কোন কোন খাবার নিয়মিত খেলে হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা কম হয়
কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারদাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো
- Total Shares
যে সব খাবার খেলে হার্টের ক্ষতি হতে পারে বলে আগেকার দিনে মনে করা হত মনে করা হত, সেটা আর এখন মনে করা হয় না। হার্টের অসুখ হওয়ার পেছনে আগে কোলেস্টেরলকে দায়ী করা হলেও এখন আর তেমনটা করা হয় না।
প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে যে শরীরে যতটা কোলেস্টেরলের প্রয়োজন তার প্রায় ৮৫ শতাংশ কোলেস্টেরল যকৃতে উৎপন্ন হয় ও বাকি ১৫ শতাংশ আমরা খাবার থেকে পাই। তাই আমরা যদি এমন কোনও খাবার খাই যাতে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টরল আছে তখন শরীরের নিজের নিয়মেই যকৃতে কোলেস্টেরলের উৎপাদন কমে যায়। তাই অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার খেলে তেমন চিন্তার কারণ নেই।
তাই আমরা যদি কম পরিমাণে ফল, সবজি, বাদাম, বেশি পরিমাণে নুন ও চিনি এবং অতিরিক্ত পরিমাণে ক্ষতিকর স্নেহপদার্থ খাই তবে সেই অভ্যাস বদল করতে হবে।
দেখা গেছে যে শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে করোনারি ধমনীর সমস্যা এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা পর্যন্ত থাকে। ট্রান্স-ফ্যাট শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টরলের মাত্রা যেমন বাড়িয়ে দেয় ঠিক তেমন ভাবেই ভালো কোলেস্টরলের মাত্রা কম করে। এ ছাড়া, শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইড ও লিপোপ্রোটিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
জানেন কী কোন খাবারের অভাবে হৃদরোগ হতে পারে?
সম্প্রতি প্রস্পেক্টিভ আরবান রুরাল এপিডেমিওলজিক্যাল (পিওর)-এর একটি সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে। সমীক্ষাটি চলে মোটামুটি সাড়ে সাত বছর ধরে যেখানে ১৮টি দেশের অন্তত ১,৩৫,৩৩৫ জনের উপর সমীক্ষাটি করা হয়। সমীক্ষাটিতে দেখা যায় যে, যে সব মানুষ বেশি কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ (৬০ শতাংশর বেশি) খাবারদাবার খান তাঁদের মধ্যে হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি (যাঁদের উপরে সমীক্ষা করা হয়েছিল তাঁদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয় এই কারণে)। গবেষণাটিতে দেখা গেছে যে যে সব দেশের লোকের আয় খুব কম সেই সব দেশের একটা বড় সংখ্যক হৃদরোগী প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবারদাবার খান যেমন সাদা চাল এবং ময়দার পাঁউরুটি খান।
স্যাচুরেটেড ফ্যাটে ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা অনেক বেশি থাকে। যদিও পিওর-এর গবেষণার অনুসারে শরীরে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের ভূমিকা ঠিক কী সেটা গবেষণাসাপেক্ষ, তবে গবেষণা বলছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবারদাবার খেলে হার্ট ভালো থাকে। মিষ্টি এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারদাবার শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং অতিরিক্ত ঘন কোলেস্টরলের মাত্রা কম করে। পাশাপাশি কম ঘনত্ব সম্পন্ন লিপোপ্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে যা হার্টে ব্লকের আশঙ্কা বাড়ায়। তাই কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারদাবার কম খেতে পরামর্শ দেওয়া হয়। যদিও আমাদের শরীরে শক্তি জোগাবার জন্য ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ ক্যার্বোহাইড্রেটের প্রয়োজন পরে।
গবেষণা প্রমাণ করেছে যে ফলমূল এবং শাকসব্জিতে পটাশিয়াম থাকে যা হার্ট ভালো রাখে। তাই দিনে পাঁচবার না পারলেও তিন থেকে চারবার ফলমূল এবং শাকসবজি যদি খাওয়া যায় তাহলে তা শরীরের পক্ষে ভালো।
পরিমাণ মাফিক খাওয়াদাওয়া করাটাই হল আসল কথা। সোডিয়াম, পটাসিয়াম, নুনে থাকা ক্লোরাইড, ফলমূল ও শাকসবজি এই সব কিছুই খেতে হবে। কারণ এ সব খাবারদাবারের সঙ্গে কার্ডিওভাসকুলার সমস্যাগুলোর একটা সরাসরি যোগ রয়েছে। তাই এই খাবারদাবার যত বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে ততই কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা কম হবে। আবার কেউ যদি এই খাবারগুলো অতিরিক্ত মাত্রায় খান বা অনেক অল্প পরিমাণে খান তাতেও ক্ষতি হতে পারে।
রক্তের পক্ষে ক্ষতিকর পদার্থ যেমন মদ, তামাক বা স্বল্প ঘনত্বসম্পন্ন লিপোপ্রোটিনের মাত্রা যত বেশি হবে কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ততই বেশি হবে।
দেখা গেছে যে বাদাম খেলে বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা কম হয়। অঞ্চলভিত্তিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বাদাম খেলে কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যা হলেও তা জটিল হওয়ার আশঙ্কা কম হয়।
কার্বোহাইড্রেড সমৃদ্ধ খাবারদাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো
যাঁদের উপর প্রেডিমেড পরীক্ষা করা হয় তাঁদের প্রত্যেকদিন ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাবারদাবারের সঙ্গে বাদাম খেতে দেওয়া হয়। পরীক্ষার শেষে দেখা গেল যে এর ফলে কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৩০ শতাংশ কম হয়েছে এবং স্ট্রোক হওয়ার অশঙ্কা কম হয়েছে প্রায় ৪৯ শতাংশ। বাদাম খাওয়ার ফলে ডিএম-এর টাইপ-২, উচ্চরক্তচাপ এবং ডিস্প্লেপিডিমিয়া (dyslipidemia)-তে আক্রান্ত হওয়ার সমস্যা অনেকটা কম করে।
প্রাথমিক ভাবে হার্টের বিভিন্ন সমস্যার হাত থেকে মুক্ত থাকতে তাজা শাক-সব্জি ও ফলমূল, শিম জাতীয় খাবার খান এবং বাদাম খান। চিনি, নুন ও প্রক্রিয়াজাত খাবারদাবার খাওয়া কম করুন।
ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। একেবারে শেষে আর একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, হার্টের সমস্যার থেকে দূরে থাকতে এবং জীবনধারণের কুঅভ্যাসের ফলে যেসব শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয় তার থেকে দূরে থাকতে কায়িক পরিশ্রম করুন, তামাক এড়িয়ে চলুন, মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং পুষ্টিকর খাবারদাবার খান।
লেখাটা ইংরেজিতে পড়ুন