জাতীয় পর্যটন পুরস্কার প্রাপ্ত গোয়ার কেন ভারতীয় পর্যটকে মন ভরে না

ভ্রমণ পিপাসু হয়েও গোয়ায় না যাওয়ার চাপটা আপনি সামলাতে পারবেন তো?

 |  3-minute read |   03-10-2018
  • Total Shares

নিয়মিতভাবে ছুটি কাটানো যদি আপনার সামর্থ্য পোষায় এবং আপনি যদি এখনও গোয়া না গিয়ে থাকেন, তাহলে দয়া করে আফসোস করবেন না। বরঞ্চ, মনে করবেন এতদিন ধরে আপনি ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়ে এসেছেন। দেশের পর্যটন মানচিত্রে আরও অনেক জায়গা রয়েছে তারা গোয়া থেকে অনেকাংশে ভালো।

আপনি গোয়া যাননি শুনে যদি কোনও বন্ধুকে অবাক হতে দেখেন, তাহলে তাকেও খুব একটা পাত্তা দেবেন না।

এমনিতেই, আমরা গোয়াতে ছুটি কাটাতে যাই তা কিন্তু গোয়ার লোকেরা খুব একটা পছন্দ করেন না। বিশেষ করে, দল বেঁধে গেলে। সারাবছর ধরেই তাঁরা 'পর্যটন মরশুমের' জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। আর, পর্যটন মরশুম বলতে তাঁরা বিদেশীদের 'আসার সময়ের' কথাই বোঝেন।

পর পর দু'বছর জাতীয় পর্যটন পুরস্কার জিতেছে গোয়া। কিন্তু ভারতীয় পর্যটকরা গোয়া গিয়ে গোয়ার লোকেদের সঙ্গে কথা বললেই বুঝতে পারেন যে সেখানকার বাসিন্দারা তাঁদের আমন্ত্রণ জানাতে খুব একটা আগ্রহী নন।

body_100318052545.jpgগোয়ায় গিয়ে আনন্দ করুন, যাননি বলেও আনন্দ করুন

প্রথমবার গোয়া ভ্রমণে গিয়ে ট্যাক্সি চালক থেকে শুরু করে হোটেল রিসেপশনিস্ট সকলের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে যে সারা বছর ধরেই তাঁরা ফেব্রুয়ারী বা মার্চ মাসের অপেক্ষায় হন্যে হয়ে বসে থাকেন। হ্যা, ঠিকই ধরেছেন। ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসেই সাদা চামড়ার পর্যটকরা গোয়ায় ভিড় করেন। এবার আপনি ট্যাক্সি চালক বা হোটেল কর্মীদের কাছে ভারতীয় পর্যক্তদের কথা তুলে দেখুন, দেখবেন তাঁরা জানি কেমন মনমরা হয়ে পড়ে।

তবে ভারতীয় পর্যটকদের থেকে বিদেশী পর্যটকদের চাহিদা বেশি হওয়ার পিছনে কিন্তু বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে।

গোয়ার পর্যটন শিল্প দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। কিন্তু এই পর্যটন শিল্পই আবার গোয়ার ক্ষতি করে চলেছে।শুধুমাত্র পরিবেশের দিক থেকে নয়, সংস্কৃতির দিক থেকেও।

ভ্রমণ পিপাসুরা মূলত ঝকঝকে সকাল ও শান্ত স্নিগ্ধ সন্ধ্যের খোঁজে ভ্রমণ করেন। কিন্তু যাঁরা গোয়া যেতে চান, বা গোয়াতেই আছেন, তাঁদের কিন্তু বিচে বসে পানীয় হাতে সময় কাটে। বড়জোর বিচ লাগোয়া রাস্তার কোনও ক্লাবে বা পানশালায় বসে।

কিন্তু, তাতে ক্ষতি কী?

