একে একে নিভিছে দেউটি: এবার কি বিবাদি বাগ ট্রাম ডিপোর পালা?

একবার বন্ধ হলেই ট্রাম ইতিহাস হয়ে যায়, এই দায় কলকাতা পুলিশেরও

 |  3-minute read |   04-10-2018
  • Total Shares

চলমান ঐতিহ্য মুছে ফেলার প্রবণতা এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে লক্ষ করা যায়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে হয়তো নতুনকে জায়গা করে দিতে 'বস্তাপচা' চলমান ইতিহাস কিছুটা বাধ্য হয়েই মুছে ফেলতে হয়। তবে এই ইতিহাস মুছে ফেলাটা ঠিক কতটা বাধ্যতামূলক, তা নিয়ে তর্ক চলবেই। ডালহৌসি ট্রাম ডিপোর বয়স নয় নয় করে ১৩৮ বছর। ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য এই ডিপো থেকে ট্রাম চলাচল আপাতত বন্ধ।

১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের পয়লা নভেম্বর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ভারতের রাজধানীর বুকে প্রথমবারের জন্য চলেছিল ঘোড়ায় টানা ট্রাম। স্ট্র্যান্ড রোডের আর্মেনিয়ান ঘাট থেকে ডালহৌসি স্ক্য়োয়ার এবং অধুনা বিবি গাঙ্গুলী স্ট্রিট হয়ে শিয়ালদহ অবধি ছিল এই পরিষেবা। এর মধ্যে বহুদিন ধরেই স্ট্র্যান্ড রোডে ট্রাম চলাচল বন্ধ। সেদিক থেকে বিচার করতে গেলে মহানগরীর সবচেয়ে প্রাচীন ট্রাম রুট এই ডালহৌসি হয়েই ছিল। দুর্ভাগ্য, ১৩৮ বছর ধরে একটানা যাত্রী পরিষেবা দেওয়ার পরে ডালহৌসি ট্রাম ডিপোর পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেল।

ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো করিডোর তৈরির দায়িত্বে রয়েছে কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে যে মাত্র তিন বছরের মধ্যে ডালহৌসি ট্রাম ডিপো চত্ত্বরের কাজ শেষ হয়ে যাবে। এবং, তারপর ইচ্ছা করলেই পুনরায় শুরু করা যাবে ট্রাম পরিষেবা।

প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে আদৌ কি আবার ডালহৌসি থেকে ট্রাম চলাচল শুরু করা সম্ভব হবে? সাবেক ট্রাম কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরাও নিশ্চিত নন। বরঞ্চ, ইদানীংকালে ট্রাম পরিষেবাকে ঘিরে যা যা নাটক হয়েছে তাতে এই পরিষেবার পুনরায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম বলেই মনে হচ্ছে।

body1_100418015857.jpgডালহৌসি থেকে ট্রাম পরিষেবা শুরু তবে কি [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]

মোটা টাকা খেসারত

পরিষেবা বন্ধ হওয়ার সময় ডালহৌসি ডিপো থেকে সাতটি রুটের ট্রাম দিনে মোট ৩০টি ট্রিপ করত। তিন বছর বন্ধ থাকলে কত টাকা লোকসান হবে ট্রাম কোম্পানির, এই প্রশ্নটিও উঠেছিল।

শেষ পর্যন্ত, নয় নয় করে প্রায় ৮৭ কোটি টাকার মতো খেসারত দিতে রাজি হয়ে ডালহৌসি চত্বরে ট্রাম পরিষেবা বন্ধ করতে হয়েছিল সিটিসি-কে। ভারতীয় রেলের অধীনস্থ পরামর্শদাতা সংস্থা রাইটস একটি সমীক্ষা করে দেখেছিল যে তিন বছরের জন্যে এই চত্বরে পরিষেবা বন্ধ থাকলে সিটিসির লোকসান হবে আনুমানিক ৯৬ কোটি টাকা। কিন্তু, কেএমআরসিএল এককালীন ন'কোটি টাকা দিয়ে দেওয়ার পর পরিষেবা বন্ধ করে দিতে রাজি হয়ে যায় পরিবহণ দপ্তর।

এত মোটা টাকা লোকসানের পর এই রুটে নতুন করে ট্রাম পরিষেবা পুনরায় চালু করা নিয়ে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

ইতিহাস সাক্ষী

আশির দশকে ধর্মতলা-ভবানীপুর (অধুনা নেতাজি ভবন) মেট্রো পরিষেবা দিয়ে শুরু হয়েছিল কলকাতার মেট্রো পরিষেবা। সেই মেট্রো তৈরির কাজের সময় চৌরঙ্গী রোডের উপর ধর্মতলা থেকে ১২ কিলোমিটার ট্রাম লাইন তুলে ফেলা হয়। কাজ শেষ হওয়া পর যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল চৌরঙ্গী রোড। কিন্তু এই রুটে ট্রাম পরিষেবা আর চালু করা হয়নি।

পরবর্তীকালে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের জন্যে বেশ কয়েকটি রুটে ট্রাম বন্ধ করা হয়েছিল -- যেমন বালিগঞ্জ, বেহালা ও জোকা। এর মধ্যে গড়িয়াহাট থেকে ট্রাম পরিষেবা চালু হলেও, বেহালা আর জোকাতে যে আর কোনও দিনও ট্রাম প্রবেশ করবে না তা বলাই বাহুল্য।

body_100418015952.jpgআশঙ্কা সত্যি হলে শহরের একটি ঐতিহ্য চিরকালের জন্যে বন্ধ হয়ে যাবে [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]

ট্রাফিক সমস্যা

শুধু ইতিহাস নয়, ট্রাম কোম্পানির কর্তাদের চিন্তার কারণ কলকাতার ট্রাফিক পুলিশ। শেষ কয়েক বছর বেশ কয়কটি ট্রাম রুট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশে। বেশ কয়েকটি ট্রাম রুট শুধু একমুখী করে দেওয়া হয়েছে।

এক সিটিসি কর্তারা জানালেন যে ট্রাফিক পুলিশের তরফ থেকে প্রবল চাপ আসছে আরও বেশ কয়েকটি রুটে ট্রাম বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু, কিছুটা জেদের বশেই, তাঁরা সেই নির্দেশ মানতে রাজি নন বলে জানিয়েছেন।

চালু রুটের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে যে রুট তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সেই রুট চালু হওয়া নিয়ে তো প্রশ্নচিহ্ন তো থাকবেই।

আশঙ্কা সত্যি হওয়া মানে আরও একটি ঐতিহ্য চিরজীবনের জন্য হারাতে চলেছে কলকাতা। আর, আশঙ্কা সত্যি হওয়ার আশঙ্কা যথেষ্ট বেশি।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ARPIT BASU ARPIT BASU @virusfound007

Arpit Basu is the Special Correspondent with the India Today Group’s fact check team. With more than one-and-a-half decade's experience in print and digital media, he has reported on aviation, transport, crime, civic and human interests issues. His sting operation on how precious Aviation Turbine Fuel, meant for Kolkata airport, was pilfered and sold in local market as ‘white kerosene’ received widespread acclaim. Arpit has worked with reputed media houses like The Times of India and Hindustan Times and had received letter of appreciation for reporting during the Phalin cyclone in Odisha in 2013.

Comment