সেনাবাহিনী বা আধাসামরিক বাহিনী নয়, এখন জঙ্গিদের টার্গেট জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশকর্মীরা

২০০৭-এ জঙ্গিদের হাতে ৩৩জন পুলিশকর্মী খুন হয়ে ছিলেন, এ বছর এখনও পর্যন্ত ৩০ জন

 |  3-minute read |   27-08-2018
  • Total Shares

তিনদিনের ঈদ-উল-আঝা শেষ হয়েছে, হজের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সেই সময় তিন পুলিশকর্মী সহ, অন্তত পাঁচজনকে হত্যা করা হল কাশ্মীরে। সেই মৃত্যুর রেশ কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই উপত্যকায় তাড়া করে বেড়াবে।

এই উৎসবে পয়গম্বর হজরত ইব্রাহিম ও তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইলের ত্যাগকে সম্মান জানানোর জন্যে পশুবলি দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এ বছর তো ইসলাম সন্ত্রাসবাদীদের হাতে বেশ কয়েকটি নরবলি ঘটেগেল।

দিনটা ২২ আগস্ট ছিল। পবিত্র ঈদের প্রথম দিন।

সেদিন আর পাঁচজন মুসলমানের মতো জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের ইন্সপেক্টর মহম্মদ আশরফ দার তাঁর পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছিলেন। পরিবার বলতে তাঁর স্ত্রী, তাঁর দুই পুত্র ও তাঁর এক কন্যা। সকলে মিলে পুলওয়ামা জেলায় নিজেদের বাসভবনে ঈদের উৎসবে মেতে উঠে ছিলেন। সেদিন সন্ধ্যা নামার আগেই দক্ষিণ কাশ্মীরের ওই জেলার দু'জন পুলিশকর্মী ও একজন বিজেপি নেতাকে সন্ত্রাসবাদীরা হত্যা করে ছিল।

তিনিই যে জঙ্গিদের পরবর্তী টার্গেট হতে যাচ্ছেন তা আঁচ করতে না পেরে আশরাফ মসজিদে প্রার্থনার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ছিলেন। পরিবারের বাকি সদস্যরা অবশ্য বাড়িতে ছিলেন। সেদিন রাতে কুরবানির মহাভোজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আশরফ বেরিয়ে যাওয়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বছর কুড়ির দুই সশস্ত্র জঙ্গি তাঁর বাড়িতে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের রান্নাঘরে নিয়ে যান। সেখানে পরিবারের সদস্যদের প্রহার করে তাঁদের বন্দি করে রাখা হয়।

body_082718054502.jpgকয়েকটি জঙ্গি নিধনে যেমন সন্ত্রাসবাদ বন্ধ হয় না তেমনি কয়েকজন পুলিশকর্মীকে হত্যা করে কাশ্মীর পুলিশকে চাপে ফেলা যাবে না [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]

দুই জঙ্গি পরিবারের সদস্যদের কাছে আশরফের খোঁজ নিতে শুরু করেন। কিন্তু আশরাফের স্ত্রী প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলেন যে আশরাফের ফিরতে দেরি হবে। সুতরাং, তারা যেন পরে বাড়িতে আসে। কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাস। এর কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেই প্রার্থনা শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসেন আশরফ। এবার জঙ্গিদের খপ্পরে পড়ে সেই পুলিশকর্মী তাদের কাছে জীবন ভিক্ষা করেন।

কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হলেন আশরফ।

দক্ষিণ কাশ্মীরের ডিআইজি পুলিশ অমিত কুমার ডেইলি ও-কে জানিয়েছে যে আশরাফের মুখে অন্তত পাঁচিটি গুলি করা হয়েছে। যার ফলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

পরের দিন আরও রক্তপাত দেখল কাশ্মীর। উত্তর কাশ্মীরের কুঞ্জের এলাকায় অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীরা তারিক আহমেদ নামের এক বনকর্মীকে হত্যা করল।

পুলিশের দাবি যে লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গিগোষ্ঠী তারিককে হত্যা করেছে। যদিও ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর তরফ থেকে পুলিশের দাবি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, ঈদের ঠিক শুরুতেই, জঙ্গিরা পুলওয়ামা জেলার তরুণ বিজেপি নেতা সাবির আহমেদ ভাটকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল।

এই পাঁচটি ঘটনা থেকে একটা বিষয় কিন্তু পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে - গোটা জম্মু ও কাশ্মীর জুড়ে জঙ্গিরা একটা কড়া বার্তা পাঠাতে চাইছেন।

মানবাধিকার সংখ্যাগুলো সহ কেউই এই হত্যাগুলোর প্রতিবাদ জানানোর সাহস দেখায়নি।

body1_082718054619.jpgসাংবাদিক শুজাত বুখারিরহত্যা নিয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না [ছবি: ফেসবুক]

বর্ষীয়ান সাংবাদিক সৈয়দ শুজাত বুখারির হত্যার পর পরিস্থিতি এখন এতটাই অগ্নিগর্ভ যে কেউই কোনও হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখ খুলতে চাইছে না।

কয়েকমাস ধরেই জঙ্গিরা কিন্তু পুলিশকর্মীদের হত্যা করা যাচ্ছেন। জঙ্গিরা পুলিশকর্মীদের বাধ্য করছেন তাঁরা যেন সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।

কিন্তু জঙ্গিদের একটা কথা বোঝা উচিত - কয়েকটি জঙ্গি নিধনে যদি সন্ত্রাসবাদ বন্ধ না হয় তাহলে কয়েকজন পুলিশকর্মীকে হত্যা করে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশকে চাপে ফেলা যাবে না। এর আগে কাশ্মীরে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীগুলোর উপর একের পর এক আক্রমণ হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে জঙ্গিদের মেন টার্গেট কিন্তু পুলিশকর্মীরাই হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭ সালে মোট ৩৩ জন পুলিশকর্মীকে হত্যা করা হয়ে ছিল। এ বছর জানুয়ারি মাস থেকে এখনও অবধি ৩০জন পুলিশকর্মী জঙ্গিদের হাতে নিহত হয়েছে।

জঙ্গিদের বোঝা উচিত যে পুলিশকর্মীরা এই রাজ্যেরই লোক। তাঁদের হত্যা করে রাজ্যবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে। এর ফলে বদলা নেওয়ার খেলা শুরু হতে পারে এবং রাজ্যের পরিস্থিতি ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে পারে।

আশরফের পরিবারবর্গকে দেখুন। প্রতি বছর ঈদের দিন তাঁদের আশরাফের মৃত্যুর কথা মনে পড়বে। এর পরিণাম কিন্তু ভালো নাও হতে পারে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

MAJID HYDERI MAJID HYDERI @majid_hyderi

The writer is a journalist based in Kashmir.

Comment