উত্তর-পূর্বাঞ্চলগামী ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতেই কি শিয়ালদহ স্টেশনের রূপটান?
দূরপাল্লার ট্রেনের জন্য ৯বি ও ৯সির পাশাপাশি ৯ডি নামে একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে
- Total Shares
দেড়শো বছর হতে চলল শিয়ালদহ স্টেশনের। আর তার আগেই রেলমন্ত্রক স্টেশন সৌন্দর্যায়নের কথা ঘোষণা করেছে। উন্নত করা হবে যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যও।
পরিকল্পনাটা ঠিক কী?
স্টেশনে প্রবেশ এবং প্রস্থানের পথগুলিকে বিমানবন্দরের ধাঁচে আলাদা আলাদা করে দেওয়া হবে। এর ফলে প্রবেশ বা প্রস্থানের সময়ে যাত্রীদের মুখোমুখি সংঘর্ষের অবস্থায় না পড়তে হয়। পার্কিংয়ের জায়গার পরিধি বাড়ানো হবে। স্টেশন চত্বরের আসা ট্যাক্সি, বাস এবং অন্যান্য সব পরিবহণ ব্যবস্থাকে রেলের সময়সূচির সঙ্গে সমন্বয়ে করার প্রচেষ্টাও শুরু হয়ে গিয়েছে। স্টেশন চত্বরে যাত্রীদের চলাফেরার পরিসরও বাড়ানো হচ্ছে। স্টেশনের মূল ভবন থেকে টিকিট কাউন্টার সরিয়ে আনা হবে বাইরে। দোতলা বুকিং অফিস তৈরি হবে সেখানে। এর ফলে রেল ও ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর মধ্যে সহজেই যাত্রীরা ট্রেন বদলাতে পারবেন।
প্ল্যাটফর্ম শেডের উচ্চতা বাড়ানো হবে। এর সঙ্গে বসবে ‘হাই ভলিয়ুম-লো স্পিড পাখা’। বিদ্যুতের পাশাপাশি শব্দদূষণও কমবে ওই পাখার ব্যবহারে। স্টেশনের মূল ভবনের দোতলায় তৈরি হবে এগজিকিউটিভ লাউঞ্জ। তার জন্য বসানো হবে ক্যাপসুল লিফটও। আইআরসিটিসি-র সঙ্গে ইতিমধ্যেই এ নিয়ে রেলের চুক্তি হয়েছে।
১৫০ বছরের শিয়ালদহ স্টেশনের যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য বাড়তে চলেছে [সৌজন্য: রেল মন্ত্রক]
স্টেশনের নিরাপত্তায় চালু হবে ‘ইন্টিগ্রেটেড সিকিওরিটি সিস্টেম’। প্ল্যাটফর্ম, সার্কুলেটিং এরিয়া, টিকিট কাউন্টার-সহ স্টেশন জুড়েই থাকবে সিসি ক্যামেরার নজরদারি। মেল-এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মগুলিতে বসানো হবে মালপত্রের স্ক্যানার।
১২ কোচের লোকাল ট্রেনকে জায়গা দেওয়ার জন্য দুই, তিন এবং চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য দমদমের দিকে অনেকটাই বাড়ানো হবে। এত দিন ১ থেকে ৪-এ পর্যন্ত কোনও প্ল্যাটফর্মেই নয় কোচের বেশি লম্বা ট্রেনের দাঁড়ানোর মতো জায়গা ছিল না। এখন প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য বাড়ানো হলে ১২ কামরার ট্রেন ঢুকতে পারবে। দূরপাল্লার ট্রেনের জন্য ৯বি এবং ৯সি প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি ৯ডি নামে আর একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে।
যাত্রীদের সুবিধার জন্য জ্বলজ্বলে এবং দৃশ্যমান আধুনিক সাইনেজ এবং ডিসপ্লে বোর্ড বসানো হবে স্টেশনের বিভিন্ন জায়গায়। রেলের তরফে থেকে জানানো হচ্ছে যে আগামী বছরের মধ্যেই এই কাজ শেষ হবে।
অর্থ
চলতি আর্থিক বছরের বাজেটেই রেলের বিভিন্ন অঞ্চলে (জোন) উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্য আলাদা করে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল। ‘আমব্রেলা ওয়ার্ক’ প্রকল্পের আওতায় ওই উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্প্রতি কর্তাদের অনুমোদন পেয়েছে। তবে এই মুহূর্তে ঠিক কত টাকা খরচ পড়বে তা স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়নি।
লাভ
২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রেলমন্ত্রক যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে। তারই অঙ্গ হিসেবে দেশের অন্যতম পুরোনো স্টেশনটিকেও বেছে নেওয়া হয়েছে।
তবে আরও একটি কারণও রয়েছে শিয়ালদহ স্টেশনের এ হেন রূপটানের পিছনে। বিজেপি সরকার উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে রেল সংযোগ বৃদ্ধি করতে চায়। উত্তরবঙ্গ বা উত্তর পূর্বাঞ্চলগামী কিছু ট্রেন হাওড়া ও কলকাতা স্টেশন থেকে ছাড়লেও অধিকাংশ ট্রেন কিন্তু শিয়ালদহ স্টেশন থেকেই ছাড়ে। সুতরাং, ভবিষ্যতে যে দূরপাল্লার ট্রেনে সংখ্যা বাড়তে দেখা যাবে শিয়ালদাহ স্টেশন থেকে। আর, এই 'যজ্ঞের' অন্যতম কারণ এটাই।
কী ভাবছেন, চলুন বেরিয়ে পড়ি!