ঐতিহ্য রক্ষা নয়, সময়ের দাবি মেনেই শহরে ট্রাম চালানো উচিত
কলকাতা যখন দেশের অন্যতম দূষিত শহর, তখন দূশণমুক্ত ট্রাম বাড়ানো উচিত
- Total Shares
কলকাতা শহরে ক্রমেই ট্রামের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে ও ট্রামের লাইনও তুলে দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের যুক্তি হল, যানজট হচ্ছে বলেই ‘মন্থর গতি’র এই যান তুলে দেওয়া হচ্ছে।
এই শহরের বেশ কয়েকটি ট্রাম লাইন সরকারি উদ্যোগে মেরামত করা হয়েছে, বেশ কয়েকটি জায়গায় ট্রাম লাইন কংক্রিটের হয়েছে। তবে উল্টোদিকে শহরের রাস্তায় আর ট্রাম চালাচ্ছে না। কলকাতায় ট্রাম যাতে ফেরানো যায় সে জন্যই আমরা, ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশন, আন্দোলন করছি।
ট্রামলাইন কংক্রিটের হলেও ট্রাম চালানো হচ্ছে না। (ছবি সৌজন্য: লেখক)
দূষণে এখন আমরা দেশের মধ্যে এক নম্বরে চলে গিয়েছি। শহরের বিভিন্ন ধরনের বাস ও অন্য যানবাহনও অত্যধিক পরিমাণে বেড়েছে। দূষণের কথা বিবেচনা করে করে সেই সব যানবাহন কমানো দরকার। কিন্তু সে সব কমানো হচ্ছে না, উল্টো সরকার ট্রাম কমিয়ে দিচ্ছে যে ট্রাম হল দূষণমুক্ত যান।
কলকাতা-মেলবোর্ন ট্রামযাত্রা শুরু হয়েছে ১৯৯৬ সালে, এই ট্রামযাত্রা উপলক্ষে কলকাতায় আসেন রবার্তো দে আন্দ্রে, তিনি মেলবোর্নে ট্রামের সঙ্গে যুক্ত। তিনিও চান যে কলকাতায় ট্রাম চলুক মেলবোর্নের মতোই। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন যে কলকাতার জন্য তাঁরা মেলবোর্ন থেকে বিশ্বমানের কয়েকটা ট্রাম পাঠাবেন যার কোনও কোনও অর্থ দিতে হবে না। মেলবোর্নে যে ভাবে ট্রামের জন্য সুপার প্ল্যাটফর্ম রয়েছে এখানেও যদি তা করা হয় তা হলেও তাঁরা সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে আরও অনেক যাত্রী উপকৃত হবেন।
কলকাতা-মেলবোর্ন ট্রামযাত্রা। (ছবি সৌজন্য: লেখক)
গত শতাব্দীর ষাটের দশকেরও কলকাতায় ৪০০টি মতো ট্রাম চলত। সেই সংখ্যা কমতে কমতে এখন ২৫-২৬-এ দাঁড়িয়েছে। শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা, খিদিরপুর থেকে ধর্মতলা, টালিগঞ্জ থেকে বালিগঞ্জ, বিধাননগর থেকে হাওড়া ব্রিজ এবং ধর্মতলা থেকে গড়িয়াহাট – এই রকম কয়েকটি মাত্র রুটে ট্রাম চলছে। ট্রামের যে সব কর্মী এখনও ট্রাম চালানোর সঙ্গে যুক্ত তাঁরা অবসর নিয়ে নিচ্ছেন, তাই ট্রামের কর্মীদের সংখ্যাও কমছে।
আমরা আমাদের দাবির কথা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, যদিও এখনও কোনও উত্তর আমরা পাইনি। এর আগে আমরা ট্রাম কোম্পানির তৎকালীন ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্যের সঙ্গে কথা বলেছিলাম ২০১৬ সালে কয়েকবার বৈঠক করেছি, কিন্তু তিনি অন্য দফতরে তিনি বদলি হয়ে যাওয়ায় আর কথা এগোয়নি।
কলকাতার উপকণ্ঠে সল্টলেকে ট্রাম চালানোর যে কথা হয়েছে তা ভালো প্রস্তাব। তবে তার সঙ্গে কলকাতা শহরেও ট্রাম চালাতে হবে। কলেজ স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড, পার্ক সার্কাস থেকে শিয়ালদহ প্রভৃতি এলাকার লোকজন চান ট্রাম চলুক। চিৎপুর এলাকা এক সময় ‘ট্রাম ওনলি এরিয়া’ ছিল। এখন সেখানে অটোরিকশা চালকদের রমরমা বেড়েছে।
মেলবোর্নের ট্রাম। (ছবি সৌজন্য: লেখক)
অটোরিকশা বাড়লে যাত্রীদের ছোট ছোট রুটের জন্য বাড়তি ভাড়া দিতে হয়, দূষণও হয়। কিন্তু ট্রামের ক্ষেত্রে এই দু-দিক দিয়েই লাভ। এখানে ট্রাম চালানো যেতেই পারে। এ খানে যানযট এখনও আছে, আগেও ছিল। যানজটের কারণ অতিরিক্ত গাড়ি। এই যাত্রীরাই ট্রামে যাতায়াত করলে যানজট কমবে।
অস্ট্রেলিয়ায় লোকে গাড়ি করে বেড়াতে যান, তবে অফিস যান ট্রামে-বাসেই। এখানে সে সব ব্যাপার নেই। যানজটের এটাও একটা কারণ।
আমাদের এই সংগঠনে বিজ্ঞানী থেকে চলচ্চিত্র পরিচালক – অনেকেই আছেন। আমরা সকলেই চাই ট্রাম চালু হোক ঐতিহ্যের জন্য নয়, পরিবেশের কথা ভেবেই।