দুর্গাপুজোর প্যান্ডেল কালীপুজো বা জগদ্ধাত্রী পুজোতে, লাভবান দু'পক্ষই
শহরতলির পুজোকমিটিগুলো এবার সগর্বে বলবে, কলকাতার 'অমুক' প্যান্ডেল আমাদের পাড়ায়
- Total Shares
দুর্গা পুজোর রেশ আর ক'দিন। মেরেকেটে মঙ্গলবার অবধি। শহরের অধিকাংশ প্রতিমা বিসর্জন হয়ে গিয়েছে। উদ্যোক্তারা এবার নিজ নিজ কর্মজগতে প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছেন। বেশ কয়েকটি বড় প্যান্ডেলে প্রতিমা এখনও রয়ে গিয়েছে। সেই প্রতিমাগুলোর নিরঞ্জনও মঙ্গলবার রেড রোডে কার্নিভ্যালে শেষ হয়ে যাবে।
তাহলে আর দুর্গাপুজোর বাকিটা থাকল কি?
না, পুজোর কিছু শেষ মুহূর্তের কাজ এখনও যে বাকি রয়ে গিয়েছে। পুজো কমিটিগুলোর এবার প্যান্ডেল পরিষ্কারের পালা। বড় বড় পুজো কমিটিগুলোর উদ্যোক্তাদের কাছে এই প্রক্রিয়া নিঃসন্দেহে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘ চার পাঁচ মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে ওঠা একটা শিল্পকে (প্যান্ডেল) এই ভাবে এক ঝটকায় সরিয়ে ফেলা যায়। যায় হয়তো। কিন্তু এই ভাবে ভেঙে গুড়িয়ে সরিয়ে ফেলাটা কি নৈতিক? নাকি, এই শিল্পকে অন্য জায়গায় অন্য কোনও ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে? আর, তা থেকে যদি দু'পয়সা আমদানি হয় তাতে মন্দ কী?
দুর্গাপুজোর দিন পনেরোর মধ্যে কালীপুজো। শহরের কিছু কালীপুজো বেশ বিখ্যাত। এ ছাড়া, শহরতলির বারাসাতের কালীপুজোগুলোরও বেশ নামডাক রয়েছে। আবার কালীপুজো শেষ হতে না হতেই সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে জগদ্ধাত্রী পুজো। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর তো বিশ্বজোড়া খ্যাতি। অনেকটা কলকাতার দুর্গাপুজোর আদলেই ফরাসডাঙার জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটিগুলো পুজো উদযাপন করে থাকে।
কলকাতার দুর্গাপুজো প্যান্ডেলগুলো এবার শহরতলি কালী বা জগদ্ধাত্রী পুজোতে দেখা যাবে [ছবি; পিটিআই]
বছর দশেক ধরে এই ধারাটির প্রচলন হয়েছে। কালীপুজো বা জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্যোক্তারা কলকাতার বড় বড় পুজো কমিটিগুলোর প্যান্ডেলের কিছুটা অংশ ক্রয় করে নেয়। তার পর ওই অংশটিকে নিজেদের প্যান্ডেলে ব্যবহার করে। কখনও একেবারে এক আদলে আবার কখনও ভিন্ন কোনও রূপে। শহরের কিছু পূজা কমিটিগুলোর কাছ থেকে আবার দেশ বিদেশের জাদুঘরগুলোও প্যান্ডেলের অংশ নিয়ে যায়। জাদুঘরের দর্শকদের দেখানোর জন্য।
এই ধারায় অবশ্য দু'পক্ষই সুবিধাজনক অবস্থায় থাকে। প্যান্ডেলের পিছনে কোটি টাকা খরচ করা পুজো কমিটি কিছুটা টাকা ফেরত পায় প্যান্ডেলের অংশবিশেষ বিক্রয় করে। উল্টোদিকে কালীপুজোর বা জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্যোক্তারাও কম খরচে একটি ভালো শিল্প ব্যবহার করতে পারে। সর্বোপরি, এই উদ্যোক্তারা নিজেদের এলাকায় জোর কদমে প্রচার চালাতে পারে - "কলকাতার 'অমুক' বিখ্যাত পুজো এবার আমাদের পাড়ায়।" স্থানীয় দর্শক টানতে এর চাইতে ভালোপ্রচার আর কীই বা হতে পারে?
এই প্রক্রিয়ায় আরও একটি সুবিধা রয়েছে শহরতলীর কালীপুজো বা জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্যোক্তাদের। শহরতলীর বেশ কিছু পুজোর জায়গায় বড়ই অপরিসর। অনেক ঝক্কি পুহিয়ে প্যান্ডেলের অনুমতি জোগাড় করতে হয়। তাই ইচ্ছে থাকলেও বিনা পয়সার জোর থাকলেও মাসের পর মাস ধরে সুদৃশ্য প্যান্ডেল তৈরি করতে পারে না। দুর্গাপুজোর কমিটির কাছ থেকে প্যান্ডেল কিনে নেওয়া মানে 'রেডিমেড' জিনিস পাওয়া গেল। তাও আবার সত্যি সত্যিই সুদৃশ্য। শুধুমাত্র নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিয়ে শেষ মুহূর্তের কিছু কাজ করে নিলেই হল। সব মিলিয়ে, কম পয়সায় ভালো জিনিস পাওয়া গেল। সময়ও সাশ্রয় হল। আবার, প্যান্ডেল নিয়ে জোরকদমে প্রচারও করা গেল। সব মিলিয়ে সোনায় সোহাগা।
আরও কিছু লোকের সুবিধা হয় এই প্রক্রিয়ায়। যাদের কথা ভেবে এত আয়োজন - সেই দর্শককুলের। দুর্গাপুজোর সময় কোনও ভালো প্যান্ডেল হয়ত সময়ের অভাবে দেখা হয়ে ওঠেনি। সেক্ষেত্রে জগদ্ধাত্রী বা কালীপুজোতে পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকছে।
প্যান্ডেলের ভিতরে অবশ্য মা দুর্গার জায়গায় মা কালি বা জগদ্ধাত্রী মা থাকবেন। তাতে কী? প্যান্ডেলের শিল্পটা তো অপরিবর্তিতই থাকছে।