#টেনইয়ার্সচ্যলেঞ্জ কি ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির চক্রান্ত?

ফেসবুক নাকি একটি মুখমন্ডল সনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবস্থার জন্য এই ছবিগুলো সংগ্রহ করছে

 |  3-minute read |   17-01-2019
  • Total Shares

সোশ্যাল মিডিয়া সত্যিই এক অদ্ভুত জায়গা। এখানে একটি চ্যলেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে দেখবেন, তাবড় তাবড় তারকাদের ছবির থেকেও একটি ডিমের ছবির লাইক বা শেয়ার ঢের বেশ হবে।

কিকি, আইস বাকেট কিংবা ম্যানেকুইন চ্যলেঞ্জ রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়।

এই তালিকায় নতুন সংযোজন ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের #টেনইয়ার্সচ্যালেঞ্জ।

ছোট্ট কথায়, এই চ্যালেঞ্জ অংশগ্রহণকারীদের দশ বছর আগের একটি ছবির সঙ্গে ২০১৯ সালের একটি ছবি পোস্ট করতে হবে। যাতে সকলে বুঝতে পারে গত দশ বছরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটির কথা পরিবর্তন ঘটেছে। আজকালকার দিনে এমনিতেই অনেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে শোঅফ করতে পছন্দ করেন। তার সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জটা বেশ মাননসই।

প্রচুর বিখ্যাত ব্যক্তিত্বও এই চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে দিয়েছেন।

লক্ষ লক্ষ লোক যতই এই চ্যালেঞ্জটিকে নিছকই সোশ্যাল মিডিয়ার অঙ্গ হিসেবে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে দিন না কেন, অনেকেই মনে করছেন যে মেনলো পার্কের বিখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা এই চ্যালেঞ্জকে হাতিয়ার করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছে। সম্প্রতি একটি মুখমন্ডল শনাক্তকরণ (ফেসিয়াল রেকগনিশন) প্রযুক্তি ব্যবস্থা তৈরি করছে সংস্থাটি। আর এই প্রযুক্তির তৈরি চলাকালীন এই ছবিগুলোকে ব্যবহার করার জন্য এই চ্যালেঞ্জটি শুরু করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ফেসবুকের মুখমণ্ডল সনাক্তকরণ ব্যবস্থা

এ বছরের শুরুতেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গোটা বিশ্বকে জানিয়েছিল যে সোশ্যাল মিডিয়াতে মুখমণ্ডল শনাক্তকরণের জন্য তাদের পক্ষ থেকে একটি প্রযুক্তি ব্যবস্থা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ফেসবুক জানিয়েছিল, কোনও ব্যবহারকারীর ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে চলে এলেই ব্যবহারকারী এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সঙ্কেত পাবেন। যে সব ব্যবহারকারীরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করবে তাদের ছবি ব্যবহার করে জাল প্রোফাইল তৈরি করতে পারবে না। এ ছাড়া যদি কোনও ছবি পোস্ট হয় যেখানে একজন ব্যবহারকারীর মুখ রয়েছে সেক্ষত্রে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে এই প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট ব্যাবহারকারীর প্রোফাইলের সঙ্গে ছবিটিকে ট্যাগ করে দেবে।

এখন এই ব্যবস্থা কার্যকর করে তুলতে যে প্রযুক্তি তৈরি করা হবে সেই প্রযুক্তির জন্য লক্ষ লক্ষ ছবির প্রয়োজন পড়বে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স মাধ্যমে চালিত সফটওয়্যারে এই ছবিগুলোকে ফিড করতে হবে। এই সফটওয়্যারই লক্ষ লক্ষ ছবি পরীক্ষা করে একজনের ব্যবহারকারীর বিভিন্ন ছবিকে শনাক্ত করবে।

এর সঙ্গে #টেনইয়ার্সচ্যালেঞ্জ-এর সম্পর্ক কোথায়

এই চ্যালেঞ্জে ব্যবহৃত ছবিগুলোকে এবার ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করবেন। এই ছবিগুলোকে নিজেদের সংগ্রহশালায় রেখে ভবিষ্যতে ব্যবহারকারীর ডিজিটাল বিশ্বে উপস্থিতি খতিয়ে দেখতে শুরু করবে। শুধু ডিজিটাল বিশ্ব কেন, তার বাইরে ব্যবহারকারীর প্রতিটি পদক্ষেপের উপরও নজর রাখা যাবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে।

কিন্তু এই প্রযুক্তিকে কার্যকর করাতে হলে ফেসবুকের প্রচুর ছবি সংগ্রহ করতে হবে।

শুধু ছবি সংগ্রহ নয়, ছবির সঙ্গে ছবিটি কবে তোলা হয়েছিল তাও জানতে হবে। যাতে ব্যবহারকারীর বয়সটাও আন্দাজ করে নেওয়া যায়। সেই সঙ্গে এও আন্দাজ করে নেওয়া সম্ভব হবে যে আজ থেকে দশ বছর পর কোনও এক ব্যস্ত রাস্তায় এই ব্যবহারকারীকে কী রকম দেখতে লাগবে যাতে তখনও তাঁকে সহজে শনাক্ত করে নেওয়া যায়।

আর, এখানেই এই চ্যালেঞ্জ ফেসবুকের কাজে আসতে পারে।

আমরা অবশ্য এ কথা জোর গলায় দাবিও করতে পারি।

কারণ এই ধরণের পরিকল্পনায় সিদ্ধহস্ত জুকেরবার্গ ও তাঁর সংস্থা। ব্যাবহারকারীদের গোপনীয়তা এর আগেও লঙ্ঘন করেছে এই সংস্থা।

তাই কোনও প্রযুক্তিকে অন্ধের মতো বিশ্বাস না করাই ভালো।

দশ বছরের চ্যালেঞ্জ নয়, ব্যবহারকারীদের আসল চ্যালেঞ্জটা হল এখানেই।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment