সবরীমালায় প্রতিবাদ: কেরল পুলিশকে ধিক্কার, মহিলা সাংবাদিকদেরও সুরক্ষা দিতে পারেন না

মন্দিরে নয়, কর্তব্য পালনে যাচ্ছিলাম। তাতেও পুলিশের সামনে হেনস্থা হই, হুমকি দেওয়া হয়

 |  3-minute read |   20-10-2018
  • Total Shares

সাংবাদিক হিসাবে আমি আমার কর্তব্য সম্পাদন করছিলাম।

আমি অন্য কিছু করার জন্য ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম না, সবরীমালায় কী ঘটছে সে সম্বন্ধে প্রতিবেদন লেখার জন্য আমি ওখানে গিয়েছিলাম। কোনও সংস্কৃতি বা ঐতিহ্যকে অসম্মান করার জন্য আমি ওখানে যাইনি। সর্বোচ্চ আদালত যে যে কোনও বয়সের মহিলাকে ওই মন্দিরে প্রবেশের অধিকার দিয়েছে সেই প্রেক্ষিতে কোনও কিছু প্রমাণ করার জন্য আমি ওই ১৮টি সিঁড়ি পেরিয়ে মূর্তির সম্মুখে যাব, এমন কোনও উদ্দেশ্যও আমার ছিল না।

শুধুমাত্র প্রতিবেদন লেখার জন্য এক দিন আগেই আমি পাম্বায় গণপতি মন্দিরে গিয়েছিলাম (এই মন্দিরটিই পাম্বা থেকে সন্নিদানমের পথে প্রথম মন্দির)। সবরিমালার মতো ওই মন্দিরে কোনও দিনই কোনও বাধানিষেধ ছিল না, এখনও নেই।

তবে ওই দিন নীলাক্কেল, মানে সবরীমালার বেসক্যাম্পে আমাকে থামিয়ে দেওয়া হল – থামিয়ে দিলেন কয়েকজন স্বঘোষিত ভক্ত। তাঁদের বক্তব্য ছিল, তাঁরা তাঁদের ঈশ্বরকে রক্ষা করার জন্য শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ করছেন, শ্লোক গাইছেন ও সুর করে মন্ত্রোচ্চারণ করছেন।

protest-inside_1_102018023046.jpgবেশ কয়কজন মহিলা-সহ স্বঘেষিত ভক্তরা প্রতিটি গাড়ি থামাচ্ছিলেন (ছবি: রয়টার্স)

কিন্তু শান্তিপূর্ণ ভাবে যাঁরা প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন তাঁরা প্রতিটি গাড়ির দিকে ছুটে যাচ্ছিলেন এবং দেখে নিচ্ছিলেন সেই গাড়ির ভিতরে কোনও মহিলা আছেন কিনা। তাঁরা অবশ্য গাড়ির চালককে কোনও কথা জিজ্ঞাসা করছিলেন না, এমনকি গাড়িটি সবরীমালায় যাচ্ছে নাকি অন্য কোথাও যাচ্ছে, সে কথাও তাঁরা জিজ্ঞাসা করছিলেন না। শুধু কোনও গাড়িতে কোনও তরুণী-যুবতীকে বসে থাকতে দেখলেই তাদের ফিরে যেতে বলছিলেন, এমনকি সংবাদমাধ্যমের গাড়িকেও ছাড় দিচ্ছিলেন না। সংবাদমাধ্যমের কোনও গাড়িতে কোনও মহিলা সাংবাদিককে দেখলে তাঁরা ওই মহিলা সাংবাদিককে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে দিচ্ছিলেন এবং মালয়লম ভাষায় তাঁদের গালিগালাজ করছিলেন।

‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদী’রা তারপরে একটি কেএসআরটিসি বাস থামিয়ে ছ’জন পড়ুয়াকে গালিগালাজ করতে শুরু করল, এই ছ’জনর কেউই মালয়লম ভাষা জানত না।

মারদাঙ্গার মতো অবস্থা, আমি গিয়ে পড়লাম তার মধ্যে। সেখানে অবশ্য পুলিশকর্মীরাও ছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, তাঁরা সেখানে করছিলেন কী? যখন ওই প্রতিবাদীরা ঈশ্বরের নামে মারাত্মক ভাবে লোকজনকে হেনস্থা করছেন তখন ওই পুলিশকর্মীরা পড়ুয়াদের ও তাদের পরিচয়পত্রের ছবি তুলে রাখছিলেন।

সন্ধ্যা নাগাদ ওই ‘নির্বাক দর্শক’ মানে রাজ্যপুলিশ কিছুটা সক্রিয় হয়ে উঠলেন – তবে ওই ‘শান্তিপূর্ণ ভণ্ডুকারী’দের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করলেন না, তবে বাস থামাতে শুরু করলেন, তাঁরা ওই প্রতিবাদীদের হয়েই কাজ শুরু করে দিলেন, গাড়িগুলিতে তল্লাশি করা শুরু করলেন এবং দেখতে শুরু তকরলেন ওই গাড়ির মধ্যে কোনও তরুণী-যুবতী আছেন কিনা।  

sabarimala_2_102018023112.jpgবুধবার পাম্বায় যা ঘটল তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না (ছবি: রয়টার্স)

যাঁরা পুলিশের আচরণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত মহানির্দেশকের (দক্ষিণ জোন) কাছে তাঁদের জন্য একটি মুখস্ত বুলি ছিল। তিনি বলছিলেন, “অভিযোগ দায়ের করুন, যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।” তিনি নিজেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং সবকিছুই প্রত্যক্ষ করছিলেন।

বুধবার পাম্বায় যে ঘটনা ঘটল তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের নামে তারা গাড়ি ভাঙচুর করল, আমাদের সঙ্গে থাকা কাজের জিনিসপত্র একেবারে ভেঙেচুরে দিল এবং আমাদের হুমকিও দিল। কয়েকজন মহিলা সাংবাদিককে তো ওই সব ‘ভক্ত’রা শারীরিক নিগ্রহ পর্যন্ত করলেন, সময় যত গড়াতে থাকল, প্রতিবাদকারীদের সংখ্যাও ততই বাড়তে থাকল।

যদি সংবাদমাধ্যম এই ঘটনা দেখে থাকতে পারে তা হলে রাজ্য প্রশাসন কেন তা দেখতে পেল না?

এই ধরনের পাহারাদারি শুরু হওয়ার আগে যে সব মহিলা সাংবাদিক পাম্বায় পৌঁছে গিয়েছিলেন এখন তাঁরা সেখানেই আটকে রইলেন। আমার মতো যাঁরা পরে যাচ্ছিলেন তাঁরা আটকে রইলেন নীলাক্কলেই। নিরবচ্ছিন্ন ভাবে লোকে আমার কাছে আসতে থাক লেন এবং এই জায়গা ছেড় যাওয়ার জন্য বারে বারে বলতে লাগলেন, তাঁদের বক্তব্য ছিল, তাঁদের কথা মা শুনলে আমাকে মারধার করা হবে এবং গাড়িও ভাঙা হবে। ঠারেঠোরে নয়, তারা একেবারে সরাসরি এবং খোলাখুলি ভাবে হুমকি দিতে লাগল। কোনও একটা জায়গায় টানা পাঁচ মিনিটও আমাকে দাঁড়াতে দেওয়া হল না, কারণ তাঁরা একটানা আমাকে অনুসরণ করে যাচ্ছিলেন।

suicide_3_102018023158.jpgসুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিবাদে এক মহিলা আত্মহত্যা করার হুমকি দিচ্ছিলেন। তাই আমরা আন্দাজ করতেই পারছিলাম যে বুধবার কী হতে চলেছে (ছবি: রয়টার্স)

এক সময় আমি পুলিশের অতিরিক্ত মহানির্দেশককে জিজ্ঞাসা করলাম, “স্যার, এই যা সব ঘটছে তার বিরুদ্ধে আপনি কী ব্যবস্থা করছেন?”

তিনি বললেন, “সেটা আমার চিন্তা। এ ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে কোনও কথা বলব না।”

তিনি কী পদক্ষেপ করেছিলেন তা আমরা বুঝতে পারিনি, কারণ সাংবাদিকরা একটা জায়গায় বন্দি হয়ে পড়েছিলেন – বিশ্রাম নেই, জল নেই, খাবার নেই এবং কোনও নেটওয়ার্কও নেই।

সরকার ও পুলিশকে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

একজন মহিলা, যিনি কেরলকে নিজের বাড়ি বলে জানেন, তাঁর নিরাপত্তা কোথায়?

আমি ওই মন্দিরে যেতে চাই না। আগের দিন ওটা আমার লড়াই-ই ছিল না। কোনও রকম ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট ছাড়াই ‘ঈশ্বরের আপন দেশে’ আমি আমার কর্তব্যটুকু সম্পাদন করতে চেয়েছিলাম।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment