চৌষট্টি যোগিনীর মন্দির: যেখানে যোগিনীরা ভক্তদের মনোস্কামনা পূরণ করেন

ওড়িশার এই মন্দিরে মনে প্রাণে প্রার্থনা করলে এখনও যোগিনীরা ভক্তদে কথা শুনতে পান

 |  3-minute read |   10-01-2019
  • Total Shares

ভয়ঙ্কর ও জাদুবিদ্যায় পারদর্শী যোগিনীরা নাকি সকল ইচ্ছে পূরণ করতে পারেন।

তাঁরা ভক্তদের মনের কথা বুঝে নিয়ে ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন। আর ভক্তদের আরাধনায় সন্তুষ্ট হলে যোগিনীরা সশরীরে ভক্তদের সামনে আবির্ভূতাও হন।

ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বরের শহরতলিতে হীরাপুর বলে একটি গ্রাম রয়েছে। সবুজ ধানক্ষেত, পুকুর, মাটির ঘরগুলোর বাইরে কচিকাঁচাদের হুটোপুটি - একটি শান্ত অজপাড়াগাঁ বলতে যা বোঝায় হীরাপুর ঠিক তাই। গ্রামের একটু ভিতরে ঢুকলে এমন একটি জায়গার খোঁজ মিলবে যেখানে নিকট অতীতে উন্নয়নের কোনও ছাপ পড়েনি।

এই জায়গাতেই অষ্টম শতাব্দীর চৌষট্টি যোগিনীর একটি মন্দির রয়েছে। মন্দিরের নামও চৌষট্টযোগিনী মন্দির। এই অদ্ভুত মন্দির প্রাঙ্গনের আনাচে কানাচে যেন অতীত দিনের ছোঁয়া। পাঁচ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন একটি লম্বা দেওয়াল জায়গাটিকে ঘিরে রয়েছে। মন্দির চত্ত্বর জুড়ে যেন আলো আঁধারি খেলা করে চলেছে।

body2-copy_011019013113.jpgওডিশার চৌষট্টি যোগিনী মন্দির [সৌজন্যে: দ্য উইক্ক্যান ব্রিগেড]

আর এই ঘেরা জায়গাটায় প্রবেশ করলে আপনি একটি অদ্ভুত ধরণের নিস্তব্ধতা অনুভব করবেন।

পাথরের উপর উঠতে গেলে আপনার পায়ের শব্দ আপনার কানে বাজতে থাকবে।

এই অনুচ্চ দেওয়ালগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট ছায়াকুঞ্জ বা কুলুঙ্গি রয়েছে আর প্রতিটি ছায়াকুঞ্জে একটি করে অদ্ভুতদর্শন মূর্তি স্থাপন করা রয়েছে। কালো রঙের ক্লোরাইটের উপর খোদাই করা এই নারীমূর্তিগুলোর রূপ সত্যিই অন্যরকম।

তাঁদের একটি করে পশু বা মানুষ বাহনও রয়েছে। কারও হাতের সংখ্যা দুটি, কারও বা চারটি। বেশ কয়েকটি মূর্তির হাতে অদ্ভুত রকমের প্রতীকচিহ্ন লক্ষ করা যায়। বেশ কয়েকটি মূর্তির আবার শরীরটা মানুষের আর মুখমণ্ডল ও শরীর কোনও পশুর আকারের। এক ঝলক দেখলে মনে হবে এগুলো যেন কোনও দয়াময়ী দেবীর মূর্তি। একটু ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে যে প্রতিটি মূর্তির যেন ঠোঁটের কোণে হাসি লেগে রয়েছে।

body_011019013314.jpgকোনও মূর্তির দু'টি হাত রয়েছে, আবার কোনও মূর্তির চারটি হাত রয়েছে [সৌজন্যে: দ্য উইক্ক্যান ব্রিগেড]

আশ্চর্য হলেও সত্যি! এই মন্দিরে গণেশ রূপের একটি যোগিনীর মূর্তি রয়েছে। এ ছাড়া সিংহৃদয়ের নরসিংহের মূর্তি তো রয়েছেই।

