খোঁড়া বাদশাহের আমৃত্যু যাবজ্জীবন: অবশেষে স্বস্তি পেলেন মগরাহাট কাণ্ডের মৃত্যের আত্মীয়রা

শুরুর জীবনে ট্রেনে খেলনা ফেরি করতেন বাদশাহ, বেআইনি মদ বেঁচে এগারোটি গাড়ির মালিক হন

 |  2-minute read |   30-09-2018
  • Total Shares

সংগ্রামপুর রেলস্টেশন থেকে দূরত্বটা খুব বেশি ছিল না। লেভেল ক্রসিং পার করলে বড় জোর ৫০০ কী ৭০০ মিটার হবে। বাঁহাতের একটি সরু গলি দিয়ে নেমে গেলেই চোখে পড়বে পাড়াটা। রাস্তাটা পাকা কিন্তু গলির দু'ধারের বাড়িগুলো একেবারে অজ পাড়াগাঁয়ের মতো। কয়েক ঘর মুসলমান পরিবার বাস করেন সেই পাড়ায়।

২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসের সকালে ওই পাড়ায় কান্নায় রোল উঠেছিল। শোকস্তব্ধ গোটা পাড়া। সাধারণত এই পরিবেশ দেখলে মনে হবে যেন পাড়ার কেউ মারা গেছেন। কিন্তু সেদিনের কথা ভিন্ন। পাড়ার প্রতিটি পরিবারের অন্তত একজন করে পুরুষের মৃত্যু হয়েছে। আত্মীয়রা দিশেহারা। মৃত্যদেহ সৎকার করবেন নাকি পরিবারের আর যারা মৃত্যুর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন তাদের জন্যে হাসপাতালে গিয়ে তদ্বির করবেন। দুর্বিষহ পরিবেশ।

শুধু ওই পাড়াতেই নয়, সেদিন বিষমদের প্রকোপ পড়েছিল মোগরাহাট লাগোয়া উস্তি ও মন্দিরবাজার এলাকাতে। সব মিলিয়ে সরকারি হিসেবে ১৭২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গ্রামের প্রাথমিক হাসপাতাল থেকে শুরু করে মহকুমা হাসপাতাল সর্বত্রই লাশের মিছিল চোখে পড়েছিল।

কিন্তু এই ১৭২ জনের মৃত্যুর জন্যে দায়ি কে?

পুলিশি তদন্তে (যদিও এটা জানতে কোনও তদন্তের প্রয়োজন ছিল না) উঠে এল খোঁড়া বাদশাহ ওরফে ইসলাম ফকিরের নাম। অনেকের কাছে আবার নূর ইসলাম নামে পরিচিত ছিল এই খোঁড়া বাদশাহ। মূলত, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার ও বারুইপুর মহকুমা জুড়ে চলত বাদশাহের এই বেআইনি মদের ব্যবসা। 

body1_093018061334.jpgআপাতত মৃত্যুদের আত্মীয়দের স্বস্তি

বাদশাহের এই উঠে আসার কাহিনীটাও কিন্তু বেশ চমকপ্রদ। জীবনের শুরুতে ট্রেনে খেলনা ফেরি করতেন তিনি। পরবর্তীকালে, সংগ্রামপুর রেল স্টেশনের পাশে সঙ্গী সেলিমকে নিয়ে বেআইনি দেশি মদের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ওই স্টেশনের পাশেই বাদশাহ একটি দোকানও খোলেন। আর দেখতে দেখতে অচিরেই ফুঁলেফেঁপে ওঠে বাদশাহের ব্যবসা।

বছর পাঁচেকের মধ্যেই বারুইপুর, রাজারহাট ও কাকদ্বীপে তিনটি বাড়ি করেন তিনি। ২০১১ সালে এই ঘটনার তদন্তে সময় জানা যায় বাদশাহ মতো ১১টি লরি, দুটি টাটা সুমো ও দুটি মোটরবাইক রয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, সিগারেট খেলেও বাদশাহ নিজে কিন্তু মদ্যপান করতেন না। তার দুই বউ ও চার ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে তাঁর প্রথম স্ত্রী শাকিলা বিবি ওরফে নুরজাহানকেও এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।                     

ঘটনার সাত বছর পরে খোঁড়া বাদশাকে দোষী সাব্যস্ত করে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিল আদালত। বাকি তিন জনের - দুখে লস্কর, নজরুল লস্কর এবং‌  খইরুল লস্করের - যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ হয়েছে।

সাজা ঘোষণার পর খোঁড়া বাদশার আইনজীবী জানান যে তাঁরা উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন। দেশের আইন অনুযায়ী করতেই পারতেন।

আপাতত তো মৃত্যুদের আত্মীয়দের স্বস্তি। অন্তত এই মামলায় বিচার পেয়েছেন তারা।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ARPIT BASU ARPIT BASU @virusfound007

Arpit Basu is the Special Correspondent with the India Today Group’s fact check team. With more than one-and-a-half decade's experience in print and digital media, he has reported on aviation, transport, crime, civic and human interests issues. His sting operation on how precious Aviation Turbine Fuel, meant for Kolkata airport, was pilfered and sold in local market as ‘white kerosene’ received widespread acclaim. Arpit has worked with reputed media houses like The Times of India and Hindustan Times and had received letter of appreciation for reporting during the Phalin cyclone in Odisha in 2013.

Comment