কোন পাঁচটি কারণে কলকাতার বেসরকারি বাসের থেকে সরকারি বাস পরিষেবা আমার প্রিয়
নিজস্ব রেডিও নেটওয়ার্ক থেকে স্মার্ট কার্ড, সব মিলিয়ে যাত্রীদের পোয়া বারো
- Total Shares
বছর বারোর আগের একটি ঘটনা। কোনও এক রাজনৈতিক দল সেদিন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। মহানগরের একটি রাস্তার বাসস্টপে সেদিন বেশ কিছুক্ষন ধরে কয়েকজন যাত্রী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেই রাস্তায় বাসের সংখ্যা অনেকখানি কম। তার উপর সেদিন ধর্মঘট থাকায় বাসের দেখা পাওয়াই যাচ্ছিল না। হটাৎ করেই সেই রাস্তায় অন্য রুটের একটি সরকারি বাসের আগমন।যাত্রীগণ উৎসাহিত হয়ে হাত দেখায়। কিন্তু চালক সেই ডাকে সাড়া না দিয়েই এগিয়ে যায়।
সামনের সিগনালে বাস দাঁড়াতেই যাত্রীরা রে রে করে দৌড় শুরু করে। তাদের অসীম সৌভাগ্য তারা বাসের কাছে পৌঁছানো অবধি সিগন্যাল লাল ছিল। এর পর শুরু হল বচসা। চালক, কন্ডাকটর ও যাত্রীদের মধ্যে। যাত্রীদের দাবি ধর্মঘটের দিনে এমনিতেই বাসের সংখ্যা কম। তার উপর ফাঁকা বাস নিয়ে এভাবে বাসস্ট্যান্ডে না দাঁড়ানো ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
ঘটনাটা একটি দিনের হলেও, একটা সময় সরকারি বাস চালকদের এহেন আচরণ নিত্যদিন বরদাস্ত করতে হল যাত্রীদের। ভাঙাচোরা লড়ঝড়ে বাস তার উপর কোনও নির্দিষ্ট সময়ে নেই, তা সত্ত্বেও মানুষ সরকারি বাসের জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করত। কারণ, সরকারি বাসে উঠতে পারলেই কেল্লা ফতে। চালক নিজের খেয়াল খুশি মতো অধিকাংশ বাসস্টপেই দাঁড়াবে না। বেসরকারি বাস গন্তব্যে পৌঁছাতে যা সময়ে নেয় তার অর্ধেকের কম সময় সরকারি বাস গন্তব্যে পৌছিয়ে দেবে।
কলকাতার সরকারি বাসের এখন আর সেই অবস্থা নেই। বর্তমানে আধুনিকতার ছোয়া পেয়ে বেশ আধুনিক হয়ে উঠেছে সরকারি বাস পরিষেবা। সরকারি বাসে চড়ার এখনও হাজারও কারণ খুঁজে পাওয়া যায়।
আসুন, এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণের উপর চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত
গ্রীষ্মকালের কলকাতায় শীততাপ নিযযন্ত্রন ব্যবস্থা এখন আর বিলাসিতা নয়, নিতান্তই প্রয়োজনীয়। শহরে বেসরকারি বাস যা চলে তার মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটিই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। রীতিমতো দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয়। উল্টোদিকে, মহানগরীর রাস্তায় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত সরকারি বাসে রমরমিয়ে চলছে। বেশ কয়েকটি রুটে তো শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাস বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শহরবাসী এসির আরাম পেতে বেশি পয়সা খরচ করতে প্রস্তুত। আর, তাই সরকারি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাস ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
নতুন বাস
পুরোনো লড়ঝড়ে সরকারি বাস আর চোখে পড়ে না। এখন যে সরকারি বাস রাস্তায় চলে তার প্রত্যেকটিই গত কয়েকবছরের মধ্যে ক্রয় করা। প্রতিটি বাসই 'লো-ফ্লোর', অর্থাৎ যাত্রীদের উঠতে নামতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। আধুনিক বাস হওয়ার সুবাদে বাসের ভিতরেও আধুনিকীকরণের ছোয়া বেশ চোখে পড়ে। আসনগুলো বেশ বড়। লেগ স্পেসও অনেক বেশি। দাঁড়াবার জন্যেও পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে।
সরকারি বাস পরিষেবায় লেগেছে আধুনিকতার ছোয়া
নিজস্ব রেডিও সিস্টেম
এ যেন এক বাড়তি পাওনা। বাসে উঠলেই রেডিও চলছে। কখনও মন ভোলানো রবীন্দ্রসংগীত আবার কখনও সুপার ডুপার হিট হিন্দি গান। মাঝে মাঝে বাস গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পৌঁছালে বা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় প্রবেশ করলেই রেডিওতে রাস্তার নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। সঙ্গে রাস্তার বা অঞ্চলের ইতিহাস। সব মিলিয়ে বেশ বিদেশ বিদেশ ছোঁয়া রয়েছে।
পথদিশা অ্যাপ
এমনিতেই পরিষেবা ভালো। তার উপর বাসস্ট্যান্ডে পৌছিয়ে পরবর্তী বাসের জন্যে হন্যে হয়ে অপেক্ষা করতে হবে না। অ্যাপ খুললেই জেনে যেতে পারবেন আশেপাশে কোন কোন বাস রয়েছে। আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনও বাসে চাপতে চান তাহলে সেই রুটের রাস্তায় থাকা বাসগুলোর বর্তমান অবস্থানও জেনে নিতে পারবেন। সঙ্গে, বাসটি আপনার স্টপে কখন পৌঁছাবে তারও আনুমানিক সময় জেনে যেতে পারবেন।
স্মার্ট কার্ড
এই পরিষেবা এখনও জনপ্রিয় না হলেও অচিরে হয়ে যাবে। মেট্রোর মতো সরকারি বাসেও এখন স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করা যায়। আগে থেকে ভাড়া দিয়ে কার্ড নিয়ে নিলেন। তার পর বাসে উঠে কন্ডাক্টরকে সেই কার্ড সোয়াপ করতে দিলেন। ওই কার্ড থেকে আপনার গন্তব্যের জন্য নির্দিষ্ট ভাড়া বাদ গিয়ে বাকিটা পড়ে থাকবে।
সব মিলিয়ে সরকারি বাস পরিষেবার মান এখন যথেষ্ট উন্নত। তার উপর তাড়াতাড়ি যাওয়ার অভ্যেসটা এখনও সরকারি চালকরা ছাড়তে পারেননি। যাত্রীদের যে পোয়া বারো।