নাগাসন্ন্যাসী, মৃগনাভি, রুদ্রাক্ষ: সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিছে
সর্পাকৃতি রুদ্রাক্ষ থেকে সিলভার ডলার, মাত্র ১০ টাকায় মৃগনাভি
- Total Shares
কী কী জিজ্ঞাসা করতে পারতাম?
কোথা থেকে আসছেন? সঙ্গে কে কে আছে? আগে কোনও দিন গঙ্গাসাগরে গেছেন কিনা? কবে ফিরবেন? এখানে ব্যবস্থা কেমন? আরও দুটো-একটা প্রশ্ন করার পরে শেষ প্রশ্ন..., কেমন লাগছে?।
ক্যাম্পের ঢুকতেই এই দৃশ্য, পূণ্যস্নানে যাওয়ার আগে ভিক্ষাবৃত্তি। (ছবি: ডেইলিও)
বাবুঘাটের কাছে গঙ্গাসাগর যাত্রীদের ক্যাম্পে গিয়ে এ সব প্রশ্ন করতেই ইচ্ছে করল না। এই সব জেনেই বা কী করব! দীর্ঘ লাইন দিয়ে যখন তীর্থযাত্রীরা বাসে উঠছেন গঙ্গাসাগরে পূণ্যস্নানে যাবেন বলে তখন ঢুকে পড়লাম ক্যাম্পে। ঢুকতেই বাঁ-দিকে সার দিয়ে বসে, হয়তো গঙ্গাসাগরেই যাবেন শেষ পর্যন্ত, আপাতত ভিক্ষা করছেন। অভাবে কিনা বলা মুশকিল, কারণ এই ক্যাম্পে বহু স্বেচ্ছাসেবী ও ধর্মীয় সংগঠন বিনা পয়সায় শুধু খাওয়া-দাওয়া নয়, জল-চা এমনকি কফিরও ব্যবস্থা করেছে। মাইকে ঘোষণা করে সে সব বিতরণ করা হচ্ছে। লাইন নেই, কারণ সারা দিন ধরেই চলছে এই পর্ব।
ক্যাম্পে পুণ্যার্থী আর সাধুসন্তরা আছেন, কোথাও কোথাও চলছে খাওয়াদাওয়ার বিপুল তোড়জোড়। যাঁরা বিশ্বাসী তাঁরা বেশি করে যাচ্ছেন নাগাসন্ন্যাসীদের কাছে, তাঁরা আশীর্বাদ করছেন। ভক্তরা প্রণাম করে সাধ্যমতো দক্ষিণা দিচ্ছেন।
নাগা সন্ন্যাসীদের থেকে আশীর্বাদ নিচ্ছেন পুণ্যার্থী। (ছবি: ডেইলিও)
দুপুরের গরমে যাঁরা গায়ে ছাই মেখে আগুনের সামনে বসে থাকতে পারেন ভ্রু না কুঁচকে আর তাঁরাই যখন কনকনে ঠান্ডা জলে স্নান করে ভিজে গায়ে উঠে আসেন আর দীর্ঘক্ষণ ধরে জটাজুট থেকে জল ঝরতে থাকে... কেউ কটিমাত্র বস্তাবৃত, কেউ সম্পূর্ণ নগ্ন। ঈশ্বরে ঘোর অবিশ্বাসীরাও তাঁদের দেখে আর যাই হোক ভণ্ড বলতে পারবেন না। তাঁদের ঐশ্বরিক ক্ষমতা থাক বা না থাক, তাঁরা যে সাধক, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।
গঙ্গাস্নান করে সেখানেই জামাকাপড় শুকিয়ে নেওয়া। (ছবি: ডেইলিও)
বাবুঘাটে পড়ে আছে পুজোর সামগ্রী। (ছবি: ডেইলিও)
বাসে ওঠার দীর্ঘ লাইন, তবে বিশৃঙ্খলা নেই। (ছবি: ডেইলিও)
সাধুসন্তদের আখড়ার বাইরে রান্না করা হচ্ছে। (ছবি: ডেইলিও)
দেশের যে কোনও প্রাচীন ধর্মস্থানে কয়েকটি জিনিস খুবই সহজলভ্য। রুদ্রাক্ষ, নানা ধরনের শাঁখ, পুরনো পয়সা আর মৃগনাভি। কস্তুরীমৃগ দেশে কেন, দুনিয়ায় আছে কিনা সন্দেহ, কিন্তু তীর্থস্থানে তাদের নাভির এখনও অভাব হয়নি। সত্যিকারের মৃগনাভি দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে বলে নয়, যে কেউই বুঝতে পারবেন, ধর্মস্থানে যেগুলি বিক্রি হয় মৃগনাভি বলে, সেগুলি কিছুই নয়। দাম কত? বিরক্তি ভরে তাকিয়ে একজন বললেন, ১০ টাকা। দেখেই বুঝেছেন পুণ্যার্থী নই। বিনাপয়সাতেও সেটি নেব না।
মৃগনাভি। (নীচে) তা বিক্রির জন্য ক্রেতাদের বোঝাচ্ছেন বিক্রেতা। (ছবি: ডেইলিও)
একটি রূপোর মার্কিন ডলার (১৮৫১) ও একটি রুপোর ১০ টাকার দর করলাম। জোড়া ১০০০ টাকা। প্রৌঢ়াকে বললাম, এ তো নকল। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বাক্সে পুরে ফেললেন সেই টাকাগুলো।
বাক্সে নানা করম মুদ্রা, রত্ন ও আরও অনেক কিছু। সবই নকল। (ছবি: ডেইলিও)
সবেচেয়ে বেশি বিকোয় রুদ্রাক্ষ। একমুখী থেকে ২৪ মুখী নয়, সাপের মতো দেখতে, শিবলিঙ্গের মতো দেখতে রুদ্রাক্ষও রয়েছে বিক্রির জন্য। লোকে না বুঝে কেনেন নাকি বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তা বলা মুশকিল।
আখড়ায় এক সন্ন্যাসী (উপরে)। অন্য আখড়ায় সাধ্বী। (ছবি: ডেইলিও)
তবে সবচেয়ে আশ্বর্য হলাম যে দৃশ্যে তা হল, এক ভিখারির থেকে টাকা ভাঙানো দেখে।
ভিক্ষুকের থেকে টাকা ভাঙানো। (ছবি: ডেইলিও)
বিশ্বাস যে আজও ফুরিয়ে যায়নি, তা বোঝা যায় টুকরো টুকরো ছবিতে।