শিলংয়ে খ্রিস্টানদের আক্রমণের শিকার দলিত শিখরা। সবিনয় জিজ্ঞাসা, এই নারকীয় তাণ্ডবের হেতু কী

ধর্মীয় ভেদাভেদ নয়, 'জোর যার মুলুক তার' মনোভাবের ফলেই এই ঘটনার সূত্রপাত

 |  3-minute read |   05-06-2018
  • Total Shares

গোটা বিশ্বই খ্রিস্টানদের কথা শুনে চলে।

গত মাসে দিল্লির এক পাদ্রির চিঠি জনসমক্ষে আসার সঙ্গে সঙ্গেই হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান তত্ত্বের প্রবক্তাদের হম্বিতম্বি বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছিল।

সেই পাদ্রী অনিল জোসেফ কুয়োতো গির্জাগুলোকে পত্র মারফত সাধারণ নির্বাচনের আগে প্রার্থনায় বসার জন্য বার্তা পাঠিয়েছিলেন।

তিনি লিখেছিলেন, "আমরা খুব খারাপ রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যা দেশের সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা গণতন্ত্র ও দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যেখানে সত্য, ন্যায় বা ব্যক্তি স্বাধীনতা হারিয়ে যেতে বসেছে ঈশ্বর যেন আমাদের প্রার্থনা গ্রহণ করেন।"

এই চিঠি ও এই চিঠির প্রতি শাসক বিজেপির ধিক্কার সংক্রান্ত খবরগুলো দ্রুত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে জায়গা করে নিল। কিন্তু এর কয়েকদিনের মধ্যেই কুয়োতোর চিঠির বিপরীত ক্রিয়া দেখা গেল দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্য মেঘালয়ে।

গত বৃহস্পতিবার থেকেই শিলংয়ের পাঞ্জাবি লাইন এলাকায় দলিত শিখদের একঘরে করে রেখে দিয়েছেন খাসি উপজাতির প্রতিনিধিরা। খাসিরা মূলত খ্রিস্টান।

body_060518064047.jpgঘটনার সময় শিলংয়ের বড়বাজার এলাকা

কেউ কেউ বলছে ঝামেলার সূত্রপাত পার্কিং সংক্রান্ত কোনও ঘটনাকে কেন্দ্র করে। আবার কারও বক্তব্য যে কোনও ব্যক্তি নিগ্রহের ঘটনা থেকে। কারণ যাই হোক না কেন ঝামেলা কিন্তু ভয়াবহ সংঘর্ষের চেহারা নিয়ে নিয়েছে। এমনকি, ঝামেলা চলাকালীন মলটোভ ককটেলের মতো আগ্নেয়াস্ত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে।

এর ফল ভুগতে হচ্ছে পাঞ্জাবি লাইনে বসবাসকারী সংখ্যালঘুদের। প্রায় ১৫০ বছর আগে এদের পূর্বপুরুষদের ব্রিটিশরা মেথরের কাজ করাবার জন্য মেঘালয় নিয়ে এসেছিল।

ভয় পেয়ে এখন পাঞ্জাবি লাইনের বাসিন্দারা স্থানীয় গুরুদ্বারে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়হীন হয়ে পড়বেন বলেও অনেকেই আশঙ্কা করছেন।

খবরের প্রকাশ, দলিত শিখদের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে যে তাদের উচ্ছেদ করে গোটা পাঞ্জাবি লাইন দখল করে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে। আর সেই চক্রান্তের অঙ্গ হিসেবেই এই ঝামেলা শুরু করা হয়েছে।

৮ মে দিল্লির পাদ্রি দেশের গণতন্ত্র ও ধরনিরপেক্ষতা রক্ষা করতে প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আর এ মাসের শুরুতে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে বসবাসকারী খ্রিস্টানরদের ব্যবহারে তাঁর সেই দাবির ষোলো কলা পূর্ণ হল।

খুব সহজ-সরল ভাষায় বলতে গেলে, মেঘালয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ খ্রিস্টানরা রাজ্যের সংখ্যালঘু এক দলিত সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ করল। এই আক্রমণের ফলে যে রাজ্যে খ্রিস্টানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, সে রাজ্যে সংখ্যালঘুদের প্রতি খ্রিস্টানদের ব্যবহারের উপর প্রশ্নের উদয় হল।

গোটা ভারত যখন পিতৃতন্ত্রে বিশ্বাসী খাসিরা কিন্তু তাদের মাতৃতান্ত্রিক সমাজের জন্যে গোটা বিশ্ব জুড়ে বন্দিত। কিন্তু তাদের এই নারী-দরদী নীতি শুধুমাত্র নিজেদের জন্যই বরাদ্দ।খবরের প্রকাশ গত কয়েকদিন ধরেই পাঞ্জাবি লাইনে পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে আক্রমণ করা হয়েছে।

এই সমস্যার আরও একটি বৃহত্তর দিক রয়েছে - জোর যার মুলুক তার।

মেঘালয় রাজ্য সরকারও বেশ গর্বের সঙ্গে নিজেদের ওয়েবসাইটে ফলাও করে লেখে, "এ রাজ্য খাসি, জয়ন্তীও ও গারোদের রাজ্য।" ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, "পশ্চিম মেঘালয়ে গারোরা, মধ্যে মেঘালয়ে খাসিরা আর পূর্ব মেঘালয়ে জয়ন্তীরা বসবাস করেন।" খাসিরা মূলত খ্রিস্টান, তাই তাদের ভোট ব্যাঙ্কও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

শুধু মেঘালয় নয়, অন্যান্য সম্প্র্রদায়ের প্রতি ব্যবহারের এক অস্বস্তিকর ইতিহাস রয়েছে গোটা উত্তরপূর্বাঞ্চল জুড়েই।

যখন দিল্লিতে কোনও উপজাতি মহিলা বা পুরুষ লাঞ্ছিত হন তখন যন্তরমন্তরে প্রতিবাদ ফেটে পড়ে। এবং তা সঙ্গত কারণেই ঘটে থাকে।

কিন্তু এই আটটি উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে যখন সেখানকার উপজাতি ভিন্ন অন্য সম্প্রদায়ের লোকেদের উপর আক্রমণ হয় তখনও কি একই ধরণের প্রতিবাদ হয়? একটি শিখ প্রতিনিধিদল শিলংয়ের ঝামেলা নিয়ে প্রতিবাদ করবার পর ক্যাথলিক বিশপ কনফারেন্স অফ ইন্ডিয়ার তরফ থেকে শুধুমাত্র একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।

শিলং কিন্তু ভারতীয় গির্জাগুলোর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা দেশ জুড়ে যে ধারা চলছে তার উল্টো ধারা খ্রিস্টান-প্রধান রাজ্যগুলোতে ঠেকান সম্ভব হবে তো?

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Harmeet Shah Singh Harmeet Shah Singh @harmeetss

The writer is Editor with India Today TV

Comment