যাঁরা বিচে বসে পান করছেন (যদিও বিচে পান করা নিষিদ্ধ) তাঁরা ব্যবহৃত প্লাস্টিকের গ্লাসগুলো ও অন্যান্য আবর্জনাগুলো বিচে ফেলে দিয়ে যান। এছাড়াও মাতালরা মহিলাদের উত্যক্ত করে থাকেন, যাঁরা একা একা সমুদ্রের ধারা বসার বোকামি করেন। গোয়াতে এসব কিছুর জন্যেই ছাড়পত্র রয়েছে।যাঁরা পানশালায় বসে মদ্যপান করেন তাঁরা আবার পাঞ্জাবি গান শুনতে শুনতে এই সব কিছু করতে থাকেন।

body1_100318052622.jpgসমুদ্র সৈকতে নেশা করতেই অনেকে গোয়া ভ্রমণ করেন

আসলে এরা নতুন জায়গায় নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে যান না। নিজেদের বাড়িতে সচরাচর যা করে থাকেন তাই তাঁরা নতুন জায়গায় এসেও করতে পছন্দ করেন।

গোয়ার রাস্তা গুলো বেশ সংকীর্ণ। অর্থাৎ, গাড়ি চালাবার সময় আপনি বিরক্ত হয়ে পড়তে বাধ্য। কম পয়সায় গাড়ি ভাড়া পেলে আর সেই গাড়িতে একটি হর্ন থাকলে কেউ তো আর ধৈর্য্য হারান না। কানের কাছে এক নাগাড়ে ক্রমাগত যেভাবে হর্ন বাজতে থাকবে তাতে আপনি আর যাই পান না কেন বেড়াতে এসে শান্তি অব অবশ্যই পাবেন না। আর, হ্যা, এগুলো সমস্তই কিন্তু 'অফ সিজনের' অভিজ্ঞতা।

যে লোকটি আমাকে গাড়ি করে গোয়া ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিল, তিনি জানালেন যে নতুন বছরের সময় তিনি তাঁর গাড়ি নিয়ে কখনই রাস্তায় নামেন না। এতে তিনি হয়ত অর্থ উপার্জন করতে পারেন না। কিন্তু অর্থের পরিবর্তে তিনি মানসিক শান্তি পান - তাই বা কম কী? লোকটির প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে গেল।

body2_100318052653.jpgপরিবেশ দূষিত হচ্ছে গোয়াতে

ভারতীয় পর্যটকরা কিন্তু একটি অঞ্চলের সংস্কৃতির খোঁজেই সেই অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। তা সত্ত্বেও, বিশ্ব জুড়ে পর্যটন ব্যবসায়ীরা তাদের স্বাগত জানান। তাহলে, ভারতীয় পর্যটকদের প্রতি গোয়া এত উন্নাসিক কেন?

গোয়া উন্নাসিক কারণ গোয়া জুড়ে ব্যবসার কোনও অন্ত নেই। রাজ্যের প্রত্যেকেই পর্যটন শিল্পে কর্ম সংস্থান পান এবং সেই রোজগারে ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। হিমালয়ের পর্যটন কেন্দ্রগুলো, এমনকি ছবির মতো সুন্দর পন্ডিচেরীর পরিস্থিতিও কিন্তু এরকম নয়। আসলে, ব্যবসার দিক থেকে গোয়াকে যে ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তা আর কোথাও হয়নি।

আর, এটাই এখন গোয়ার অন্যতম প্রধান সমস্যা। পর্যটন গোয়াতে পয়সা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। একই সঙ্গে গোয়াকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। ওয়াটার স্পোর্টসের জন্য গোয়ার সমুদ্রের জল দূষিত হয়ে পড়ছে।

গোয়ার লাভ কিন্তু গোয়ার মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এবং গোয়ার বাসিন্দারা জানেন না এই সমস্যার সমাধান কোথায়।

একটাই উপায় আছে - আমরা যদি গোয়াতে ভ্রমণার্থীদের সংখ্যাটা কমিয়ে ফেলতে পারি।

কিন্তু ভ্রমণ পিপাসু হয়েও গোয়া না যাওয়ার চাপটা আপনি সামলাতে পারবেন তো?

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

VANDANA VANDANA @vandana5

Author is a Delhi-based journalist.

Comment