ঘেরা অঞ্চলটির একেবারে মধ্যিখানে মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী মহামায়া দেবীর মূর্তি রয়েছে। অন্য মূর্তিগুলোর তুলনায় এই মূর্তিটি আকারে আয়তনে কিঞ্চিৎ বড়। এই গোলাকৃতি মন্দিরের মাঝে একটি মণ্ডপও রয়েছে আর মণ্ডপের স্তম্ভগুলোর বাইরের দেওয়ালেও কয়েকটি ছায়াকুঞ্জের দেখা মেলে। এই ছায়াকুঞ্জগুলোতে যোগিনী ও ভৈরবীদের মূর্তি স্থাপিত রয়েছে।

গ্রীষ্মকালে রৌদ্রের প্রখর তাপের সময়তেও মন্দির চত্ত্বরের ঘাস চিরসবুজ থাকে।

এই পবিত্র মূর্তিগুলোর চারপাশে গজিয়ে ওঠা লম্বা লম্বা গাছগুলো মূর্তিগুলোকে ছায়াদান করে। মূল মন্দিরের অদূরে একটি কুয়োও রয়েছে। এই কুয়োর ভিতরে উঁকি মারলে অনেক নিচে স্বচ্ছ জলের সন্ধান মেলে। মন্দিরের ঠিক পিছনে একটি হ্যান্ডপাম্পও রয়েছে। লালমাটির গভীর থেকে এই হ্যান্ডপাম্পটি বরফের মতো ঠান্ডা জল তুলে আনে।

বিশ্বাস করা হয় যে যোগিনীরা অর্ধ মানব এবং অর্ধ ঐশ্বরিক। তাঁরা জাদুবিদ্যায় পারদর্শী। তাঁরা ভীষণ ও অসীম ক্ষমতার অধিকারী। এই ক্ষমতার জোরে তাঁরা ভক্তদের মনবাঞ্চা পূরণ করে থাকেন। কথিত আছে, মনোবাঞ্ছা পূরণের তাগিদে ভক্তরা এই যোগিনীদের পুজো করতেন।

body1_011019013707.jpgএখনও যোগিনীরা ভক্তদের কথা শোনেন [সৌজন্যে: দ্য উইক্ক্যান ব্রিগেড]

টাটকা হলুদ রঙের গাঁদা ফুল পিষে তা যোগিনীদের পায়ে লেপে দেওয়া হত। লাল জবা কপালে ঠেকানো হত। পাথরের বাটিতে কর্পূরও জ্বলানো হত। এর পর যোগিনীর সামনে মাথা ঠেকিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করা হত। অত্যন্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করে যোগিনী ও ভক্তদের মধ্যে বার্তা আদানপ্রদান হত।

এর পরেই সেই আশ্চর্য 'গল্পগুলো' শুরু হত। হঠাই একটি কালো মূর্তি নড়াচড়া শুরু করে দিত। ভক্তের একদৃষ্টে চেয়ে থাকত মূর্তির চোখ দু'টি। কখনও কখনও মূর্তির চারপাশে একটি সবুজ রঙের আভা লক্ষ করা যেত। চৌষট যোগিনী মন্দিরে ভক্তরা আশা-আশঙ্কা নিয়ে প্রবেশ করতেন। এরই মাঝে অলৌকিক কাণ্ডকারখানার কথাও শোনা যেত।

আজও ওডিশার এক পরিত্যক্ত কোণে সেই মন্দির দাঁড়িয়ে রয়েছে। মন্দিরের এখন ভগ্নদশা। কিন্তু তাও লোকে বিশ্বাস করে, মনে প্রাণে যোগিনীদের ডাকলে যোগিনীরা নাকি এখনও ভক্তদের কথা শোনেন, মনবাঞ্ছা পূরণ করেন।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

DEEPTA ROY CHAKRAVERTI DEEPTA ROY CHAKRAVERTI @deeptarc

The writer is a corporate lawyer and mathematician by training, a psychic investigator by calling and daughter of the celebrated Wiccan Ipsita Roy Chakraverti. She is also author of the bestselling debut book ‘Bhangarh to Bedlam: Haunted Encounters’ and 'Cursed at Kedarnath'.

Comment