ধরে এনে একবার মহড়া করিয়ে নেওয়া হয়। কারণ তা না করলে লাইসেন্স রেনুয়াল আটকে যেতে পারে।

কিন্তু পয়সা বাঁচাতে বছরভর রক্ষনাবেক্ষনের কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয় না। বড় বড় আবাসনগুলোতে বা শপিং মলে মূলত ঠিকাদার সংস্থার (সাধারণত সিকিউরিটি এজেন্সি) উপর এই অগ্নিনির্বাপনের কাজের দায়িত্ব দেওয়া থাকে। কিন্তু এই এজেন্সির কর্মচারীরা এই কাজে কতটা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বা কতটা দক্ষ তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

সমস্যা কোথায়

শুধু কতৃপক্ষকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের গোড়াতেই গলদ রয়েছে। অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থার বিশেষজ্ঞ হতে গেলে সার্টিফায়েড ইঞ্জিনিয়ার হতে হয়। কিন্তু এই ধরণের ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা এ রাজ্যে হাতে গোনা। আর তাই তাদের নিয়োগ করার খরচও অনেকটাই বেশি।

বাগরি, নন্দরাম মার্কেট বা এএমআরআই-এর ঘটনার রেশ টানতে সরকারের এই সার্টিফায়েড ইঞ্জিনিয়ারদের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া উচিত।

এর চাইতেও বেশি করে প্রয়োজন মানুষের মধ্যে সচেতনতা। মানুষকে বুঝতে হবে লাইসেন্স নয়, নিজেদের জীবন রক্ষার স্বার্থে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ARPIT BASU ARPIT BASU @virusfound007

Arpit Basu is the Special Correspondent with the India Today Group’s fact check team. With more than one-and-a-half decade's experience in print and digital media, he has reported on aviation, transport, crime, civic and human interests issues. His sting operation on how precious Aviation Turbine Fuel, meant for Kolkata airport, was pilfered and sold in local market as ‘white kerosene’ received widespread acclaim. Arpit has worked with reputed media houses like The Times of India and Hindustan Times and had received letter of appreciation for reporting during the Phalin cyclone in Odisha in 2013.

Comment