আমাদের পুজোর প্যান্ডেলে কেন কুলোর ব্যবহার হয়েছে?
স্বল্প খরচ তার উপর আবার দৃষ্টিনন্দন, বাংলার কুলোর জুড়ি মেলা ভার
- Total Shares
সত্যি সত্যিই ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো লাগে কিনা তা আমার জানা নেই। কিন্তু একদা বাঙালির হেঁশেলে কুলোর গুরত্ব ছিল অপরিসীম। ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি বাড়ির উঠোনে বা রান্নাঘরের এক কোণে বসে মা ঠাকুমারা কুলোয় করে চাল থেকে কাঁকর আলাদা করে যাচ্ছেন। বলতে গেলে বছর দশক আগেও আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুবান্ধবদের বাড়ি গেলে অন্তত একটা কুলো চোখে পড়তই।
তবে বঙ্গ জীবনে কুলোর সেই 'সাম্রাজ্য' আজ অতীত। পাড়ার মুদির দোকানে গুড় মশলার প্যাকেট বিক্রির সঙ্গে শিলনোড়া যেমন বাঙালির হেঁশেল থেকে বিদায় নিয়েছে, তেমনি কুলোর সঙ্গে বাঙালির সেই আত্মিক আজ আর নেই। এখন কুলো শুধুমাত্র বিবাহ অনুষ্ঠানগুলোকেই আলো করে রাখে।
কুলোর প্রয়জোনীয়তা হয়ত কমেছে। কিন্তু তাই বলে তার সৌন্দর্য্য তো হ্রাস পাওয়ার নয়। এমনিতেই বাংলার লোকশিল্প জগৎ বিখ্যাত। আর, এই লোকশিল্পের অন্যতম নিদর্শন এই কুলো। একটা সময় অভিজাতদের বাড়িতে বেতের বোনা ধামা কুলো শোভা পেত। তবে স্বল্প খরচের বাঁশের কুলোরও প্রচন্ড চাহিদা ছিল। গ্রামবাংলার বেশ কিছু পরিবার এখনও এই বাঁশের কুলো তৈরি করেন। মূলত অঘ্রান মাসে শুরু হয় কুলো তৈরির কাজ, চলে ফাগুন মাস পর্যন্ত।
সত্যি সত্যিই ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো লাগে কিনা তা আমার জানা নেই
আগেই বলেছি বাঁশের তৈরি কুলোর দাম অনেকটাই কম। আর আমাদের মতো ছোট পুজো কমিটিগুলোর বাজেটও কম। তাই কম খরচের অথচ দৃষ্টিনন্দন প্যান্ডেল তৈরির জন্য আমাদের মতো ছোট ছোট পুজো কমিটিগুলো এমন জিনিসের খোঁজ করি যা স্বল্প খরচে পাওয়া যায়। আবার দেখতেও সুন্দর।
তবে, দুইয়ে দুইয়ে চার করে নিয়ে কিন্তু আমাদের প্যান্ডেলে কুলো ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। প্যান্ডেলে কুলো ব্যবহারের পিছনে রয়েছে আরও গভীর একটি প্রেক্ষিত। আমরা চেয়েছিলাম আমাদের প্যান্ডেলের মধ্যে দিয়ে বাংলার হারিয়ে যাওয়া লোকশিল্পের কিছু নিদর্শন তুলে ধরতে।
কুলো তো বেশ কিছুদিন হল হারিয়ে গেছে বাঙালির জীবন, বাঙালির মনন থেকে। মায়ের আগমনে এখন সেই কুলো কিছুদিনের জন্য আমাদের প্যান্ডেলে শোভা পাবে।
চাইলে, আপনারাও এসে দেখে যেতে পারেন।